Advertisement
১৬ মে ২০২৪
আতঙ্কে শিশু-প্রসূতিরা

কঙ্কালসার স্বাস্থ্যকেন্দ্র

ভেঙেচুরে একেকার ঘরের কোণটা। দেওয়ালে বড় বড় ফাটল। ভেতরের ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে দেওয়াল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে শিকড়। মাঝে মাঝে দেখা মেলে সাপেরও। বর্ষায় জল পড়ে মেঝে থইথই অবস্থা হয়। না না, কোনও পোড়ো বাড়ি বলে একে ভুল করবেন না।

সাবড়া ধনেশ্বরপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল চেহারা। নিজস্ব চিত্র।

সাবড়া ধনেশ্বরপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল চেহারা। নিজস্ব চিত্র।

অমিত কর মহাপাত্র
দাঁতন শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০১:১৬
Share: Save:

ভেঙেচুরে একেকার ঘরের কোণটা। দেওয়ালে বড় বড় ফাটল। ভেতরের ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে দেওয়াল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে শিকড়। মাঝে মাঝে দেখা মেলে সাপেরও। বর্ষায় জল পড়ে মেঝে থইথই অবস্থা হয়। না না, কোনও পোড়ো বাড়ি বলে একে ভুল করবেন না। এটাই ছবি সাবড়া ধনেশ্বরপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের। অবাক হবেন না। এর মধ্যেই কোনক্রমে চলছে রোগীদের চিকিৎসাও। ঘরে ত্রিপল টাঙিয়ে বসেন কর্মীরা। আর রোগীদের বসতে হয় মাথায় ছাতা ধরে। এমনই অব্যবস্থার মধ্যেই পরিষেবা নিতে বাধ্য হন দাঁতন-২ ব্লকের সাবড়া এলাকার শিশু, প্রসূতি থেকে সাধারণ রোগীরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দু’দশকের বেশি সময় ধরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভবনের এমন বেহাল দশা। সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে সাংসদদের কাছে বারংবার আবেদন জানিয়েও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। উল্টে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থা হয়ে গিয়েছে আরও খারাপ। ধনেশ্বরপুর থেকে মোহনপুর যাওয়ার রাস্তার গায়েই ওই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। দু’জন এএনএম ও এক জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক ছাড়াও সপ্তাহে তিন দিন আসেন একজন আয়ুর্বেদ চিকিৎসক। তাঁরা জানান স্থানীয় বেতারুই, ধনেশ্বরপুর, বাস্তপুর, কেদার ইত্যাদি গ্রামে স্বাস্থ্য সচেতনতার দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষের সংখ্যা বেশি। এই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশুদের টিকাকরণ ও প্রসূতিসহ মহিলাদের নিয়মিত বিভিন্ন ওষুধ দেওয়া হয়। নার্স লক্ষ্মী সিংহ বলেন, “বর্ষায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘরের দেওয়াল ও মেঝের যা অবস্থা হয়, তাতে শিশু-প্রসূতিদের সংক্রমণ হওয়ার ভয় থেকেই যায়। ওষুধপত্র নষ্ট হয় ছাদ ফাটা জলে।” তিনি জানান, মহিলা ও তাঁদের বাড়ির লোকজনদের কাছ থেকে নিয়মিত গাল খেতে হয় তাঁদের। বিক্ষোভও দেখান তাঁরা।

স্থানীয় বাসিন্দা সেলিমা বিবি, অন্তরা সাউরা বলেন, “বর্ষায় মেঝেতে জল দাঁড়িয়ে যায়। ভাঙাচোরা ঘর থেকে প্রায়ই সাপ বেরোয়। বসার জায়গা পর্যন্ত থাকে না। বাচ্চাদের কী ভরসায় নিয়ে আসব বলুন তো।” স্বাস্থ্য পরিদর্শক হরিপদ দাস দশ বছর ধরে এই কেন্দ্রে নিযুক্ত। তিনিও বলেন, “বেশির ভাগ জানালা ভাঙাচোরা। ফ্রিজ নেই। নির্ভর করতে হয় কাছাকাছি অন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর। সার্বিক এই পরিস্থিতিতে পরিষেবা দেওয়াটাই কঠিন হয়ে যায়।”

বিডিও রুনু রায় জানান, জমির নথি না থাকায় নতুন ভবন তৈরির পরিকল্পনা করা যাচ্ছে না। ওই ভবনের যা অবস্থা তাতে সংস্কার করেও লাভ নেই। তাই গোটা বিষয়টি নিয়ে একটা জট রয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “ওই এলাকায় সরকারি জমি অথবা দানের জমির খোঁজ চলছে। অন্য কোনও ঘরে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র সরানো যায় কিনা, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

health center poor condition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE