Advertisement
১১ মে ২০২৪

Teacher: ভুয়ো শংসাপত্রে চাকরি শিক্ষকের নামে মামলা পুলিশের

প্রশাসনের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গত বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

অভিযুক্ত: নিরঞ্জন মান্না।

অভিযুক্ত: নিরঞ্জন মান্না।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৪৩
Share: Save:

‘ভুয়ো শংসাপত্র’ দেখিয়ে গত ২৬ বছর ধরে চাকরি করছেন এক সহকারী প্রধান শিক্ষক! এমনই অভিযোগে তোলপাড় ঝাড়গ্রাম। শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক নিরঞ্জন মান্নার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছিল। তদন্তের পর প্রশাসন তফসিলি জাতির শংসাপত্র বাতিল করে দিয়েছে। প্রশাসনের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গত বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

ভুয়ো শংসাপত্র দেখিয়ে চাকরি। সে ক্ষেত্রে চাকরির ক্ষেত্রে কি কোনও প্রভাব পড়বে? জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক(মাধ্যমিক) শক্তিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি স্কুল কমিশনার, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নজরে আনা হচ্ছে। তাঁরাই চাকরির বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই নিরঞ্জন বলেন, ‘‘১৯৯৪ সালে শংসাপত্র তৈরির সময় প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য দিয়েছিলাম। আগেও দু’বার অবজেকশন হয়েছিল। তখন কিছু হয়নি। কিন্তু এ বার মহকুমা শাসক তা বাতিল করে দিয়েছেন। ১৪ জানুয়ারি রাতে বাতিলের কপি পেয়েছি।’’ তবে পাশাপাশি নিরঞ্জন যোগ করেন, ‘‘আমার মানসম্মান নষ্ট করার জন্য কিছু লোকজন চক্রান্ত করেছেন। ন্যায় বিচারের জন্য হাইকোর্টে দ্বারস্থ হয়েছি।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০০৮ সালে ও ২০১৮ সালে নিরঞ্জনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছিল। সামান্য তদন্ত হওয়ার পর তা ধামাচাপা পড়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গ ওবিসি মঞ্চের বর্ধমান বিভাগের সম্পাদক মনোরঞ্জন মাহাতো গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর ঝাড়গ্রাম মহকুমা শাসকের কাছে ফের নিরঞ্জনের বিরুদ্ধে ‘ভুয়ো শংসাপত্রে’র মাধ্যমে চাকরির অভিযোগ জানিয়েছিলেন। মনোরঞ্জন বলেন, ‘‘ মান্না পদবি হল নাপিত। নাপিত কোনওদিনই তফসিলি জাতি হতে পারে না। ওই শিক্ষক ১৯৪১ সালের তাঁর ঠাকুরদার নামে থাকা দলিলে কালি দিয়ে নাপিতের জায়গায় নমশূদ্র করে তফসিলি জাতির শংসাপত্র আদায় করেছিলেন ১৯৯৪ সালে।’’ সূত্রের খবর, ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর কুমুদ কুমারী ইনস্টিটিউশনে বাংলা বিষয়ে সহ-শিক্ষক পদে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন নিরঞ্জন। ওই সময় বাংলা বিষয়ে আসনটি তফসিলি জাতি সংরক্ষিত ছিল। নিরঞ্জন তফসিলি জাতি শংসাপত্র দেখিয়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগের পরই মহকুমা শাসক তদন্ত শুরু করেন। তদন্তে জানা যায়, তাঁর আত্মীয়দের চারজনের অনগ্রসর শ্রেণি শংসাপত্র রয়েছে। তাহলে একই পরিবারে দু’রকম শংসাপত্র কী করে হয়? ডিসেম্বরই তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ে। প্রশাসনের তরফ থেকে ফের চিঠি দিয়ে ওই শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন শংসাপত্র বাতিল হবে না। পাশাপাশি শংসাপত্রটি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু শিক্ষকের রিপোর্টের জবাব সন্তোষজনক ছিল না। গত ১১ জানুয়ারি মহকুমা শাসক বাবুলাল মাহাতো শুনানি করে তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে নিরঞ্জনের জাতিগত শংসাপত্র বাতিল করে দেন। এমনকি সেই রিপোর্ট স্কুল শিক্ষা দফতর সহ প্রশাসেরন বিভিন্ন স্তরে পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার নয়াগ্রাম থানায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের জানিয়েছেন মহকুমা শাসক। অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘ভুয়ো শংসাপত্র দিয়ে চাকরি করছেন ওই শিক্ষক। অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবারই মামলা রুজু করা হয়েছে।’’ নিরঞ্জন ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর ওই স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে উন্নীত হন। বছর তিনেক টিচার-ইনচার্জ ছিলেন। গত বছর অগস্টের শেষে প্রধান শিক্ষক পদে বিশ্বজিৎ সেনগুপ্তের যোগ দেওয়াতে গড়িমসি করছিলেন। শেষ পর্যন্ত স্কুল শিক্ষা দফতরের নির্দেশে তিনদিন পর বিশ্বজিৎকে যোগ দিয়েছিলেন।

নিরঞ্জন আবার পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক তৃণমূল শিক্ষক সমিতির সদস্য। সংগঠনের জেলা সভাপতি জয়দীপ হোতা বলেন, ‘‘সংগঠনের কাজ হল সেবামূলক কাজ করা। ব্যক্তিগত ভাবে কে, কী করেছে তার দায় শিক্ষক সংগঠন নেবে না। আইন আইনের পথে চলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE