ইভিএম পরীক্ষা করছেন ভোটকর্মীরা। শুক্রবার কাঁথিতে। ছবি: সোহম গুহ।
তৃণমূলের শক্তঘাটি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সদর তমলুক, অধিকারী পরিবারের গড় কাঁথি আর এগরা— তিন পুরসভার ভোট ঘিরে রাজনৈতিক মহলে ব্যপক জল্পনা। বিরোধীদের আশঙ্কা ভোট পর্ব নির্বিঘ্ন হতে দেবে না শাসকদল। প্রশাসনের তৎপরতা যে কার্যত ‘লোক দেখানো’ তা বারবার বলছেন তারা। এ দিকে নির্বাচনে তমলুক-সহ সর্বত্রই তৃণমূল বিক্ষুদ্ধরা নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করায় দল যথেষ্ট অস্বস্তিতে।
২০ আসনের তমলুক পুরসভায় এবার নির্বাচনে লড়াই করছেন মোট ৮৫ জন প্রার্থী। এর মধ্যে তৃণমূল এককভাবে সব আসনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিয়ে লড়াই করছে। অন্যদিকে বামফ্রন্ট ১৬ টি আসনে প্রতীক দিয়ে লড়াই করছে। আর বাকি চারটি আসনে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করছে। বিজেপিও ১৬ টি আসনে দলীয় প্রতীকে লড়ছে, তিনটি আসনে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করছে। কংগ্রেস ১০ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। নির্বাচনে নির্দল প্রার্থীর সংখ্যা ২০ জন। এর মধ্যে পুরসভার অন্তত ১৪ টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের জয়ের পথে প্রধান কাঁটা নির্দল প্রার্থীরা। সে সব কাঁটা সরাতে ইতিমধ্যেই তিনজনকে দল বিরোধী কাজের অভিযোগে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। তবু আশঙ্কার মেঘ কাটেনি।
এগরা পুরসভার ভোট নিয়ে দুশ্চিন্তায় সব দল। এমনকী কাঁটা রয়েছে তৃণমূলের জয় সম্ভাবনাতেও। আর সেই কাঁটা বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা সরাসরি বলেই ফেলেন, ‘‘তৃণমূলের জয় যদি সহজ হত, যদি স্বাভাবিক ভাবেই জিততে পারতাম, তাহলে এতবার ছুটে আসতে হত না শীর্ষ নেতাদের।’’ তাঁর আশঙ্কা, তৃণমূলের ভিতরের কোন্দল সামনে না এলেও ভোটে তার প্রভাব পড়বে। তবে এ দাবি মানতে নারাজ এগরা পুরভোটে তৃণমূলের আহ্বায়ক বিধায়ক সমরেশ দাস। তিনি আশাবাদী, ‘‘যতই অপপ্রচার হোক আমরাই জয়ী হব।’’
অন্যদিকে বামেরাও আশাবাদী। তৃণমূলের অন্যায় ও দুর্নীতিই তাদের ভোট বৈতরণী পার করে দেবে। এগরা পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সুব্রত পণ্ডা বলেন ‘‘তৃণমূলের অন্যায় ও দলবাজির জন্যই মানুষ আমাদের সমর্থন করবেন। তাছাড়া ওদের দলের লোকেরাই তো ভেতরে ভেতরে অন্য খেলা খেলছে।’’ ‘আমরাও ভাল ফল করব’ বলে জানিয়েছেন কংগ্রেসের জেলা সাধারণ সম্পাদক মানস কর মহাপাত্র। এ দিকে ভিতরে ভিতরে নাকি ভোটাররা সকলেই তৈরি, তাঁরা সব ভোট দেবেন বিজেপি-কেই— অন্তত তেমনটাই দাবি দলের শহর সভাপতি অশোক প্রধানের। তবে সকলেরই আশঙ্কা শাসকদল ভোটের দিন বাইরে থেকে লোক এনে বুথ দখল করতে পারে। যদিও এগরা থানার পুলিশ জানিয়েছে প্রায় ২৫০ রাজ্য পুলিশ এবং এক ব্যাটেলিয়ন আধাসামরিক বাহিনী এসেছে শহরে। পুরভোটের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পূর্ণ জানিয়ে এগরার মহকুমাশাসক অসীম বিশ্বাস শুক্রবার বলেন ‘‘বিরোধীদের বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি। আশাকরি ভোট পর্ব নির্বিঘ্নে মিটবে।’’
কাঁথিতে পুলিশ কর্মীদের দায়িত্ব বণ্টন।
একই পরিস্থিতি কাঁথিতেও। কাঁথি মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের দফতরে চালু করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। শুক্রবার সেখান থেকেই ১৯টি ওয়ার্ডের ৫১টি বুথে ভোটকর্মী পাঠানোর কাজ শুরু হয়। গোটা শহরকে নিরাপত্তা বাহিনীর মোড়কে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন রাস্তায় শুক্রবার সকাল থেকেই রুটমার্চ করেছে পুলিশ, ঘুরেছে বিশেষ টহলদারি গাড়ি। বাইরে থেকে অতিরিক্ত ৩২৫ জন পুলিশ অফিসার ও কর্মীকে আনা হয়েছে বলে খবর। মহকুমাশাসক সরিৎ ভট্টাচার্য জানান, “১৯টি ওয়ার্ডের ৫১টি বুথকে ৫টি সেক্টরে ভাগ করে প্রতি সেক্টরেরঅতিরিক্ত ভোট কর্মী ও পুলিশ বাহিনী মজুদ রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। প্রতিটি বুথে ২জন করে সশস্ত্র পুলিশ কর্মী থাকছেন। একটি চত্বরে দুটি বা তিনটি করে বুথ থাকলে তিন জন করে পুলিশকর্মী দেওয়া হয়েছে।’’
এ দিকে কাঁথি বিরোধী শূন্য করার ডাক দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই মতো ইতিমধ্যেই বিনা লড়াইয়ে জিতে গিয়েছেন দিব্যন্দু অধিকারী ও সৌমেন্দু অধিকারী। ফলে অন্যান্য ওয়ার্ডের বিরোধী প্রার্থীরা যথেষ্ট আতঙ্কিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy