Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Class Room

স্কুল বন্ধ, পড়াশোনা চালু রাখতে গাছতলাতেই ক্লাস

স্কুল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ক্ষুদে পড়ুয়াদের নিয়ে এ ভাবে‌ ক্লাস কেন?

ধলহারা গ্রামে গাছতলায় চলছে পাঠদান।

ধলহারা গ্রামে গাছতলায় চলছে পাঠদান। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:০৪
Share: Save:

করোনা পরিস্থিতির জেরে প্রাথমিক স্কুলের দরজা বন্ধ গত প্রায় দু’বছর ধরে। পড়ানো বন্ধ থাকায় শিশুদের লেখাপড়া নিয়ে উদ্বেগে শিক্ষক ও অভিভাবকরা। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে গ্রামের গাছতলাতেই ক্লাস নেওয়া শুরু করে দিয়ে‌ছেন প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ধলহরা হিন্দু বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের উদ্যোগে এভাবেই পড়াশোনা শুরু হয়ে‌ছে চলতি মাসের প্রথম থেকে। শিশু থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ৩১৭ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে পালা করে ক্লাস চলছে। সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিদিন এক একটি ক্লাসের পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস চলছে আমবাগানে। আমগাছ তলায় আসন পেতে ওই ক্লাস চলে। বৃহস্পতিবার স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্লাস ছিল। ক্লাসের ৭৭ জন পড়ুয়ার মধ্যে হাজির ছিল ৫২ জন। ক্লাস নিতে এসেছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভয়চরণ সামন্ত, সহ-শিক্ষক সতীশ সাউ, মোহন মাজি, অনিতা প্রধান দিন্দা এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক উৎপল বেরা। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বাংলা, ইংরাজি, অঙ্ক সহ বিভিন্ন বিষষের ক্লাস হয়।

স্কুল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ক্ষুদে পড়ুয়াদের নিয়ে এ ভাবে‌ ক্লাস কেন?

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভয়চরণ সামন্ত বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির জন্য প্রাথমিক স্কুল বন্ধ থাকায় শিশু পড়ুয়াদের পড়াশোনার খুবই ক্ষতি হচ্ছে। অনেক পড়ুয়া পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তাদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। অভিভাবকরা আমাদের কাছে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করেন স্যার স্কুল কবে খুলবে। মূলত অভিভাবকদের আগ্রহেই আমরা স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে পড়াশোনা চালু করেছি।এতে স্কুলের বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষিকরাও ছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক সহযোগিতা করছেন।’’ তিনি জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী স্কুলে পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস করায় নিষেধ রয়েছে। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে স্কুলের কাছে এই আমবাগানে আসন পেতে ক্লাস করা হচ্ছে।করোনা সতর্কতা বিধি মেনেই শিক্ষক থেকে পড়ুয়া সবাই মাস্ক পরে আসছে। প্রতিটি ক্লাসের অধিকাংশ পড়ুয়াই হাজির হচ্ছে।’’

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তথা ভিলেজ এডুকেশন কমিটির সভাপতি হরিপদ মণ্ডলের যুক্তি, ‘‘করোনা পরিস্থিতির জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুদের পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে। অভিভাবকদের তরফে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনুরোধ করেছিলাম করোনা বিধি মেনে যাতে পড়ুয়াদের পড়াশোনা চালু করা যায়। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা এগিয়ে আসায় বিকল্প উপায়ে পড়ুয়াদের পড়াশোনা চালু করা গিয়েছে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের যৌথ উদ্যোগেই এভাবে পড়াশোনা সম্ভব হচ্ছে।’’ এক অভিভাবক রীতা থান্দার বলেন, ‘‘স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলের পড়ার খুবই ক্ষতি হচ্ছিল।আমরা চাইছিলাম সপ্তাহে অন্তত একদিন স্কুলে পড়াশোনা হোক। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে অনুরোধ করেছিলাম। শিক্ষক-শিক্ষিকরা এগিয়ে আসায় আমরা খুশি।’’

পড়ুয়া নেহা প্রামাণিক, গোপাল মাইতি জানায়, ‘‘অনেকদিন স্কুলে যেতে পারি না। মন খারাপ লাগে। তবে এখানে স্যারেরা এসে আমাদের পড়াচ্ছেন।খুব ভাল লাগছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Class Room school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE