ত্রাণ-সংগ্রহে: ডুবে যাওয়া নলকূপ থেকেই চলছে খাবার জল সংগ্রহ। হরিসিংহপুরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল ও কৌশিক সাঁতরা।
ডায়েরিয়া হতে পারে আশঙ্কায় আগেভাগেই নাকি প্রস্তুতি সেরে রেখেছিল প্রশাসন। পুকুরের জল নিয়ে সচেতনতা প্রচারও শুরু হয়েছিল। তবু জলমগ্ন ঘাটালে এখন পরিস্থিতি বেশ সঙ্কটজনক। যে জলে বাসন ধোয়া, সেই জলই ব্যবহার হচ্ছে প্রাতকৃত্যে। সেই জল আবার মিশেছে পানীয় জলের উৎস মুখে। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশও মানছেন, পরিস্থিতি অবিলম্বে শোধরানো না গেলে যে কোনও মুহূর্তে জলবাহিত রোগ থেকে মহামারীর আশঙ্কা রয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “বেশ কিছু এলাকায় জল বাহিত রোগের খবরও আসছে। সেখানে মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছে।”
ঘাটালে বাঁধ ভেঙেছে, সেনা নামিয়ে বাঁধ সারানোর দাবি রয়েছে। তারই পাশাপাশি চোখ রাঙাচ্ছে রোগের প্রকোপ। ডায়েরিয়া, জন্ডিস, নানা চর্মরোগের প্রকোপ থেকে বাঁচতে পুকুরের জল ব্যবহারে নিষেধ করে বছর ভরই প্রচার চালায় স্বাস্থ্য দফতর। ঘাটালে আবার সারা বছরই পরিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব। প্রান্তিক এলাকার হাজার হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা পুকুর। গত কয়েক দিনের বন্যা পরিস্থিতি পরিবেশ আরও দূষিত করেছে। এই মুহূর্তে পুকুরের জল এবং বন্যার জল একাকার হয়ে গিয়েছে।
জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জমা জলেই স্নান করছেন, জামা-কাপড় কেচে নিচ্ছে। বেশিরভাগ এলাকার শৌচাগার জলের তলায়। ফলে নোংরা হচ্ছে পরিবেশ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা জলে দুর্গন্ধ উঠছে। পানীয় জলের সমস্ত উৎসগুলিই জলে ডুবে গিয়েছে। যেখান থেকে জল সরেছে, সেখানেও নলকূপ বা ট্যাপের পাইপগুলি সংস্কারে হচ্ছে না। পচা-জমা জল, জঞ্জালে ভর্তি নলকূপ বা ট্যাপ থেকেই পানীয় জল সংগ্রহ করছেন। এতেই উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর।
প্রশাসনের দাবি, পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য দফতর এবং জনস্বাস্থ্য দফতর কাজ শুরু করেছে। পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে জলের পাউচ বিলি হচ্ছে। কিন্তু বাসিন্দাদের দাবি, এখনও দুর্গত এলাকাগুলিতে পানীয় জল পৌঁছায়নি। শুধু প্রান্তিক এলাকা নয়। সঙ্কটে খোদ মহকুমার এই সদর শহরও। ঘাটালের পাঁচটি ওয়ার্ড এখনও জলের তলায়। কুশপাতা, গোবিন্দপুর, বিবেকানন্দ পল্লি, হাসপাতাল মোড়, কোন্নগর প্রভৃতি এলাকার সমস্ত জলের কলই জলে ডুবে। অথচ, শহরে এখন পর্যন্ত সরকারি পাউচ বিলি হয়নি। শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের গলায়ও উদ্বেগের সুর। তিনি বললেন, “ত্রাণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত জল সরবরাহ জরুরি। না হলে নোংরা জল থেকে মহামারীর আশঙ্কা প্রবল।” যদিও জনস্বাস্থ্য দফতরের সহকারী বাস্তুকার আশুতোষ দাস বলেন, “যে সব এলাকা থেকে জল সরে গিয়েছে, সেখানে পাইপ এবং জলের নানা উৎসগুলি সংস্কার শুরু হয়েছে। দেওয়া হচ্ছে হ্যালোজেন ট্যাবেলটও।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy