Advertisement
E-Paper

বছরে ৫২ বিয়ে রুখেও কপালে ভাঁজ প্রশাসনের

সরকার আশ্বাস দিয়েছিল অর্থ সাহায্যের। পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল, মেয়ে বোঝা নয়, তাকে লেখাপড়া শেখানো দরকার। তবু বিয়ে ঠিক হয়েছিল ওদের। বয়স আঠারো পেরনোর আগেই।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৫০

সরকার আশ্বাস দিয়েছিল অর্থ সাহায্যের। পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল, মেয়ে বোঝা নয়, তাকে লেখাপড়া শেখানো দরকার। তবু বিয়ে ঠিক হয়েছিল ওদের। বয়স আঠারো পেরনোর আগেই।

প্রশাসনের হিসাব বলছে নয় নয় করে গত এক বছরে শুধুমাত্র ঘাটাল মহকুমায় ৫২টি নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। তাদের সকলেরই নাম লেখানো ছিল কন্যাশ্রী প্রকল্পে। তবে বেসরকারি মতে, এর দ্বিগুণের বেশি মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে নাবালিকা বয়সেই। আটকাতে পারেনি প্রশাসন। আবার যাদের বিয়ে রোখা গিয়েছিল তাদের অনেককে পরে লুকিয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন নজিরও বিরল নয়।

কন্যাশ্রী একান্তই রাজ্যের নিজস্ব প্রকল্প, যা কেন্দ্রের কাছে প্রশংসা পেয়েছে। কিন্তু তারপরেও একটি মহকুমায় এক বছরে এতগুলি বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রাশাসনের এক কর্তাই বলে ফেললেন, এতে প্রশ্ন উঠছে প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে। জেলাশাসক জগদীশ প্রসাদ মিনা অবশ্য বলেন, “প্রচার চলছে জোরকদমে। আরও বাড়ানো হবে।” ঘাটাল মহকুমায় চাইল্ড লাইনের এক কর্মী প্রদীপ শাসমল বলেন, “আমরা পুলিশ-প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়েই প্রচার করি। কিন্তু নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা কমানো যায়নি। তবে হাল ছাড়িনি। প্রচার চলছেই।”

তবে আধিকারিকদের অনেকেই বলছেন, কন্যাশ্রীর টাকা দিয়ে বা প্রচার করে বিয়ে বন্ধ করা যাবে না। শাস্তিও দরকার। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের সাফ কথা, “বিয়ে বন্ধ করতে গিয়ে মুচলেকা লিখিয়েই আমরা চলে আসি। থানায় মামলাও কম হয়। এ বার মামলার পথেই এগোতে হবে।”

নজরে পাঁচ

•ঘাটাল ১০

•দাসপুর-১ ১৭

•দাসপুর-২ ১৩

• চন্দ্রকোনা-১ ৫

• চন্দ্রকোনা-২ ৭

*কোন ব্লকে রোখা গিয়েছে ক’জনের বিয়ে

#হিসেব গত একবছরের

নাবালিকা বিয়ে বন্ধ এবং স্কুল ছুট মেয়েদের পড়াশোনায় ফেরানোর জন্যই ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রী প্রকল্পটি চালু করেছিলেন। দু’টি ভাগে প্রকল্পের টাকা পাওয়া যায়। প্রথম ক্ষেত্রে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা বছরে ৭৫০ টাকা করে পায়। আর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরেও যদি কোনও মেয়ে বিয়ে না করে কলেজে ভর্তি হয়, তখন তাঁর পড়াশোনার খরচের জন্য একাকালীন ২৫ হাজার করে দেওয়া হয়। বাৎসরিক এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়ের সব পরিবারের মেয়েরাই এই প্রকল্পের আওতায় আসতে পারে।

কিন্তু তার পরেও তেমন সাড়া মিলছে না। এমনকী পশ্চিম মেদিনীপুর প্রশাসনের চিন্তা বাড়িয়েছে আরও একটি প্রবণতা। দেখা গিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পাত্রী নিজেই বিয়েতে গররাজি, নানা ভাবে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু ঘাটাল মহকুমায় এখনও পর্যন্ত এমন উদাহরণ তৈরি হয়নি। যাদের বিয়ে রোখা গিয়েছে তাদের ৯০ শতাংশই শেষ দিন পর্যন্ত কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা নিয়েছে।

নাবালিকা বিয়ে বন্ধের জন্য একযোগে প্রচার চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও চাইল্ড লাইন। এমনকী পুরোহিত থেকে নাপিতদের নিয়ে শিবিরও হয়েছে। স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, পঞ্চায়েত এলাকায় ফ্লেক্স টাঙিয়েও দেওয়া হয়েছে। ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ বিকাশ কর বললেন, “মূলত সচেতনতার অভাবেই বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। মেয়ে একটু বড় হলেই বিয়ে দিতে পারলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচব-এই মানসিকতা থেকেই বাল্য বিবাহের সংখ্যা বাড়ছে। এই মনোভাব দূর করতে প্রচারই একমাত্র হাতিয়ার।”

Kanyashree Prakalpa Minor Marriage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy