ভাঙনের গ্রাসে গ্রাম। — নিজস্ব চিত্র।
কারও চাষের জমি গিয়েছে। কারও বসত বাড়ি চলে গিয়েছে শিলাবতী নদীর গর্ভে। বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে কৃষ্ণরায় জিউয়ের মন্দির। ভয়ে দিন কাটাচ্ছে গড়বেতা-১ ব্লকের বগড়ী-কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দারা।
দিনরাত নদীর গর্জন শুনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন স্থানীয়রা। জলের তোড়ে ঝুপ ঝুপ করে বাঁধের মাটি ধসে পড়ার শব্দও শোনা যায় হামেশাই। নদীর উল্টো পা়ড়ে গজিয়ে ওঠা চর দেখেই বোঝা যায় বগড়ি-কৃষ্ণনগরকে কী ভাবে গ্রাস করেছে নদী। জেগে ওঠা চরে এখন ফুটবল খেলে গ্রামের কচিকাঁচারা। নদীকে দু’ভাগ করে মাঝনদীতেও গজিয়ে উঠছে চর। নদীর গ্রাসে ক্রমে পিছোচ্ছে গ্রাম।
নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে হতাশার সুরে স্থানীয় বাসিন্দা মাঝবয়সী বলরাম চন্দ্র জানালেন, “ওই যে দেখছেন নদীর মাঝখান, ওখানেই আমাদের বাড়ি ছিল! বাপ-ঠাকুর্দার মুখে শুনেছি। এখন সবই গল্প।” স্থানীয় আর এক বাসিন্দার আক্ষেপ, ‘‘ভাঙন প্রতিরোধে প্রশাসন পদক্ষেপ করেনি। বর্ষা এলেই ভাঙন-আতঙ্কে রাত জাগে সারা গ্রাম।’’ গত বছর বর্ষায় নদীর জলস্রোতের ধাক্কায় স্থানীয় মন্দিরে ওঠার সিঁড়িতে ফাটল ধরে। আর এখন সেই মন্দিরই কার্যত ধ্বংসের মুখে!
গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণদাস রায় বলেন, “দ্রুত ভাঙন রোধ না করা গেলে ভবিষ্যতে গ্রামটাই চলে যাবে নদী গর্ভে। ইতিমধ্যেই কয়েক একর জমি চলে গিয়েছে। তলিয়েছে বসতবাড়িও। পুরো গ্রাম চলে গেলে থাকব কোথায়? খাব কী?” স্থানীয় বাসিন্দা মধুসূদন রায়েরও অভিযোগ, “বহুবার ভাঙন রোধের জন্য আবেদন করেছি। কোনও কাজ হয়নি। তাই বর্ষা এলেই ঘুম উড়ে যায়। মনে হয় এই বুঝি হুড়মুড়িয়ে সব ভেঙে পড়ল।”
সম্প্রতি সেচ দফতর ভাঙন প্রতিরোধে উদ্যোগী হয়েছে। জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ বলেন, “ভাঙন প্রতিরোধে সরকার ৭৫ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে। ধাপে ধাপে ৯০০ মিটার দীর্ঘ বাঁধের কাজ হবে।” গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী বলেন, “কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। বর্ষার আগেই কাজ শেষ করার চেষ্টা হবে। গ্রামবাসীকে আর ভাঙনের কবলে পড়তে হবে না। বাঁচবে প্রাচীন মন্দিরও।” গড়বেতা-১ ব্লকের বিডিও বিমলকুমার শর্মা বলেন, “দ্রুত কাজ শেষ করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy