Advertisement
E-Paper

চোখে আলো ফেলে টাকা চায় পুলিশ

বুধবার সকাল ১১ টা। কোলাঘাট থানার অদূরে হলদিয়া মোড়ের ফ্লাই ওভার। তার ঠিক নিচে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের মাঝের লেনে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পুলিশের গাড়ি। পুলিশের সাথে তিনজন সাধারণ পোশাকের যুবক দাঁড়িয়ে।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:২৩
একশো টাকার নোট দিচ্ছেন এক লরিচালক। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

একশো টাকার নোট দিচ্ছেন এক লরিচালক। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

বুধবার সকাল ১১ টা। কোলাঘাট থানার অদূরে হলদিয়া মোড়ের ফ্লাই ওভার। তার ঠিক নিচে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের মাঝের লেনে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পুলিশের গাড়ি। পুলিশের সাথে তিনজন সাধারণ পোশাকের যুবক দাঁড়িয়ে। মাঝের লেন ধরে খড়্গপুরের দিক থেকে হাওড়ার দিকে লরির সামনে হাত নেড়ে দাঁড়ানোর ইশারা করছেন তাঁরা। লরি চালকের ডান দিকের জানলার দিকে এগিয়ে যায় ওই যুবকের হাত। তাতে ১০০ টাকা গুঁজে দেন লরিচালক। আর মুহূর্তে তা পৌঁছে যায় পুলিশের হাতে।

বেলা সাড়ে ১২ টা। পাঁশকুড়ার মেচগ্রাম গ্রামের কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে বাইপাসের রাস্তার একধারে দাঁড়িয়ে পুলিশের গাড়ি। পাশে দাঁড়িয়ে জনা তিনেক উর্দিধারী পুলিশ। আর ওই সড়কের মাঝে ডিভাইডারের উপর গাছের ছায়ায় চেয়ার পেতে বসে সাধারণ পোশাকের এক যুবক। হাওড়াগামী লরির দিকে হাত বাড়ালেন উর্দিধারী এক পুলিশ। লরির গতি সামান্য কমিয়ে খালাসি ৫০ টাকার নোট বাড়াতেই ছোঁ মেরে নিলেন ওই পুলিশ কর্মী।

সোমবার কলকাতার বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ‘তোলা’ না দিয়ে পুলিশভ্যানের তাড়া খাওয়া লরিটি গতি বাড়িয়ে পালাতে চেয়েছিল। আর তা করতে গিয়েই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিষে দিয়েছিল আত্মীয় দুই পরিবারের চার নাবালককে। সেই ঘটনাও যে পুলিশের টনক নড়াতে পারেনি বুধবার ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের কোলাঘাটের রূপনারায়ণ সেতু থেকে পাঁশকুড়ার রাতুলিয়া পর্যন্ত এই ছবিই তার প্রমাণ। জাতীয় সড়কে যাতায়াতকারী গাড়ি পরীক্ষা করার অছিলায় পুলিশের টাকা আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আর গত দু’বছরে চাহিদা এতটাই বাড়ছে যে লরি ও বোঝাই মালপত্রের কাগজ পত্র ঠিকঠাক থাকলেও ‘তোলার’ টাকা দিতেই হবে বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় বলে চালকদের অভিযোগ।

পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুর থেকে বালি বোঝাই করে হাওড়া জেলার শ্যামপুরে যাতায়াত করেন এমন দুই লরি চালকরা জানান, বালি বোঝাই করার পর বেরনোর পর গোপীবল্লভপুর সেতুর কাছে প্রথম টাকা দেওয়া শুরু। এরপর বেলিয়াবেড়া, বেলতলা গেট, পাঁশকুড়ার মেচগ্রাম, কোলাঘাটের হলদিয়া মোড় ও বাগনানের নাউপালা এলাকায় পুলিশকে ওই টাকা দিতে হয়। কোথাও ৫০ টাকা আবার কোথাও ১০০ টাকা। তোলা না দিয়ে চলে গেলেও হাল ছাড়ে না পুলিশ। গাড়ি নিয়ে ধাওয়া করা হয় সেই লরিকে। এই কারণে কোলাঘাট থেকে পাঁশকুড়ার মাঝের রাস্তায় বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের দাবি ছিল, আসামী ধরতে গিয়ে এমন কাণ্ড ঘটেছে। এমনকী টাকা নিতে দিন কয়েক আগে একটা লরিতে উঠে পড়তেও কসুর করেননি দুই সিভিক ভলান্টিয়ার।

পুলিশকে টাকা দিতে হয় কেন? চালকরা জানান, বর্তমানে সরকারি নিয়মনুযায়ী লরিতে সর্বাধিক ২৭০ ঘনফুট বালি বহন করা যায়। কিন্তু শ্রমিকরা লরিতে বালি বোঝাই করার সময় অনেক সময়ই সেই পরিমাণ বেশি থাকে। তাই অতিরিক্ত পণ্য পরিবহণের অভিযোগ তুলে জরিমানা বা মামলা করার ভয় দেখানো হয়। ঝামেলার হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য ওই টাকা দিতে হয়। ওই লরি চালকদের অভিযোগ, ‘‘আগে বিভিন্ন থানা এলাকায় আমাদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা করে নেওয়া হত। কিন্তু গত প্রায় দু’বছর টাকা নেওয়ার পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।’’ কীভাবে চলে পুলিশের এই আদায় অভিযান? লরিচালকরা জানান, প্রথমে লরি আটকে কাগজপত্র চাওয়া হয়। গাড়ির কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও যে কোনও অজুহাতে মামলা করার ভয় দেখানো হয়। এরপরেই আসে টাকার দাবি। টাকা দিয়েই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছাড় মেলে। এক ট্রাক চালক জানান, রাতের বেলায় হাতে টর্চ নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেয় পুলিশ। গাড়ি না থামিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে চোখে টর্চের আলো ফেলা হয়। চোখে সরাসরি আলো পড়লে বিভ্রান্ত হয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। তাই তখন গাড়ি থামাতেই হয়। আর এরপরেই গালিগালাজ করে চাওয়া হয় টাকা।

কোলাঘাটের বরদাবাড়ের কাছে একটি ধাবার সামনে দাঁড়ানো গরু বোঝাই লরির সঙ্গে থাকা এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘দিন দিন পুলিশের টাকার চাহিদা বাড়ছে। পুলিশে জানিয়ে আর কী হবে? ওরাই তো এ সব করে। পুলিশকে সরকার মাইনা দেয় না কি?’’ পুলিশ অবশ্য এ সব অভিযোগকে পাত্তাই দিতে চায়নি। তাদের দাবি, লরিচালকরা বহু বেআইনি জিনিস নিয়ে যায়। তাই ধরতেই রাতে বা দিনে টহলদারি। আর যে টাকা নেওয়া হয়, সেটা ওই জরিমানা।

লরি থামিয়ে টাকা তোলার অভিযোগ না কি প্রথম শুনছেন জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। একটু ভেবে তাঁর উত্তর, ‘‘জাতীয় সড়কে গাড়ি পরীক্ষা করার জন্য পুলিশ থাকে। তবে গাড়ি থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আসেনি।’’

police extorting money NH6
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy