আলু কেনার ভিড় দাসপুরের কলোড়া বাজারে। কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।
পর্যাপ্ত আলু মজুত রয়েছে। কিন্তু সরকারি নজরদারির অভাবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে চড়া দরে বিকোচ্ছে খুচরো আলু। বেশ ক’মাস ধরে জেলার প্রায় সমস্ত বাজারে ১৮-২০ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। অথচ এখন পাইকারি আলুর দাম প্রতি কুইন্ট্যাল ১২০০ টাকা। হিসেব বলছে, কিলো প্রতি আলুর ক্রয়মূল্য ১২ টাকা। এ ক্ষেত্রে ১৪ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রির কথা। ফলে কিলোগ্রাম প্রতি চার-ছয় টাকা বেশি দরে আলু কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা।
সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন জেলার সহ-কৃষিজ বিপণন আধিকারিক উত্তম হেমব্রম। তবে তাঁর আশ্বাস, “আমরা অভিযান শুরু করব। ইতিমধ্যে গোপনে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। ১৪ টাকার বেশি দরে আলু বিক্রি করলেই আলু বাজেয়াপ্ত করা হবে। কালোবাজারি রুখতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষও বলেন, ‘‘দু’একদিনের মধ্যেই যাতে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে ক্রেতারা আলু কিনতে পারেন-তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
জেলা কৃষি বিপণন দফতর ও কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এ বছর আলুর দাম প্রথম থেকেই চড়া ছিল। গত অগস্টে পাইকারি আলুর দাম উঠেছিল প্রতি কুইন্ট্যাল ১৬০০ টাকা। তখনও ১৮-২০ টাকা কিলোগ্রাম দরে বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে। আর এখন পাইকারি আলুর দাম কমেছে। বাজার অনুযায়ী খুচরো আলু ১৪ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা। অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই বেশি দামে আলু বিক্রি চলছে। আলুর দামে রাশ টানার বিষয়েও হুঁশ নেই প্রশাসনের।
পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক বরেন মণ্ডলের অভিযোগ, “আমাদের কাছ থেকে ১২০০ টাকা দরে আলু কিনছেন ছোট ও মাঝারি আলু ব্যবসায়ীরা। ওই আলু ঝাড়াই-বাছাই হয়। তাতে প্রতি বস্তায় দু’তিন কিলোগ্রাম করে আলু নষ্ট হয়। তার উপর পরিবহণ খরচ পড়ে। তারপরও ৫ টাকা দরে আলু বিক্রি করলেও ব্যবসায়ীদের ভাল লাভ থাকার কথা।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আলু ব্যবসায়ীর কথায়, “এ বার খুচরো আলুর দাম নিয়ে ক্রেতারা সরব হলেও প্রশাসন কোনও মাথা ঘামায়নি। তাই এই অবস্থা। তবে সারা রাজ্যে তো আলুর দাম এমনই।’’
প্রশাসনের হিসেব বলছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় জনসংখ্যা ৫৯ লক্ষ (২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী)। গত দু’বছরে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ৬৪ লক্ষ। জেলায় আলুর গড় চাহিদা ২ লক্ষ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর জেলায় আলু উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন। সরকারি তথ্য বলছে, আলুর দামের উপর সরকার ঠিকঠাক নজর দিলে সহজেই এই দামে রাশ টানা সম্ভব। রবিবারও ঘাটালের কুঠিবাজার,পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ড বাজার, মেদিনীপুর,ঝাড়গ্রাম খড়্গপুর-সবর্ত্রই ১৮-২০ টাকা কিলোগ্রাম দরে আলু বিক্রি হয়েছে।
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের খবর, জেলার হিমঘরগুলিতে এখনও প্রায় ৩০ শতাংশ আলু মজুত রয়েছে। আবার ক’দিন বাদেই জেলায় নতুন আলুও উঠতে শুরু করবে। স্বাভাবিকভাবেই চাহিদা অনুযায়ী আলু পযার্প্ত রয়েছে। এছাড়াও চলতি মাসে হিমঘর থেকে সমস্ত আলু বের করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সরকারি তথ্য বলছে, জেলার হিমঘরগুলিতে এখনও যা আলু রয়েছে, তাতে জেলায় ১৪ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রির পর বাকি আলু একাধিক জেলাতে পাঠানো সম্ভব। তারপর সেই সমস্যা মিটছে না কেন, প্রশ্ন উঠছে সেটা নিয়েই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও ফঁড়েদের কারসাজিতেই খুচরো আলু এত চড়া দামে বিকোচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী হিমঘর থেকে সরকারি উদ্যোগে আলু বের করে তা বাজারে পাঠালেই ছবিটা অনেকটা বদলে যাবে।’’
ছবিটা বদলায় কত দিনে, এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy