থমথমে: গুড়গুড়িপালে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পুড়ে যাওয়া লরি।
বালি বোঝাই লরির ধাক্কায় শুক্রবার প্রাণ গিয়েছে একজনের। ক্ষোভে ১২টি লরিতে আগুন লাগিয়ে দেন এলাকার বাসিন্দারা। মেদিনীপুর সদর ব্লকের গুড়গুড়িপালের ওই ঘটনায় তৃণমূলের স্থানীয় বুথ সভাপতি অসীম মল্লিক-সহ ৭জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের বাকিরাও এলাকায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক হিসেবেই পরিচিত।
পুলিশ সাতজনকে গ্রেফতার করলেও এখনও রাগ কমেনি গুড়গুড়িপালের। শনিবারও পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন গণেশ ভুঁইয়া, নবকান্ত ভুঁইয়া, ভৈরব ভুঁইয়ারা। গুড়গুড়িপালের বাসিন্দা নবকান্তদের কথায়, “এই রাস্তা দিয়ে কয়েকশো বালি বোঝাই লরি যায়। আমরা উদ্বেগে থাকি, কখন কী হয়। লরিগুলো দ্রুত গতিতে চলাচল করে। এখানে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা নেই। দুর্ঘটনা ঘটলে দিন কয়েক পুলিশি তৎপরতা দেখা দেয়। তার পরে যে কে সেই!”
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, একদিকে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে প্রচার চলছে, অন্য দিকে এই রাস্তায় নজরদারি বা গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। কখনও মৃত্যু হচ্ছে। কখনও পথচারীরা জখম হচ্ছেন। মেদিনীপুর-ধেড়ুয়া সড়কের ওপরই রয়েছে গুড়গুড়িপাল। রাস্তার পাশে প্রাথমিক স্কুল, হাইস্কুল, দোকান-বাজার থাকলেও এখানে কোনও হাম্প নেই। নেই ‘স্পিড ব্রেকার’-ও। ব্যারিকেডও নেই। স্থানীয় গণেশ ভুঁইয়ারা মানছেন, “অনেকদিনের ক্ষোভ জমেছিল। এই দুর্ঘটনার পরে তা সামনে এসেছে।”
এলাকায় পুলিশের টহল।
শুক্রবার সন্ধ্যায় গুড়গুড়িপালে বালি বোঝাই লরির ধাক্কায় তাজ ঘোষ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। ঘাতক লরিটি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। পিছনে থাকা আরও ১২টি লরিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনে লরিগুলো পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। রাতের দিকে পোড়া লরিগুলো সরানোর কাজ শুরু হয়। শনিবার সকাল পর্যন্ত এই কাজ চলে। এ দিন বেলার দিকে এই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুরে বেআইনি বালি খাদানের রমরমা রয়েছে। ধেড়ুয়া, লালগড়েও বেআইনি বালি খাদান রয়েছে বলে অভিযোগ। কংসাবতীর চর থেকে অবাধে বালি তোলা হয় বলে অভিযোগ। পরে বালি বোঝাই লরি গুড়গুড়িপালের এই রাস্তা ধরেই মেদিনীপুর পেরোয়। তাই গুড়গুড়িপালে পথ দুর্ঘটনা নতুন নয়। গত বৃহস্পতিবারও এখানে দুর্ঘটনায় এক যুবক জখম হয়েছিলেন। স্থানীয় জয়দেব ভুঁইয়ার কথায়, “প্রায় দিনই দুর্ঘটনা ঘটে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বালি বোঝাই লরিই পথচারীদের ধাক্কা মারে।” গুড়গুড়িপাল হাইস্কুলের ছাত্র রাকেশ দোলুই, মনমোহন দোলুই, তারক বিশুই, রুদ্র রাউলরাও বলছে, “লরিগুলো খুব জোরে চলে। স্কুল যাওয়া-আসার সময় দেখে রাস্তা পেরোতে হয়। না হলে যে কোনও সময় লরি ধাক্কা দিতে পারে।” স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, দিনে-রাতে রাস্তায় লরি দাঁড় করিয়ে টাকাও আদায় করে পুলিশের একাংশ। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে একাংশ চালক দ্রুত গতিতে গাড়ি চালান। এরফলেও দুর্ঘটনা ঘটে।
জনবহুল গুড়গুড়িপালে কেন গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা নেই? জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনার আশ্বাস, “পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।” শনিবার ধৃতদের মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হয় স্থানীয় তৃণমূল নেতা অসীম মল্লিক-সহ ২ জনের তিন দিনের পুলিশ হেফাজত ও বাকি ৫জনের চোদ্দো দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। ঘটনায় সঙ্গে শাসকদলের যোগ প্রসঙ্গে সদরের তৃণমূল নেতা অঞ্জন বেরার বলছেন, “সব ঘটনায় দলকে জড়িয়ে দেওয়া ঠিক নয়।”
—নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy