Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Jhargram

তছরুপ, গ্রেফতার অধ্যাপিকা

২০১২ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের অগস্ট পর্যন্ত সুতপা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা ছিলেন। প্রশাসক অসীমকুমার বেরা সুতপাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষার পদ থেকে সরিয়ে দেন। ২০১৬ সালের ৩০ অগস্ট ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান বিনোদ চৌধুরী। তিনি কলেজের তহবিলের প্রচুর অসঙ্গতি লক্ষ্য করেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

কলেজের উন্নয়নে বরাদ্দ সাড়ে ৭৪ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগে প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত সুতপা ঘোষ এখন ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি ব্লকের কাপগাড়ি সেবাভারতী মহাবিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদ্যার অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।

বছর তিনেক আগে বছর পঞ্চাশের সুতপার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। শনিবার সকালে ঝাড়গ্রাম শহরের রঘুনাথপুরের ভাড়া বাড়ি থেকে সুতপাকে গ্রেফতার করা হয়। ঝাড়গ্রাম সিজেএম আদালতে তোলা হলে জামিনের আর্জি নাকচ করে ১২ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। তবে সুতপা ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়ায় পুলিশি পাহারায় তাঁকে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিনোদ চৌধুরী বলেন, ‘‘সাড়ে ৭৪ লক্ষ টাকার হদিশ না পাওয়ায় গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তক্রমে সুতপার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করা হয়।’’ অভিযুক্তের আইনজীবী কৌশিক সিংহের অবশ্য দাবি, ‘‘ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কলেজ তহবিলের টাকা এককভাবে অধ্যক্ষ তুলতে পারেন না। প্রকৃত ঘটনা ও আসল অভিযুক্তদের আড়াল করতেই সুতপাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ এ দিন আদালত চত্বরে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে সুতপাও দাবি করেন, ‘‘আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে।’’

২০১২ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের অগস্ট পর্যন্ত সুতপা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা ছিলেন। তারপর কলেজের গভর্নিং বডির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কলেজে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। প্রশাসক অসীমকুমার বেরা সুতপাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষার পদ থেকে সরিয়ে দেন। ২০১৬ সালের ৩০ অগস্ট ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান বিনোদ চৌধুরী। তিনি কলেজের তহবিলের প্রচুর অসঙ্গতি লক্ষ্য করেন। ২০১৭ সালে কলেজে নতুন গভর্নিং বডি গঠিত হয়। হিসাবের নথিতে দেখা যায়, সুতপা তিন দফায় ব্যাঙ্ক থেকে মোট ৫৭ লক্ষ টাকা তুলেছেন। আর বাকি টাকা তিনি কলেজের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করেছেন। সব মিলিয়ে সাড়ে ৭৪ লক্ষ টাকা সুতপা কী জন্য খরচ করেছেন, তার কোনও নথিও কলেজে নেই।

কলেজের গভর্নিং বডি বার বার চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা চাইলেও সুতপা জবাব দেননি বলে অভিযোগ। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তক্রমে সুতপাকে সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু সুতপা সাসপেনশনের চিঠি নিতে অস্বীকার করেন। ঝাড়গ্রাম দেওয়ানি আদালতে সাসপেনশনের বিরুদ্ধে মামলাও করেন। আদালত সাসপেনশনে স্থগিতাদেশ দেওয়ায় সুতপা অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে কাজ করতে থাকেন। নিয়মিত বেতনও পান তিনি।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ সুতপার বিরুদ্ধে জামবনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ ও সরকারি টাকা তছরুপের ধারায় মামলা রুজু হয়। কিন্তু সুতপাকে গ্রেফতার করা হয়নি। বছর দু’য়েক আগে তছরুপের মামলায় সুতপার আগাম জামিনের আবেদন নাকচ করে দেয় হাইকোর্ট। সম্প্রতি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে ঝাড়গ্রাম আদালতে আবেদন করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। আদালত তদন্তকারী অফিসারকে ডেকে পাঠিয়ে গ্রেফতার না করার কারণ জানতে চায়। পুলিশের দাবি, এতদিন সুতপাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

উল্লেখ্য, সুতপার বিরুদ্ধে যখন তছরুপের অভিযোগ ওঠে, তখন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা। সুকুমার সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram Professor Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE