সমালোচনার মুখে পড়ে তড়িঘড়ি জেলা ভিজিল্যান্স ও মনিটরিং কমিটির বৈঠক ডাকা হল। আগামী ২০ জুন মেদিনীপুরে এই বৈঠক হবে।
এই বৈঠক ডাকা নিয়ে অবশ্য কম জলঘোলা হয়নি। গত বছর জুনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এই কমিটি গঠনের পর মোটে একবার মাত্র বৈঠক হয়েছে। পরে তিনবার বৈঠক ডেকেও বাতিল করা হয়। স্বভাবতই এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সরব হন বিরোধী বিধায়করা। এরপরই কমিটির চেয়ারপার্সন তথা ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সরেনের সঙ্গে কথা হয় কমিটির সচিব তথা জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মীনার। বৈঠকের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়। ইতিমধ্যে কমিটির সদস্যদের কাছে বৈঠকের চিঠি পৌঁছতে শুরু করেছে। কেশপুরের বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই বলেন, ‘‘২০ জুন বৈঠক বলে জানানো হয়েছে। দেখা যাক এ বার কী হয়!’’ খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক নাজমুল হকের কথায়, ‘‘আগে তো পরপর তিনবার বৈঠক ডেকে বাতিল করা হয়েছে। জানি না এ বারও ওই পরিস্থিতি হবে কি না!’’
সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে প্রচুর অর্থ বরাদ্দ হয়। কিন্তু অনেক সময় পরিকল্পনার অভাবে অর্থ পড়ে থাকার অভিযোগ ওঠে। কাজও ঠিক মতো হয় না। ওই সব প্রকল্পের যথাযথ রূপায়ণ হচ্ছে কি না, কোথাও কোনও সমস্যা দেখা দিচ্ছে কি না, সমস্যা দেখা দিলে সেগুলো কী, কী ভাবেই বা তার সমাধান হতে পারে, এ সবই দেখার কথা ভিজিল্যান্স ও মনিটরিং কমিটির। জেলার সব বিধায়ক কমিটির সদস্য।
পশ্চিম মেদিনীপুরে গত এক বছরে এই কমিটির বৈঠক হয়েছে মাত্র একবার। পরে তিনবার বৈঠক ডেকেও বাতিল করা হয়। জেলায় কমিটি গঠন হয় গত বছর ১৭ জুন। প্রথম বৈঠক হয় ২১ নভেম্বর। দ্বিতীয় বৈঠক হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ৬ মার্চ। তা হয়নি। পরে ২৩ মার্চ বৈঠকের দিন স্থির হয়। কিন্তু ওই দিনও বৈঠক হয়নি। পরে জানানো হয় ২৭ মার্চ বৈঠক হবে। শেষমেশ তা-ও বাতিল হয়।
নতুন আর্থিক বছর শুরু হয় এপ্রিলে। তাই কমিটির সদস্যদের অনেকেই মনে করেছিলেন, মার্চে অন্তত একটি বৈঠক হবে। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে। তা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন বিরোধী বিধায়করা। তাঁদের মতে, বছরে একবার বৈঠক হলে যে কোনও কমিটির গুরুত্ব কমে যায়। এ ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। তাঁদের আরও অভিযোগ, বৈঠক বাতিলের কথা মাত্র এক-দু’দিন আগে জানানো হয়। অথচ, বৈঠকের জন্য অনেকেই পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করেন। ফলে, ভোগান্তি বাড়ে।
সরকারি কোনও বৈঠকে সাধারণত ডাক পান না বিরোধী বিধায়করা। মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে এসে প্রশাসনিক বৈঠক করলেও তাঁরা ব্রাত্য থাকেন। ফলে নিজেদের পরিকল্পনা, অভাব-অভিযোগের কথা তাঁরা জানাতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে এই নজরদারি কমিটির বৈঠক হলে একশো দিনের কাজ, তফসিলি জাতি-উপজাতি উন্নয়ন প্রকল্প, পানীয় জল প্রকল্প, ইন্দিরা আবাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রভৃতি সরকারি প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার মতে, বছরে অন্তত তিনবার এই কমিটির বৈঠক হওয়া উচিত। দুর্ভাগ্য, এ জেলায় তা হয় না। বিরোধী বিধায়কদের দাবি, সরকারি কাজের সঙ্গে রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
গত জুনে কমিটির প্রথম বৈঠকে নানা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। বিরোধী বিধায়কদের একাংশ অভিযোগ করেন, জেলায় কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প বেআইনি পথে হচ্ছে। বিশেষ করে একশো দিনের কাজে দুর্নীতি চলছে। প্রশ্ন ওঠে, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৪৫৪টি পিছিয়ে পড়া গ্রাম রয়েছে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী বলছেন জঙ্গলমহল হাসছে। এটা হয় কী করে! পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলোর উন্নয়নে কী পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে প্রথম বৈঠকে তাও জানতে চান বিরোধী বিধায়করা। বৈঠকে অবশ্য কমিটির চেয়ারপার্সন আশ্বাস দিয়েছিলেন, তিনি ব্লকে ব্লকে ঘুরে কাজ দেখবেন। কেশপুরের বিধায়ক রামেশ্বরবাবু বলেন, ‘‘প্রথম বৈঠকে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর পাইনি। দেখা যাক এ বার তা পাই কি না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy