চলছে বায়না নেওয়া। নন্দকুমারের যাত্রাপাড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
গাঁদা-রজনীগন্ধার গন্ধে ভোর থেকেই ম-ম করছিল এলাকাটা। ঘরের ভিতরে সাজানো নায়ক-নায়িকাদের রঙিন পোস্টার। আর অতিথি আপ্যায়ণে তুলে দেওয়া হচ্ছে মিষ্টির প্যাকেট। বুধবার রথের দিনে এমন ছবিরই দেখা মিলল পূর্ব মেদিনীপুরের ‘চিৎপুর’ নন্দকুমারের যাত্রাপাড়ায়।
হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে নন্দকুমারের শ্রীধরপুর হাইরোডে চৌরাস্তার মোড়ে রথযাত্রার দিনে সকাল থেকেই ভিড় সারি দিয়ে থাকা যাত্রাদলের বুকিং সেন্টারে। হাজির হয়েছিলেন দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা থেকে আসা বিভিন্ন গ্রামের পুজো উদ্যোক্তা আর ক্লাবের সদস্যরা। রথের দিনের তো শুরু হয়ে যায় যাত্রাপালার বুকিং। আর অতিথিদের জন্য সামান্য আয়োজন না করলে সম্মান থাকে!
কলকাতার চিৎপুরের মত নন্দকুমারের এই যাত্রাপাড়ার নাম ছড়িয়েছে বহু দূরে। একসময় পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকার যাত্রা উদ্যোক্তারা কলকাতার নামীদামি যাত্রাদলের পালা অভিনয় করাতে যাত্রাপালা বুকিং করতে যেত কলকাতার চিৎপুরের যাত্রা পাড়ায়। সেই ছবি বদলে গিয়েছে গত কয়েক বছর ধরে। নন্দকুমার যাত্রাপাড়ায় কলকাতার নামী যাত্রাপালা-সহ জেলার বিভিন্ন নামী যাত্রাদলগুলির বুকিং করা হয়ে থাকে। রয়েছে প্রায় ২২ টি যাত্রা বুকিং সেন্টার। এখন যাত্রাদল বুকিং করার জন্য নন্দকুমারের এই পাড়ায় ভিড় লেগেই থাকে। প্রতি বছর রথযাত্রার দিনে পালা বুকিং শুরু। তাই এই দিনে যাত্রাপালা উদ্যোক্তা বা নায়েকদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করে যাত্রাদলগুলি।
নন্দকুমারে যাত্রাপালা বুকিং করতে এসেছিলেন হলদিয়ার চাউলখোলা এলাকার বাসিন্দা অলকেশ মাইতি। অলকেশবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের বাড়ির লক্ষ্মীপুজোয় যাত্রাপালার জন্য এলাকার মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন। রথযাত্রার দিনে যাত্রাপালা বুকিং করতে এলে টাকায় কিছুটা ছাড় পাওয়া যায়। তাই এই সময়েই আসি।’’ এসেছিলেন হাওড়া জেলার শ্যামপুরের মরশাল গ্রামের রণজিৎ মাজি। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতায় চিৎপুরে গিয়ে দেখেছি একই যাত্রাপালা করানোর জন্য বেশি টাকা চাওয়া হয়। ২০ বছর ধরে এখানেই পালা বুকিং করতে আসছি।’’
কিন্তু যাত্রাপালার কি কদর আছে?
নন্দকুমারের যাত্রাপাড়ার কর্মী অক্ষয় মাইতি, মান্তু অধিকারীর দাবি, ‘‘বাড়িতে বসে টেলিভিশনে সিনেমা, সিরিয়াল দেখার সুযোগ আসার ফলে মাঝে কয়েক বছর যাত্রা দেখার আগ্রহ কমেছিল ঠিকই। কিন্তু এখন আবার চাহিদা বাড়ছে।’’ তিনি জানালেন, ১৫ হাজার টাকা থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যাত্রাপালার দল রয়েছে। যাত্রাদল ও যাত্রাবুকিং সেন্টার মালিকদের সংগঠন তাম্রলিপ্ত যাত্রা পরিষদের সম্পাদক তথা গন্ধর্ব অপেরার মালিক শেখ সাজাহান বলেন, ‘‘ সিরিয়ালের একঘেয়েমিতে অনেকেই এখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ছে। আর সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠান হওয়ায় একবার কাছ থেকে দেখার পর তাঁদের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। সেই তুলনায় যাত্রায় নানা স্বাদের অভিনয় দেখার জন্য অনেকেই ফের আগ্রহ দেখাচ্ছে। ’’
কথার ফাঁকেই নতুন এক দল অতিথি ঢুকে পড়লেন ঘরে। নতুন যাত্রাপালার বায়না করতে। কথা থেমে গেল মাঝপথেই। পড়ে রইল শুধু ব্যস্ততার ছবিটা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy