Advertisement
০৫ মে ২০২৪
বিদ্যালয় পরিদর্শকের চিঠি বিকাশ ভবনে

কলেজে কর্মী বদলি, সঙ্কটে শিক্ষা দফতর

নতুন কর্মী নিয়োগ হয়নি দীর্ঘদিন। জেলা পরিদর্শকের অফিস থেকেই বিভিন্ন কলেজে বদলি করা হচ্ছে কর্মীদের। ফলে কর্মী সঙ্কটে সমস্যা দেখা দিয়েছে শিক্ষা দফতরে। পশ্চিম মেদিনীপুরে নতুন পাঁচটি কলেজ চালু হয়েছে। এই নতুন কলেজগুলোতেই কর্মীদের বদলি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৫ ০০:৫০
Share: Save:

নতুন কর্মী নিয়োগ হয়নি দীর্ঘদিন। জেলা পরিদর্শকের অফিস থেকেই বিভিন্ন কলেজে বদলি করা হচ্ছে কর্মীদের। ফলে কর্মী সঙ্কটে সমস্যা দেখা দিয়েছে শিক্ষা দফতরে।

পশ্চিম মেদিনীপুরে নতুন পাঁচটি কলেজ চালু হয়েছে। এই নতুন কলেজগুলোতেই কর্মীদের বদলি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই সূত্র খবর, এরফলে যে দফতরে সমস্যা দেখা দেবে, তা জানিয়ে ইতিমধ্যেই মেদিনীপুরের শিক্ষা ভবন থেকে সল্টলেকের বিকাশ ভবনে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাঠিয়েছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমরকুমার শীল। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, ওই কর্মীরা দফতরের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতেন। প্রকাশ্যে অবশ্য সমস্যার কথা মানতে চাইছেন না অমরবাবু। আচমকা বেশ কয়েকজন কর্মীর বদলিতে দফতরে সমস্যা দেখা দেবে না? জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) জবাব, “সমস্যা
হবে না।”

শিক্ষক সংগঠনগুলো অবশ্য জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (মাধ্যমিক)-এর এই দাবির সঙ্গে একমত নয়। শুধু সিপিএম কিংবা অন্য বিরোধী দল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনই নয়, তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনও মানছে, একসঙ্গে বেশ কয়েকজন কর্মীর বদলিতে দফতরে সমস্যা দেখা দেবে। ফাইলপত্র জমে থাকবে। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা কোর কমিটির সদস্য মধুসূদন গাঁতাইত বলেন, “শিক্ষা দফতরের কয়েকজন কর্মীকে নতুন কলেজগুলোয় পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি। এরফলে, কাজের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা তো হবেই।”

সিপিএম প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি অবশ্য এ নিয়ে তৃণমূল সরকারকে বিঁধতে ছাড়ছে না। সমিতির জেলা সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, “রাজ্য সরকারের কোনও পরিকল্পনা নেই। নীতি নেই। আচমকা শিক্ষা দফতরের বেশ কয়েকজন কর্মীর বদলি হয়ে গেল। এঁদের মধ্যে এমন কর্মীও রয়েছেন যাঁর চাকরি আর খুব বেশি দিন নেই। ভাবা যায়?” তাঁর কথায়, “রাজ্যে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেই। নতুন কর্মী নিয়োগ করা হলে তো আর এ ভাবে বদলি করতে হত না। সরকারের উদ্যোগহীনতা সব ক্ষেত্রেই চোখে পড়ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রও তার বাইরে নয়।” অশোকবাবুর দাবি, “তড়িঘড়ি কলেজ চালু করতে গিয়েই এই পরিস্থিতি।” তাত্‌পর্যপূর্ণ হল, তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠনও এ ভাবে কর্মী বদলির প্রতিবাদ জানিয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (মাধ্যমিক)-এর কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। ফেডারেশনের জেলা আহ্বায়ক সুব্রত সরকার বলেন, “এ ভাবে বেশ কয়েকজন কর্মীকে বদলি করে দেওয়ার ফলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেবে। বিষয়টি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে (মাধ্যমিক) জানিয়েছি। উনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন।” কর্মী বদলির ব্যাপারে নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবও রেখেছে ফেডারেশন।

শিক্ষা দফতরের এক সূত্রে খবর, দুই মেদিনীপুরের ১২ জন কর্মী বদলি হয়েছেন। এরমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরেরই ৯ জন। এই ৯ জনের মধ্যে আবার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) দফতরেরই ৬ জন রয়েছেন। ৬ জনের মধ্যে ৩ জন আপার ডিভিশন ক্লার্ক ও ৩ জন লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক। কারও বদলি হয়েছে মোহনপুর, দাঁতন- ২ এ, কারও গোপীবল্লভপুর- ২, কেশিয়াড়িতে। এমনিতেই শিক্ষা দফতরে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী কম। দফতরের কর্মীদের বিভিন্ন কাজ দেখভাল করতে হয়। যেমন, শিক্ষকদের বেতন, পেনশন, পিএফ, এমসি, কোর্ট কেস প্রভৃতি। এর উপর স্কুলগুলোর নানা সমস্যাও রয়েছে। বস্তুত, শিক্ষা দফতরে কিছু ফাইল দিনের পর দিন পড়ে থাকায় ক্রমিক নম্বর দেখে কাজ হচ্ছে না, এই অভিযোগে দিন কয়েক আগেই স্মারকলিপি দেয় তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন। ফেডারেশনের জেলা আহ্বায়ক সুব্রতবাবু জানান, ওই সব কর্মীদের বাড়ির কাছাকাছি কলেজেও বদলি করা যেত। কিন্তু তা হয়নি। এক মহিলা কর্মীকে কেশিয়াড়িতে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন, এমন একজনকেও কেশিয়াড়িতে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছে, এমন এক জনকে খড়্গপুর- ২ এ বদলি করে দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।

কর্মী বদলির নির্দেশ এসেছে বিকাশ ভবন থেকেই। উচ্চশিক্ষা দফতরের এক সূত্রের অবশ্য দাবি, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে নতুন পাঁচটি কলেজ চালু প্রয়োজন ছিল। কারণ, এ বার জেলায় উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার বেড়েছে। গত বছর যেখানে পাশের হার ছিল ৮২ শতাংশ, এ বার সেখানে ৮৯ শতাংশ। ৪২,১৭৩ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৩৭,৪৮৬ জন পাশ করেছে। উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের সকলে কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও। জেলায় যে ২৫টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজ ছিল, সেখানে আসন সংখ্যা মেরেকেটে প্রায় ২২ হাজার। এই পরিস্থিতিতে এমনিতেই সব ছাত্রছাত্রী নিজের পছন্দ মতো বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবে না। তাই ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক থেকে শিক্ষকদেরও আশঙ্কা, পর্যাপ্ত কর্মী ছাড়া সমস্যায় পড়তে পারে কলেজগুলি। সেক্ষেত্রে ভর্তি সমস্যাও আরও প্রকট হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE