Advertisement
০১ মে ২০২৪
Poor condition of road

ভাঙা পথে চলা দায় শহরেও

ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও জমা জল এখনও বিক্ষিপ্ত ভাবে রয়ে গিয়েছে। ধীর গতিতে জল কমছে।

ঘাটাল শহরে মোরাম দিয়ে চলছে রাস্তা সংস্কার।

ঘাটাল শহরে মোরাম দিয়ে চলছে রাস্তা সংস্কার। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৪
Share: Save:

গ্রাম তো বটেই দুই জেলার শহরের রাস্তার অবস্থাও তথৈবচ।

বন্যার জলে ঘাটাল শহরে কোথাও ঢালাই রাস্তার অল্প বসে গিয়েছে। কোথাও আবার জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে মোরাম রাস্তা। নীচু এলাকা থেকে এখনও জল সরেনি। ফলে পুজোর মুখে ঘাটাল পুর এলাকার মূল ও শাখা রাস্তাগুলির সব দফারফা অবস্থা। ছোট-বড় গর্তে ভরেছে শহর মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম শহরের বেশ কিছু রাস্তা। গড়বেতা শহরেও একই ছবি। বৃষ্টির জল জমে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও জমা জল এখনও বিক্ষিপ্ত ভাবে রয়ে গিয়েছে। ধীর গতিতে জল কমছে। পুজোর আগে তাই বন্যার জলে ঘাটাল শহরের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলি সংস্কার নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়। ঘাটাল পুরসভা সূত্রের খবর, বন্যা প্রবণ ঘাটালে প্রতি বছরই বন্যার জলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। শহরের বারোটি ওয়ার্ড দিন দশেকের মত জলমগ্ন ছিল। ফলে পুর এলাকার রাস্তা গুলির একাংশ বিক্ষিপ্ত ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পুরসভা জানাচ্ছে, বন্যার জলের বেশ কিছু পুরানো দিনের ঢালাই রাস্তার বসে গিয়েছে। কোথাও ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে ক্ষতি হয়েছে বিশেষ করে একাধিক শাখা রাস্তার। যে গুলির বেশিরভাগ মোরাম। সেখানে বহু মানুষ সারাদিনে যাতায়াত করেন। পুরসভার ১, ২, ৭, ৮, ৯, ১০ ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু শাখা রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যেমন পাঁচঘোড়া, শ্রীরামপুর, জয়নগর, গড়প্রতাপনগরে একাধিক মোরাম রাস্তায় ক্ষতি হয়েছে। চাউলি শুকচন্দ্রপুর প্রভৃতি এলাকায় বেশ কিছু রাস্তাও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যান তুহিনকান্তি বেরা বলেন, ‘‘বন্যায় ঘাটাল শহরে একাধিক রাস্তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুজোর আগে বেশ কিছু রাস্তার সংস্কার করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে সব রাস্তার সংস্কার করা হবে।’’

ছোট- বড় গর্তে ভরেছে শহর মেদিনীপুরের বেশ কিছু রাস্তা। বৃষ্টির জল জমে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আবার পানীয় জলের পাইপ লাইন বসানোর কাজ চলছে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। এর ফলেও অনেক রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে। পাইপ বসানোর পর তাপ্পি মারা হচ্ছে ঠিকই, তবে তাতে রাস্তা আগের চেহারায় ফিরছে না। আবার দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে কিছু রাস্তা। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান সৌমেন‌ খান বলেন, ‘‘পুজোর আগে কিছু রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে। আরও কিছু রাস্তা সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হলে কাজ শুরু হবে।’’ একাংশ বাসিন্দার অভিযোগ, রাস্তা খারাপ থাকায় তাঁদের যাতায়াত করতে হচ্ছে ঘুরপথে। না হলে ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে রাস্তা। অবিলম্বে প্রধান রাস্তাগুলি সারিয়ে শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। বছর দুয়েক ধরে কিছু রাস্তা বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে। জায়গায়-জায়গায় খানাখন্দ। সাম্প্রতিক বর্ষার জল সেই খন্দে জমে পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে। ফলে, শহরের প্রাণকেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শহরতলির এলাকার বাসিন্দাদের। বেশ কিছু জায়গায় সাইকেল, বাইক চালানো রীতিমতো বিপজ্জনক! খানাখন্দে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।

পুজোর আগে খানাখন্দের রাস্তা মেরামতের তেমন তৎপরতা নেই গড়বেতার তিনটি ব্লকের সদর শহরেও। গড়বেতা শহরের ভিতরে কয়েকটি রাস্তায় ছোট-বড় গর্ত হয়ে গিয়েছে। সর্বমঙ্গলা মন্দির যাওয়ার রাস্তা নষ্ট হচ্ছে নিকাশি নালার জল উপচে যাওয়ায়। গড়বেতা থেকে হুমগড় যাওয়ার রাজ্য সড়কে মঙ্গলাপুরের কাছে রাস্তা খানাখন্দে ভরেছে। গোয়ালতোড় ও চন্দ্রকোনা রোডের কয়েকটি রাস্তার হালও খারাপ হয়েছে ভারী যানবাহন চলাচলে। পুজোর মুখে সেইসব ভগ্ন রাস্তা মেরামতের সেভাবে সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না। কয়েকটি এলাকায় রাস্তায় গর্ত বোঝানো হলেও, সামগ্রিকভাবে রাস্তা সংস্কারের কাজ হচ্ছে না বলে ব্লক প্রশাসনের প্রতিনিধিরাই কাযর্ত স্বীকার করে নিচ্ছেন।

২১ বর্গকিলোমিটার ঝাড়গ্রাম পুরশহরের বেশিরভাগ রাস্তা আস্ত নেই। পুজোর আগে বেহাল পথ সংস্কারের সম্ভাবনা নেই। এখনও রাস্তার টেন্ডার হয়নি। কয়েকদিন পর মহালয়া। পুজোর আগে না হলে রাস্তা কবে সারবে? প্রশ্ন তুলে কটাক্ষ শুরু করেছে বিরোধীরা। প্রাক্তন বাম পুরপ্রধান সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকার বলেন, ‘‘পুরসভার সর্বত্রই রাস্তা খারাপ। পুজোর সময় মানুষজন ক্ষণে ক্ষণে বিপদের মুখে পড়বেন। শহরের সব রাস্তাই খারাপ অথচ পুর কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।’’ শহর তৃণমূলের সভাপতি তথা পুরপ্রতিনিধি নবু গোয়ালা বলছেন, ‘‘বরাদ্দ এসেছে। রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ করা হবে। তবে পুজোর আগে কতগুলি রাস্তা মেরামত করা যাবে সেটা অখনই বলা সম্ভব নয়।’’ ঝাড়গ্রাম শহরের ১৮টি ওয়ার্ডে মোট ৩১৮ কিমি রাস্তার মধ্যে ১৩২ কিমি পাকা রাস্তার বেহাল অবস্থা। এছাড়াও ৭৮ কিমি মোরাম রাস্তাও গর্তে ভরে গিয়েছে। চলবে

(তথ্য সহায়তা: অভিজিৎ চক্রবর্তী, বরুণ দে, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, কিংশুক গুপ্ত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE