Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ব্যস্ত রাস্তায় বেলাগাম গাড়ি, হুঁশ নেই কারও

রেলশহরে প্রবেশপথ এই রাস্তা দিনে কয়েক হাজার গাড়ি চলাচল করে। ব্যস্ত সময়ে রাস্তায় পথচারীর সংখ্যাও থাকে বেশি। সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ কর্মসূচির প্রচারে পথবিধি মেনে গাড়ি চালানোর আবেদন জানিয়ে প্রচার চলছে। দুর্ঘটনা রুখতে পুলিশকে কড়া হওয়ার কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

 লাগামহীন: ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় রাস্তায় নিয়ন্ত্রণে থাকে না গাড়ির গতি। নিজস্ব চিত্র

লাগামহীন: ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় রাস্তায় নিয়ন্ত্রণে থাকে না গাড়ির গতি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৭ ০১:১৬
Share: Save:

একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। আর দুর্ঘটনা ঠেকাতে দু’টি স্পিড ব্রেকার বসিয়ে দায় সেরেছে প্রশাসন। পথবাতি, ট্রাফিক পুলিশ— নেই কিছুই। খড়্গপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ ইন্দা-চৌরঙ্গী রাস্তা যেন দুর্ঘটনার আঁতুড় ঘর! হুঁশ নেই কারও।

রেলশহরে প্রবেশপথ এই রাস্তা দিনে কয়েক হাজার গাড়ি চলাচল করে। ব্যস্ত সময়ে রাস্তায় পথচারীর সংখ্যাও থাকে বেশি। সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ কর্মসূচির প্রচারে পথবিধি মেনে গাড়ি চালানোর আবেদন জানিয়ে প্রচার চলছে। দুর্ঘটনা রুখতে পুলিশকে কড়া হওয়ার কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তারপরেও খড়্গপুরের এই রাস্তায় বেলাগাম যানের ঠেলায় প্রায়ই দুর্ঘটনার মুখে পড়েন পথচারীরা। রাস্তার খড়্গপুর কলেজ ও নিউটাউনের কাছে স্পিড ব্রেকার বসিয়েই দায় সেরেছে প্রশাসন। রাস্তার আর কোথাও অবশ্য স্পিড ব্রেকার বসানোর বালাই নেই।

অনিয়মের এখানেই শেষ নয়। রাস্তার দু’দিকের কিছুটা অংশ ছেড়ে দু’টি সারিতে বসানো হয়েছে গার্ডরেল। দু’টি গার্ডরেলের মাঝের অল্প জায়গায় ঢুকে বাস, বড় গাড়ি আটকে পড়ার ঘটনাও ঘটছে। আর গার্ডরেলের সারির দু’প্রান্ত দিয়ে রুদ্ধশ্বাসে ছুটছে গাড়ি। দাপট সবচেয়ে বেশি বাইকের। রাত হলেই বাইকের দাপাদাপিতে আতঙ্কিত স্থানীয়রা। রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় দেখার কেউ নেই।

গত ১০ এপ্রিল এই রাস্তায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল মালঞ্চর বাসিন্দা বছর বত্রিশের মানসী দাসের। স্বামী ও মেয়ের সঙ্গে মোটরবাইকে সারদাপল্লিতে বাপের বাড়ি যাওয়ার সময় রাস্তা পার হতে গেলেই পিক-আপ ভ্যানের ধাক্কায় মৃত্যু হয় মানসীদেবীর। এর ছ’দিন পরেই ফের গত ১৬ এপ্রিল প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে এই রাস্তাতেই প্রাণ যায় খড়্গপুর কলেজের এক শিক্ষাকর্মীর। মৃত বছর সাতান্নর শেখরচন্দ্র ধর রায় (৫৭) ইন্দার সারদাপল্লির বাসিন্দা। রাস্তা পেরনোর সময় বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয় তাঁর। পরপর দুর্ঘটনার পরে ইন্দা-চৌরঙ্গী রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের দাবিতে সরব হন স্থানীয়রা। সেই সময়ই রাস্তায় দু’টি স্পিড ব্রেকার বসানো হয়। ব্যস, কাজ বলতে ওইটুকুই।

ইন্দার বাসিন্দা গৃহবধূ মৌসুমী ত্রিপাঠী বলেন, “দুর্ঘটনা বাড়তে থাকায় ইন্দার এই রাস্তায় হাঁটাচলা করতে ভয় লাগে। ট্রাফিক ব্যবস্থার কোনও উন্নতি চোখে পড়েনি। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে যানবাহন ছুটলেও দেখার কেউ নেই।”

রাস্তায় চৌরঙ্গীর পর থেকে আনন্দনগর পর্যন্ত রাস্তার একদিকে পথবাতি না থাকায় অন্ধকারে বিপত্তি আরও বাড়ছে। আলো-আঁধারি রাস্তায় গার্ডরেলে প্রায়ই বাইকের ধাক্কা মারার ঘটনা ঘটছে। খড়্গপুর কলেজের শিক্ষাকর্মী শহরের বারবেটিয়ার বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা ঘোষ মিত্র বলছিলেন, “আগে স্কুটি নিয়ে কলেজ আসতাম। এই রাস্তা যে ভাবে দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠেছে তাতে স্কুটি ছেড়ে বাসে করেই আসি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ গা ঘেঁষে গাড়ি চলে যায়। পরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকলে চোখের সামনে আরও দুর্ঘটনা দেখতে হবে।”

এ বিষয়ে খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘পুলিশের পক্ষ থেকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা হয়েছে। রাস্তায় পথবাতি বসানো ও রাস্তা সম্প্রসারণ করে ফুটপাথ তৈরির জন্য পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। কাজ হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Reckless Driving Accident খড়্গপুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE