Advertisement
০৮ মে ২০২৪

ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু ঠেকাতে গবেষণা

সাধারণত বছরে যেখানে এক-দু’জনের মৃত্যু হয়, সেখানে এ বার জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছ’মাসেই মৃতের সংখ্যা সাত। পশ্চিম মেদিনীপুরে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ এ বার বেশি। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৬ ০৫:৪৫
Share: Save:

সাধারণত বছরে যেখানে এক-দু’জনের মৃত্যু হয়, সেখানে এ বার জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছ’মাসেই মৃতের সংখ্যা সাত। পশ্চিম মেদিনীপুরে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ এ বার বেশি। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।

ম্যালেরিয়ায় মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ খুঁজতেই গবেষণা শুরু হচ্ছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। গত শুক্রবার এর আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে। গবেষণার জন্য ইতিমধ্যে তাইল্যান্ডের ‘মহিদল অক্সফোর্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন রিসার্চ ইউনিট’ (মরু)-এর সঙ্গে মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। যৌথ উদ্যোগেই চলবে গবেষণা।

গবেষণার জন্য প্রাথমিকভাবে ১০ শয্যার (৫ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলা) ম্যালেরিয়া বিভাগও খোলা হয়েছে। সাধারণ মেডিসিন বিভাগের পাশে রয়েছে এই বিভাগ। সেখানে কৃপাসিন্ধু গাঁতাইত, পার্থসারথী শতপথি, তারাপদ ঘোষের মতো চিকিৎসকেরা গবেষণা করবেন। কৃপাসিন্ধুবাবুর কথায়, ‘‘এরপর থেকে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী এলেই গবেষণার জন্য ওই বিশেষ বিভাগে ভর্তি করা হবে। চিকিৎসার পাশাপাশি চলবে গবেষণাও। ম্যালেরিয়াতে মৃত্যুর হার কমাতেই এই উদ্যোগ।’’ তিনি আরও জানান, পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ম্যালেরিয়ার উপদ্রব রয়েছে। তাই ভারতের রৌরকেল্লা, আগরতলার পর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে এই গবেষণার উপর জোর দিয়েছে মরু।

অনেক ম্যালেরিয়ার ওষুধই এখন প্রতিরোধী হয়ে গিয়েছে। একই ওষুধ বারবার ব্যবহার করার ফলে ম্যালেরিয়ার পরজীবীরাও নিজেদের বাঁচাতে জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলছে বলেই চিকিৎসকদের অনুমান। কী সেই পরিবর্তন, কী ভাবে সেই পরিবর্তন ঘটছে, সেই পরিবর্তনের হাত থেকে বাঁচতে হলে ওষুধে কী পরিবর্তন জরুরি, সেই সব বিষয়েই চলবে গবেষণা।

আগে ম্যালেরিয়া হানা দিত মূলত ঝাড়গ্রাম মহকুমায়। মশাবাহিত এই রোগের সব থেকে বেশি প্রকোপ দেখা দিত বিনপুর ২ ব্লক অর্থাৎ বেলপাহাড়িতে। এখন জেলার সর্বত্র কম-বেশি এই রোগ ছড়াচ্ছে। মেদিনীপুর সদর, শালবনি, গড়বেতা-২ অর্থাৎ গোয়ালতোড়, কেশপুরের মতো এলাকাতেও ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ২০১১ সালে জেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মাত্র এক জনের মৃত্যু হয়েছিল। পরের বছর মারা যান দু’জন। তার পরের বছর এক জন। কিন্তু ২০১৪ সালে ম্যালেরিয়ায় ১৮ জনের মৃত্যু ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। গত বছরও মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের।

এই পরিস্থিতিতে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার জন্য বিশেষ গবেষণা শুরু হওয়ায় ভবিষ্যতে মৃত্যুর হার কমানো যাবে বলেই আশা। তাছাড়া, গবেষণার জন্য নতুন বিভাগ খোলায় চিকিৎসার গুণগত মানের উন্নতি ঘটবে বলেও আশা। এই বিভাগে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য যেমন মেডিসিনের চিকিৎসক থাকবেন, তেমনই থাকবেন শিশু বিশেষজ্ঞ। বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই চলবে গবেষণার কাজ। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, ‘‘ম্যালেরিয়ার জীবাণু নিজেকে বাঁচাতে জিনের পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলছে। কিন্তু এখনও ওষুধের কম্বিনেশনের পরিবর্তন হয়নি। এটাও সমস্যা। সব দিক খতিয়ে দেখে ওষুধের পরিবর্তন না ঘটালে এর থেকে বাঁচার উপায় নেই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

malaria research
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE