Advertisement
০৬ মে ২০২৪

টাকা নেই, ডাকঘরে হত্যে দিয়েও হাত খালিই

ফাঁকা খড়্গপুরের বোগদার উপ-মুখ্য ডাকঘরের কাউন্টারে বসেছিলেন পোস্টমাস্টার-সহ দু’জন কর্মী। শনিবার দুপুরে পেনশনের টাকা তুলতে ডাকঘরে আসেন শহরের ঢেকিয়ার বাসিন্দা বৃদ্ধা অসীমা মিশ্র।

টাকা না থাকায় ফাঁকা খড়্গপুরের বোগদার উপ-মুখ্য ডাকঘর। শনিবার। ছবি:  রামপ্রসাদ সাউ।

টাকা না থাকায় ফাঁকা খড়্গপুরের বোগদার উপ-মুখ্য ডাকঘর। শনিবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৭
Share: Save:

ফাঁকা খড়্গপুরের বোগদার উপ-মুখ্য ডাকঘরের কাউন্টারে বসেছিলেন পোস্টমাস্টার-সহ দু’জন কর্মী। শনিবার দুপুরে পেনশনের টাকা তুলতে ডাকঘরে আসেন শহরের ঢেকিয়ার বাসিন্দা বৃদ্ধা অসীমা মিশ্র। গত তিনদিন ঘুরেও টাকা পাননি অসীমাদেবী। তাঁর কথায়, “বাড়িতে যা টাকা ছিল গত বারো দিনে খরচ হয়ে গিয়েছে। এখন পেনশনের টাকা থেকে দু’হাজার টাকা তুলতে চাইছি। কিন্তু দিচ্ছে না। নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি।”

গত বৃহস্পতিবার থেকে ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসে পুরনো পাঁচশো ও একহাজার টাকা বদলের কাজ শুরু হয়েছে। তারপর তিনদিন কেটে গেলেও এখনও খড়্গপুরের উপ-ডাকঘরে নোট বদল শুরু হয়নি। ডাকঘর থেকে কেউ টাকা তুলতে চাইলে দেওয়া হচ্ছে না তা-ও। ডাকঘরে টাকা বদল করতে এসেছিলেন সাউথ সাইডের সঞ্জু লাল। যদিও টাকা বদল হয়নি। তাঁর কথায়, “টাকা বদল তো হলই না। জমা টাকার থেকে কিছু টাকা চাইলাম সেটাও পেলাম না। এ ভাবে সংসার চলবে কী ভাবে!”

খড়্গপুরের উপ-মুখ্য ডাকঘর থেকেই সবং, পিংলা, কেশিয়াড়ি, ঢেকিয়া, ওয়ার্কশপ-সহ ২১টি উপ-ডাকঘরে টাকা যায়। ওই ডাকঘরের ভারপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার আরতি সাঁতরা বলেন, “পাঁচশো-এক হাজারের নোট নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে নতুন টাকা আসেনি। আমরা কী করে টাকা দেব? হেড অফিস থেকে টাকা এলে তবেই টাকা দেওয়া সম্ভব হবে।” যদিও গ্রাহকদের চাহিদার থেকে কম টাকা দিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা হয়েছে আইআইটি, ওয়ার্কশপের ডাকঘর।

ওয়ার্কশপ উপ-ডাকঘরের গ্রাহক ওল্ড সেটলমেন্টের বাসিন্দা জগদীশ রাও বলেন, “নিজেদের অ্যাকাউন্টে যে টাকা রয়েছে তার থেকে কম টাকা পেয়েছি। তবে এ টুকুও এখন যথেষ্ট।” ওই ডাকঘরের পোস্টমাস্টার তাপস রায় বলেন, “টাকা আসেনি। গত তিনদিনে নিজেদের কোষাগারে থাকা ৩ লক্ষ টাকা গ্রাহকদের দিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেছি। এর পরে কী হবে জানিনা।” সবংয়ের লুটুনিয়া উপ-ডাকঘরে আবার এখনও নোট বদল বা টাকা তোলা শুরু হয়নি। যদিও খড়্গপুর মহকুমার বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে এ দিনও নোট বদল হয়েছে।

চাহিদার তুলনায় টাকার পরিমাণ কম থাকায় মেদিনীপুরে জেলার মুখ্য ডাকঘর থেকে অনেক গ্রাহককে খালি হাতে ফিরতে হয়। কেন এমন অবস্থা? জেলার মুখ্য ডাকঘর আধিকারিক বিকাশকান্তি মিশ্র বলেন, “টাকা চেয়েও পাচ্ছি না। দিনে ১ কোটি টাকার বেশি মিলছে না। সেই টাকায় উপ-ডাকঘরগুলিকে ১ লক্ষের বেশি দেওয়া যাচ্ছে না। যা নিমেষেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।” শনিবার মেদিনীপুরের ধর্মা উপ-ডাকঘরে টাকা তুলতে এসেও ফিরে যান শায়রা খাতুন। তাঁর কথায়, ‘‘শুক্রবার বিকেল চারটে পর্যন্ত বসেছিলাম। টাকা মেলেনি। আজও বলছে টাকা নেই। কী দুর্ভোগ বলুন তো।” ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার অরুণকুমার মালের কথায়, “এই ডাকঘরে গ্রাহকের সংখ্যা ৮০ হাজার। বৃহস্পতিবার ১ লক্ষ টাকা আর শুক্রবার সন্ধেয় ১ লক্ষ টাকা পেয়েছিলাম। যে টাকা গ্রাহকদের সমান ভাবে ভাগ করে দিলে প্রত্যেককে আড়াই টাকার বেশি দেওয়া সম্ভব নয়। গ্রামীণ শাখা ডাকঘরগুলিতে টাকা না পৌঁছনোয় অবস্থা আরও খারাপ। মেদিনীপুরের শীতলা ডাকঘরের পোস্টমাস্টার জানিয়ে দিচ্ছেন, বুধবারের আগে টাকা মিলবে না! ডাক বিভাগ জানিয়েছে, উপ ডাকঘরগুলিতেই যদি ১ লক্ষ টাকা যায় তাহলে তারা শাখা ডাকঘরে টাকা পাঠাবে কী করে!

আজ, রবিবার প্রধান ডাকঘরের পাশাপাশি উপ ডাকঘরগুলিও খোলা থাকবে। বন্ধ থাকবে শাখা ডাকঘর। টাকা না থাকায় উপ ডাকঘর খোলা থাকলেও মানুষ টাকা পাবেন কিনা সংশয়। বিকাশবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, “চেষ্টা করব রবিবারও প্রতিটি উপ ডাকঘরকে যাতে ন্যূনতম ১ লক্ষ টাকা দেওয়া যায়। স্টেট ব্যাঙ্কের কাছে আমরা টাকা চেয়েছি। কিন্তু স্টেট ব্যাঙ্ক দিনে ১ কোটি টাকার বেশি দিতে রাজি হচ্ছে না।”

স্টেট ব্যাঙ্কের মেদিনীপুর শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার শক্তিকুমার ঘোষ বলেন, “আগে যে সব ব্যাঙ্কের শাখা আমাদের কাছে টাকা নিত না, ঘাটতির কারণে তাঁরাও টাকা চাইছে। সাধ্য মতো কাউকে ১০ লক্ষ, ২০ লক্ষ আবার কাউকে ১ কোটি টাকা দিয়ে অন্যান্য ব্যাঙ্কের শাখাকেও সচল রাখার চেষ্টা করছি। একজনকে বেশি দিলে বাকিদের যে দিতে পারব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

post office No cash demonetization
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE