৫০০-১০০০ টাকার পুরনো নোট বাতিল হওয়ায় এমনিতেই লেনদেনের অবস্থা তথৈবচ। তার উপরে দশ টাকার কয়েন ‘জাল’, এই গুজবে অনেকেই এই কয়েন নিতে না চাওয়ায় বিপত্তি বেড়েছে। মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের অনেক দোকানদারই দশ টাকার কয়েন নিতে চাইছে না। দিন কয়েক ধরে খুচরোর আকালে ব্যবসায় মন্দা চলছে। দশ টাকার কয়েন না নিলে খুচরো সঙ্কট আরও বাড়বে।
সমস্যার কথা মানছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার লিড ডিস্ট্রিক্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজার শক্তিপদ পড়্যা। তিনি বলেন, “দশ টাকার জাল কয়েন সংক্রান্ত একটা গুজব ছড়িয়েছে বলে শুনেছি। তবে এটা গুজবই। এর কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই।” তাঁর কথায়, ‘‘এই কয়েনে লেনদেনে কোনও সমস্যা নেই। ব্যবসায়ীদের উচিত এই কয়েন নেওয়া।” এ নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আশ্বাসও দিয়েছেন শক্তিপদবাবু।
কী ভাবে এই গুজব ছড়িয়েছে? ব্যাঙ্ক-কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই এই গুজব ছড়ায়। এরপরেই বাজারে দশ টাকার কয়েন ‘অচল’ হতে শুরু করে! একাংশ ব্যবসায়ী এই কয়েন নেবেন না বলে গোঁ ধরেন। ফলে, বিপত্তি বাড়ে। এক ব্যাঙ্ককর্তার কথায়, “এখন খুচরোর আকাল! অনেকের কাছেই দু’হাজার টাকার নোট আছে। তবে একশো টাকার নোট নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে গেলে দশ টাকার নোট লাগেই। দশ টাকার কয়েন যদি ব্যবসায়ীরা না নিতে চান তাহলে তো সমস্যারই!”
ব্যাঙ্ক-কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, কয়েনের উপরে থাকা একটি চিহ্ন নিয়েই গুজব ছড়ায়। ২০১১ সালের জুলাই মাসের পর থেকেই দশ টাকার কয়েনে এই চিহ্ন রয়েছে। কয়েনের রং, আকার মাঝেমধ্যেই পাল্টায়। শহরের পালবাড়ির বাসিন্দা সুশোভন ঘোষ বলেন, “আমার কাছে বেশ কিছু দশ টাকার কয়েন রয়েছে। কিন্তু ওই কয়েন নিয়ে যে দোকানেই গিয়েছি সেই দোকানই এই কয়েন নেবে না বলে জানিয়েছে! ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, এটা জাল কয়েন! অগত্যা অন্য নোট দিতে হয়েছে।” একই দাবি শহরের মিরবাজারের বাসিন্দা সুব্রত সরকারের। তাঁর কথায়, “একটা গুজবের জেরে বহু মানুষ সমস্যায় পড়ছেন।”
সমস্যার কথা মানছেন ব্যবসায়ীরাও। তাঁদের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে করণীয় কিছু নেই! ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে দশ টাকার কয়েন নিতে চাইছেন না। কারণ, পরে তাঁরা ওই কয়েন চালাতে পারছেন না। মহাজনেরা দশ টাকার কয়েন নেবেন না বলে জানাচ্ছেন! দোকানে দোকানে যাঁরা মালপত্র সরবরাহ করে, তাঁরাও এই কয়েন নিতে চাইছেন না। মেদিনীপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মলয় রায়ের কথায়, “একাংশ ব্যবসায়ী দশ টাকার কয়েন নিতে চাইছেন না বলে শুনেছি। আসলে ওঁরা এই কয়েন অন্যত্র চালাতে পারছেন না।” তাঁর আশ্বাস, “এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সচেতন করা হবে। দশ টাকার কয়েন যে জাল নয় তা জানানো হবে।”
মলয়বাবুর দাবি, “আরবিআই গুজব উড়িয়ে দেওয়ার পর পরিস্থিতি অনেকটা বদলেছে। যাঁরা নিতে চাইছিলেন না, সেই সব ব্যবসায়ীও এখন দশ টাকার কয়েন নিচ্ছেন। বুঝতে পেরেছেন, ওটা স্রেফ গুজবই ছিল।” কয়েকজন দশ টাকার কয়েন নেওয়া শুরু করলেও এখনও শহরের সর্বত্র এই কয়েনে লেনদেন হচ্ছে না। একাংশ ব্যাঙ্ক থেকে বাতিল নোটের ভাঙানিতে দশ টাকার কয়েন দেওয়া হচ্ছে। সেই কয়েন খরচ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন অনেকে। মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষ বলেন, “দশ টাকার কয়েন বৈধই। এ নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” প্রশাসনের আশা, ধীরে ধীরে এ নিয়ে সকলেই সচেতন হবেন! ফলে খুচরোর আকাল কিছুটা হলেও মিটবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy