পাঁশকুড়ার হাউর পঞ্চায়েত এলাকার কালীদান গ্রামের চাষি ভরত মান্নার খেতের পটল গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। সমাধানের উপায় খুঁজতে এই সমস্যার কথা জানাতে চান এলাকার কৃষিপ্রযুক্তি সহায়কের কাছে। কিন্তু এলাকার কৃষিপ্রযুক্তি সহায়কের দেখা মেলাই তো ভার।
ভরতবাবু বলেন, ‘‘এলাকার কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক বসেন ১২ কিলোমিটার দূরে ব্লক কৃষি দফতরের অফিসে। তাই সমস্যার কথা জানাতে সেখানে যেতে হয়। কিন্তু চাষের কাজ ফেলে এভাবে কি বারবার আমাদের পক্ষে যাওয়া সম্ভব?’’
যদিও কৃষকদের চাষের নানা রকমের সমস্যার কথা জেনে কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শের জন্য রাজ্য সরকারের কৃষি দফতরের ‘মাটির কথা’ অ্যাপ চালু করা রয়েছে কয়েক বছর আগে। নানা সমস্যার ছবি তুলে ‘মাটির কথা’ অ্যাপের মাধ্যমে পরামর্শ পেতে কৃষি প্রযুক্তি সহায়কদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল আধুনিক প্রযুক্তির ট্যাব। কিন্তু প্রতি এলাকায় একজন করে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক পদ থাকলেও পূর্বের অধিকাংশ এলাকায় কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের পদ শূন্য। ফলে নাগাল নেই কৃষিপ্রযুক্তি সহায়কের। আর তার জেরে চাষিরা বিপাকে পড়ছেন বলে অভিযোগ।
পূর্ব মেদিনীপুরের কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, ‘মাটির কথা’ অ্যাপ চালু হওয়ার পর কৃষি প্রযুক্তি সহায়করা চাষিদের সমস্যার কথা জেনে তাঁদের পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের সংখ্যা কম থাকায় চাষিদের কাছে যাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে। তবে শূন্য পদে নিয়োগ চলছে।’’
পূর্ব মেদিনীপুরে ২৫ টি ব্লকে ২২৩টি পঞ্চায়েত এলাকা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি পঞ্চায়েত এলাকায় একজন করে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক থাকার কথা। কন্তু কৃষি প্রযুক্তি সহায়কদের একাংশ অবসর নেওয়ায় এবং দফতরের কয়েকজন পদোন্নতি পাওয়ায় জেলার অনেক পঞ্চায়েতে এই পদ ফাঁকা পড়ে।
বর্তমানে জেলায় ৭৫ জন কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক রয়েছেন। অর্থাৎ জেলার অধিকাংশ গ্রামপঞ্চায়েতে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক পদ ফাঁকা। যে সব পঞ্চায়েতে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক রয়েছে তাঁদের পার্শ্ববর্তী একাধিক পঞ্চায়েত এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে একজন কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিদের কাছে পৌঁছাতে সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ।
কেউ সপ্তাহের নির্দিষ্ট কয়েকদিন কোন পঞ্চায়েত অফিসে যাচ্ছেন চাষিদের সঙ্গে কথা বলতে। আবার কেউ ব্লক কৃষি দফতরের অফিসে বসছেন চাষিদের সমস্যার কথা শুনতে। ফলে চাষের সমস্যা হলে কৃষকদের যেতে বাড়ি থেকে অনেক দূরে।ফলে যাতায়াতের জন্য চাষিদের সময় ও অর্থ দুই খরচ হচ্ছে।
পাঁশকুড়া ব্লকের ১৫ টি পঞ্চায়েত এলাকায় ১৫ জন কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক পদ রয়েছে। কিন্তু গত ৩ বছর ধরে সেখানে আছেন দু’জন কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক। হাউরের কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক হরিদাস সামন্ত বলেন, ‘‘নিজের এলাকার সাথে অতিরিক্ত সাতটি পঞ্চায়েতের ব্লক কৃষি দফতরের অফিসে গিয়ে কাজ করি। এতে দূরবর্তী এলাকার চাষিদের তো অসুবিধা হচ্ছেই, আমাদেরও সমস্যা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy