Advertisement
০৬ মে ২০২৪
বেপরোয়া বালির লরিতে পিষ্ট হয়ে কৃষকের মৃত্যু

দেহ আটকে বিক্ষোভ মানিকচকে

দুর্ঘটনা আগেও ঘটেছে। দিন দশেক আগে সর্ডিহা এলাকায় বেহাল রাস্তায় মোটর বাইক উল্টে দুর্ঘটনায় জখম হয় একটি শিশু। ওই দিনও বালি গাড়ির যাতায়াত বন্ধ করে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে ন’ঘন্টা সর্ডিহায় অবরোধ হয়েছিল। দু’বারই প্রশাসন রাস্তা সংস্কারের আশ্বাস দেয়। তবে কাজ কিছুই হয়নি।

ধ্বস্ত: ভারী লরির চাপে ভেঙে গর্ত হয়ে গিয়েছে রাস্তা।

ধ্বস্ত: ভারী লরির চাপে ভেঙে গর্ত হয়ে গিয়েছে রাস্তা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৭ ০১:৪৪
Share: Save:

বালি বোঝাই লরির বেপরোয়া গতি কেড়ে নিল এক কৃষকের প্রাণ। বুধবার সকালে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ায় এই দুর্ঘটনার পর মৃতদেহ আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয়রা। ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি বালির লরি। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের কাছ থেকে মৃতদেহ লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, পুলিশি মদতেই বালির লরির এই বাড়বাড়ন্ত বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। মাস দেড়েক আগেই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে লরি আটকে ১২ ঘণ্টা অবরোধ হয়েছিল মানিকপাড়ায়। দাবি ছিল, বালি খাদানের মালিকদের টাকায় সারাতে হবে রাস্তা। কারণ ভেজা বালি নিয়ে যেতে গিয়ে জল ফেলে রাস্তার ক্ষতি করছে লরিগুলি। তা ছাড়া, ভারী লরি যাতায়াতের ফলে ভেঙে যায় রাস্তা। তার উপর বেপরোয়া গতি— বাসিন্দারা বারবার আশঙ্কা করেছেন বড় দুর্ঘটনার।

দুর্ঘটনা আগেও ঘটেছে। দিন দশেক আগে সর্ডিহা এলাকায় বেহাল রাস্তায় মোটর বাইক উল্টে দুর্ঘটনায় জখম হয় একটি শিশু। ওই দিনও বালি গাড়ির যাতায়াত বন্ধ করে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে ন’ঘন্টা সর্ডিহায় অবরোধ হয়েছিল। দু’বারই প্রশাসন রাস্তা সংস্কারের আশ্বাস দেয়। তবে কাজ কিছুই হয়নি। উল্টে প্রতিদিন বালি বোঝাই লরির সংখ্যা বাড়ছে বলে অভিযোগ।


দুর্ঘটনার পর উত্তেজিত জনতার বিক্ষোভ।

এ দিন সকালে স্থানীয় ডিহিবাদিনা গ্রামের চাষি সহদেব সিংহ (৫৪) সাইকেলে আনাজ নিয়ে মানিকপাড়া বাজারে বিক্রি করতে যাচ্ছিলেন। সকাল ৭টা নাগাদ বিবেকানন্দ মোড়ের কাছে উল্টোদিক থেকে আসা একটি বালি বোঝাই একটি লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁকে ধাক্কা মারে। ছিটকে পড়ে ওই লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে যান সহদেববাবু। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

এরপরই লরিটি সোজা চলে যায় মানিকপাড়া পুলিশ বিট হাউসে। তাতেই আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা। মানিকপাড়া বিট হাউসের পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে। ঝাড়গ্রাম থেকে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। পুলিশ অবশ্য লাঠি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এই ঘটনার পরে বালি লরিগুলি চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আর অর্জুন বুধবার বলেন, “দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে।” পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগও খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

এলাকাবাসীর বক্তব্য, চুবকার চিতলবনি এলাকায় কংসাবতীর চর থেকে যথেচ্ছ বালি তোলায় চুবকার আটটি মৌজার কয়েক হাজার চাষজমি নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন ‘ওভারলোডেড’ প্রায় সাত-আটশো লরি যাতায়াতে চিতলবনি থেকে মানিকপাড়া পর্যন্ত পিচ রাস্তার দফারফা। বিশেষত বল্লা থেকে সর্ডিহা হয়ে মানিকপাড়া অবধি রাস্তায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। একটি কালভার্ট-এ ফাটল ধরেছে। বেশিরভাগ বাস রুট বন্ধ হয়ে গিয়েছে খারাপ রাস্তার জন্য। ওই রাস্তা দিয়েই সাইকেলে বা হেঁটে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়ারা যাতায়াত করে। মোটর বাইক নিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন বাসিন্দারা।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের মদতে ২৪ ঘণ্টা যথেচ্ছ ভাবে অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই লরি যাতায়াত করছে ওই রাস্তা দিয়ে। তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম ব্লক সভাপতি অনিল মণ্ডল অবশ্য বলেন, “বালি খাদান ও পরিবহণের অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। শাসকদল কী করবে! তবে রাস্তার অবস্থা সত্যিই শোচনীয়। তাই দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছেই।”

নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road accident Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE