Advertisement
০৬ মে ২০২৪
ক্ষোভের মাটি / ১
nandigram

উন্নয়ন চলে কাঁধে চেপে

আমপান দুর্নীতি হোক বা বেহাল রাস্তা, নন্দীগ্রাম এখনও সরব। জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘরে ক্ষোভের কারণ খুঁজল আনন্দবাজার। গত কয়েক মাসে একের পর এক বেহাল রাস্তা নিয়ে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন নন্দীগ্রামের মানুষ। নন্দীগ্রাম-তেখালি সড়ক, নন্দীগ্রাম-তেরোপেখ্যা সড়ক, বয়াল দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিঁদুরিয়া-বলরামপুর রাস্তার শোচনীয় দশা বেআব্রু করে দিয়েছে শাসক দলের উন্নয়নের ঢক্কানিনাদকে।

বেহাল রাস্তা। নন্দীগ্রামের গোকুলনগর এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

বেহাল রাস্তা। নন্দীগ্রামের গোকুলনগর এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২০ ০১:২৪
Share: Save:

‘এই দেখো উন্নয়নকে কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছি’— সাইকেল কাঁধে করে কাদায় পা ডুবিয়ে চলতে চলতে এক ভদ্রলোক হেসে বললেন। ছবিটা কৃষক আন্দোলনের পীঠস্থান নন্দীগ্রামের। কাঁধে সাইকেল, হাতে জুতো। রাস্তার মোড়ের হোর্ডিং-এ উন্নয়নের উজ্জ্বল বিজ্ঞাপন। ২০১১য় সিঙ্গুর ও এই নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের কাঁধে ভর দিয়ে রাজ্যে যার বন্যা বইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল তৃণমূল। সেই প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দিলে নন্দীগ্রামের আনাচে-কানাচে এখন শোনা যাচ্ছে একটাই কথা ‘কেউ কথা রাখেনি, কেউ কথা রাখে না’। রাস্তাঘাট থেকে বিদ্যুৎ, পানীয় জলের সমস্যায় আজও ভুগছেন এখানকার মানুষ। এমনকী ছাত্রছাত্রীদের কারিগরি শিক্ষা দিয়ে স্বনির্ভর করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে প্রতি ব্লকে যে আইটিআই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন, সেদিকেও বঞ্চিত নন্দীগ্রাম। নন্দীগ্রাম-১ ও ২ ব্লক আজও পায়নি আইটিআই।

গত কয়েক মাসে একের পর এক বেহাল রাস্তা নিয়ে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন নন্দীগ্রামের মানুষ। নন্দীগ্রাম-তেখালি সড়ক, নন্দীগ্রাম-তেরোপেখ্যা সড়ক, বয়াল দুই নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিঁদুরিয়া-বলরামপুর রাস্তার শোচনীয় দশা বেআব্রু করে দিয়েছে শাসক দলের উন্নয়নের ঢক্কানিনাদকে। পানীয় জল আর বিদ্যুতের ছবিটা ২০১১ সালের আগের থেকে খুব একটা পাল্টায়নি। রাস্তার সংস্কার নিয়ে অবশ্য স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, যতবার রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে ততবার ঠিকাদারের জিনিসপত্র চুরি হয়ে গিয়েছে। এই জন্য শেষ পর্যন্ত রাস্তার কাজ শেষ হয়নি। তবে এ সব যুক্তি আর মানতে নারাজ নন্দীগ্রাম। স্থানীয় এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘এলাকায় সবার উন্নতি হবে ভেবে জমি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম কর্মসংস্থান হবে। কৃষি নির্ভর শিল্প হবে। আমাদের ব্যবহার করে ক্ষমতায় এল তৃণমূল। কিন্তু অবস্থা পাল্টাল কই!’’ পাথুরিয়া এলাকার যুবক কার্তিক চন্দ্র দাস সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর কথায়, ‘‘নন্দীগ্রামের বেশিরভাগ যুবকই কাজের খোঁজে বাইরে পাড়ি দিচ্ছে। কারণ এখানে কাজ নেই। পরিবর্তনের পর ভেবেছিলাম শিল্প হবে। এখন আমার মতো অনেকেই হতাশ। আর আইটিআই তো দিবাস্বপ্ন।’’

বলরামপুরের বিজেপি নেতা নিমাই সামন্ত বলেন, ‘‘উন্নয়ন বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংএ শোভা পেলেও বাস্তব ছবি বলছে অন্যকথা। মানুষকে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু ৯ বছর পরেও নন্দীগ্রামের মানুষের কাছে অধরাই থেকে গিয়েছে উন্নয়ন। মানুষই এর উত্তর দেবে।’’

উন্নয়ন হয়নি, মানতে নারাজ তৃণমূলের বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান মেঘনাদ পাল। তিনি বলেন, ‘‘৩৪ বছর ধরে নন্দীগ্রাম অবহেলিত ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে নন্দীগ্রামে অনেক উন্নতি হয়েছে। কিছু রাস্তাঘাট, সেতু, পানীয় জলের কাজ এখনও বাকি। জেলিংহামের কাছে জমিতে আইটিআই গড়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে উন্নয়নের কী অবস্থা, তা দেখে আসুক। তারপরে নন্দীগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে মন্তব্য করবে বিজেপি।’’

তবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে শাসক দলের নেতাদের এমন কথায় আর মন ভেজাতে নারাজ নন্দীগ্রামের মানুষ। জমি আন্দোলনের সময় গোকুলনগর, তেখালি ব্রিজে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখাতেন এলাকার মানুষ। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন দাবিতে নন্দীগ্রাম জুড়ে ফের ফিরে এসেছে সেই বিক্ষোভ। এই ক্ষোভ ফের আর একটা আন্দোলনের ইঙ্গিত নয় তো? সময়েই তার উত্তর মিলবে।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nandigram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE