গড়বেতায় ব্যবসা বন্ধ। (ইনসেটে) নিহত ব্যবসায়ী। —সৌমেশ্বর মণ্ডল
ভরদুপুরে সোনার দোকানের মধ্যে মালিককে কুপিয়ে খুন করে ডাকাতির ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। গড়বেতার সত্যনারায়ণ মোড় বাজারের ওই ঘটনা ঘিরে ক্ষোভ বাড়ছিল স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার গড়বেতায় ব্যবসা বন্ধের ডাক দেন তাঁরা। থানাতেও বিক্ষোভ দেখান। গড়বেতা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত মহাপাত্র বলেন, “৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধী ধরা না-পড়লে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে হবে। আমাদের আওতায় যে ন’টি ইউনিট রয়েছে, সর্বত্র অনির্দিষ্টকালের ব্যবসা বন্ধ হবে।”
এর পরই পুলিশ কুকুর নিয়ে এলাকা তল্লাশিতে যায় গড়বেতা থানার পুলিশ। সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় থানার প্রাক্তন আধিকারিকদের, যাঁরা বর্তমানে অন্যত্র কর্মরত। কারণ এই ঘটনার পিছনে পুরোন অনেক ঘটনার ছায়া দেখছেন তাঁরা। তদন্তে নেমে পাঁচ জনকে আটক করছে পুলিশ। তার মধ্যে রয়েছেন দোকানের তিন কর্মচারী, বুধবার দুপুরে যে ক্রেতা ফোন করে এনেছিলেন অমলবাবুকে এবং দোকানের উল্টো দিকের এক চা-দোকানি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে, এ কাজ কোনও পেশাদার খুনি বা ডাকাতের নয়। ডাকাতি উদ্দেশ্য হলে মালিককে দোকানের ভিতর বেঁধে রেখে পালাতে পারত দুষ্কৃতীরা। আবার যদি এমন হত যে অমলবাবু কাউকে চিনে ফেলেছিলেন তাই খুন করা, সে ক্ষেত্রেও খুনের ধরনে অপেশাদারি ছাপ স্পষ্ট। পুলিশের সন্দেহ, বন্ধকী কারবারের জেরে কোনও শত্রুতা থেকে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সে দিন দুপুরে যে ব্যক্তি ফোন করে ডেকে এনেছিলেন অমলবাবুকে তিনি সোনার গয়না কিনেছিলেন। আধঘন্টা গল্প করে, ঠান্ডা পানীয়ও খেয়ে যান। তাঁর বাড়ি থেকে গয়নার রসিদও উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু পুলিশের সন্দেহ, ওই সময়ের মধ্যেই দুষ্কৃতীরা দোকানে ঢুকেছিল। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দোকানের পাশেই একটি গাড়ি দাঁড়িয়েছিল বাঁকুড়ার দিকে মুখ করে। চারজনকে দোকানে ঢুকতেও দেখেছিলেন কেউ কেউ। তাদের কথায় হিন্দি টান ছিল। এক সময় দু’জনকে খালি গায়েও দেখা গিয়েছিল। পুলিশের অনুমান, কুপিয়ে খুন করার পর রক্ত লাগা জামা খুলে তারা গাড়িতে উঠে চম্পট দেয়। অমলবাবুর পরিবার এখনও স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি ঠিক কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি তাঁদের হয়েছে, কত ভরি গয়না লুঠ হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অবশ্য বলছেন এমন ডাকাতির ঘটনা নতুন নয়। মাস ছয়েক আগেই রাতের অন্ধকারে চুরি হয়েছিল পাশের দু’টি কাঁসা পিতলের দোকানে। দু’টি দোকান মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিনলক্ষ টাকার বাসন চুরি যায় বলে অভিযোগ। একটি দোকানের মালিক পার্থপ্রতীম দে বলেন, “ছ’মাস হতে চলল, চুরির কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। এটাও একই লোকের কাজ বলে আমাদের ধারণা।’’ বছর ছয়েক আগে নির্মাল্য আঢ্যর সোনার দোকানেও চুরি হয়। তাঁর কথায়, “এখানে কোনও চুরিরই কিনারা হয়নি। না হলে কি দুষ্কৃতীরা এত সাহস পেত?”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাইক চুরির ঘটনা বাড়ছে প্রতিদিন। কোনও ঘটনার কিনারাই করতে পারেনি পুলিশ। না ধরা পড়ে চোর, না-উদ্ধার হয় মোটর বাইক। প্রতিবাদে বন্ধ ডেকেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা সরাসরি আরও ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy