সজল করের মা। নিজস্ব চিত্র
ছেলে আর ফেরত আসবে না। কিন্তু তার অঙ্গে তো বাঁচতে পারে আরও কয়েকটি প্রাণ! সেই তাগিদ থেকেই কলেজ পড়ুয়া সজল করের পরিজনেরা সিদ্ধান্ত নিলেন সজলের অঙ্গদানের। পূর্ব মেদিনীপুরের গ্রামের আটপৌরে এক পরিবার সংস্কারের ঊর্ধ্বে উঠে পালন করল নাগরিক দায়িত্ব।
সজল কর (২০)-এর বাড়ি কোলাঘাটের মেশাড়া গ্রামে। সজলের বাবা সুমিতকুমার করের চাষবাসই পেশা। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার ছিল তাঁর। একটা দুর্ঘটনা সব এলোমেলো করে দেয়।
বাগনান কলেজে অ্যাকাউন্টেন্সি অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সজল গত সোমবার রাতে রামতারক থেকে কোলাঘাটের বাড়িতে ফিরছিলেন। ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বাইকে আসার সময় তমলুকের নেতাজিনগরের কাছে দুর্ঘটনা ঘটে। বৃষ্টিভেজা রাস্তায় পিছলে যায় বাইকের চাকা। পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পান সজল। প্রথমে তাঁকে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার সিএমআরআই হাসপাতালে। বুধবার রাতে চিকিৎসকেরা জানান, সজলের ‘ব্রেন ডেথ’ হয়েছে।
মেশাড়া গ্রামের কর পরিবারে তখন আকাশ ভেঙে পড়েছে! হাহাকারের মধ্যেই সুমিতরা বুঝতে পারেন ছেলেকে আর ফেরত পাবেন না। সেই সময় সুমিতের দাদা অমিতকুমার কর ও কয়েকজন আত্মীয় সজলের অঙ্গদানের প্রস্তাব দেন। গোড়ায় কিছুটা দ্বিধা ছিল। শেষে অবশ্য ছেলের অঙ্গদানে সম্মত হন শোকার্ত বাবা-মা। বুধবার রাতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে কর পরিবার।
বৃহস্পতিবার সকালে মেটে অঙ্গদান প্রক্রিয়া। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে দীর্ঘ দেড় মাস চিকিৎসাধীন হবিবুর রহমানের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয় সজলের হৃৎপিণ্ড। লিভার প্রতিস্থাপন করা হয় এসএসকেএমে ভর্তি এক রোগীর শরীরে। কিডনি দু’টি সংগ্রহ করে কলকাতার দু’টি বেসরকারি হাসপাতাল। সজলের দু’চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করে শঙ্কর নেত্রালয়। আর ওই তরুণের ত্বক এসএসকেএমে-ই রক্ষিত রয়েছে।
ছেলে হারানোর যন্ত্রণার মধ্যেও যে সিদ্ধান্ত কর পরিবার নিয়েছে, তাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা গ্রাম। সজলের বাবা এলাকার সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। সুমিত বলছেন, ‘‘নেতা হওয়ার জন্য রাজনীতি করি না। সমাজসেবাই আমার উদ্দেশ্য। ছেলের অঙ্গদান করে সেই সমাজসেবাই করেছি। অন্যের শরীরে এ ভাবেই বেঁচে থাকবে আমার ছেলে।’’ মৃত সজলের জেঠু অমিতেরও বক্তব্য, ‘‘যাকে হারিয়েছি তাকে আর পাব না। কিন্তু ওর অঙ্গ দিয়ে আমরা অনেকগুলি প্রাণ রক্ষা করতে পারব, সেটাই বড় কথা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy