Advertisement
০৬ মে ২০২৪

প্রতি ঘরে শৌচাগারের লক্ষ্যমাত্রা অধরাই

আর্থিক বছর শেষেও লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ প্রশাসন। বছর শেষে কাজ হয়েছে মাত্র চার ভাগের এক ভাগ। স্বচ্ছ ভারত অভিযান প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চিত্রটা এরকমই। জেলায় মোট ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েত। তার মধ্যে ১০ট়ি পঞ্চায়েতকে নির্মল করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল জেলা। বছর শেষে দেখা গেল, ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ। মাত্র ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রকল্প রূপায়ণে সফল হয়েছে।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৬
Share: Save:

আর্থিক বছর শেষেও লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ প্রশাসন। বছর শেষে কাজ হয়েছে মাত্র চার ভাগের এক ভাগ।

স্বচ্ছ ভারত অভিযান প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চিত্রটা এরকমই। জেলায় মোট ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েত। তার মধ্যে ১০ট়ি পঞ্চায়েতকে নির্মল করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল জেলা। বছর শেষে দেখা গেল, ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ। মাত্র ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রকল্প রূপায়ণে সফল হয়েছে।

অথচ এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করার জন্য প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকেরা আগেই ময়দানে নেমেছিলেন। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষদেরও। তা সত্ত্বেও কাজে দ্রুততা আসেনি। এর কারণ কী? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যর্থতার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ হল, শৌচাগার তৈরির প্রয়োজনীয় এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। দ্বিতীয় বিষয়টি হল, জেলা জুড়ে কাজ করার মতো পরিকাঠামো রয়েছে এমন অভিজ্ঞ সংস্থা মেলেনি। ফলে অনভিজ্ঞ শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্ব-সহায়ক দলের মাধ্যমে শৌচাগার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাঁদের কাজে গতি বৃদ্ধি করা যায়নি। পরে অভিজ্ঞ ‘স্যানিটারি মার্টা’কে কাজে নামাতে হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে দেখা যায়, ওই সব সংস্থা আগে থেকেই অন্য জেলায় ওই একই কাজের কাজের দায়িত্ব নিয়েছে।

বর্তমানে এই প্রকল্প রূপায়ণে আরও যে সমস্যা দেখা গিয়েছে তা হল, কিছু ক্ষেত্রে টাকার জোগানেরও অভাব রয়েছে। এই প্রকল্পে জেলা যে ৩২ লক্ষ টাকা পেয়েছিল তার প্রায় পুরোটাই খরচ হয়ে গিয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরীর কথায়, “প্রথম দিকে কিছু সমস্যা থাকায় কাজের গতি মন্থর ছিল। এ বার ধীরে ধীরে কাজের গতি বাড়ছে।”

প্রকল্পের কাজ নিয়ে কী বলছেন সাধারণ মানুষ? অন্য দিকে, সর্বত্র যে সচেতনতা এখনও বাড়েনি তার প্রমাণ মিলল কেশিয়াড়ির সুধা আড়ির বক্তব্যে। সুধাদেবীর কথায়, ‘‘আমরা তো প্রাতঃকৃত্য করতে জঙ্গলেই যায়। কে আর এসব বাড়িতে করবে। আমাদের কাছে এ সব কেউ বলেনি তো।’’ একই ভাবে, চন্দ্রকোনার শ্রীকান্ত পান বলেন, ‘‘লোক মুখে শুনছিলাম, আমাদেরও নাকি কিছু টাকা দিতে হবে। কিন্তু কীভাবে সেই টাকা জমা দেব, কেউ আমাদের কাছে আসবে না আমাদেরই পঞ্চায়েতে অফিসে যেতে হবে, তা বুঝতে পারছি না।’’

২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৯টি ব্লকের ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬১টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৯০৫২৩টি শৌচাগার তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। আর্থিক বছর শেষে দেখা যাচ্ছে শৌচাগার তৈরি হয়েছে মাত্র ২২৫০৪টি। সব থেকে পিছিয়ে জঙ্গলমহল ঝাড়গ্রাম। মহকুমার ৩১টি গ্রাম পঞ্চায়েতে যেখানে ৪৪২৮৪টি শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করা হয়েছিল সেখানে বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ৫৩১৬টি। ৩৮ হাজার ৯৬৮টি বাকি। তারপরই রয়েছে খড়্গপুর। এই মহকুমার ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৩৫৭২টি শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও করা গিয়েছে মাত্র ৪৯৮১টি। ঘাটাল ও মেদিনীপুর সদর মহকুমার
ক্ষেত্রে কাজে অগ্রগতির হার অপেক্ষাকৃত ভাল।

যে দশটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে নির্মল ঘোষণা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, সেগুলি হল, দাসপুর-২ ব্লকের সাহাচক, দাঁতন-২ ব্লকের পোরোলদা, পিংলার ক্ষিরাই, ঘাটালের মনোহরপুর-২, দাসপুর-১ ব্লকের নন্দনপুর-১, নারায়ণগড় ব্লকের নারায়ণগড়, খড়্গপুর-২ ব্লকের পপরআড়া, নয়াগ্রামের বড়নিগুই ও পাতিনা এবং গড়বেতা-২ ব্লকের মাকলি। কিন্তু সাফল্য মিলেছে কেবলমাত্র সাহাচক, ক্ষিরাই, নন্দনপুর-১ ও মাকলি গ্রাম পঞ্চায়েতে।

মঙ্গলবার এ নিয়ে জেলা পরিষদের সচিব দিব্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় একটি বৈঠকও করেন। বৈঠকে সমস্ত ব্লকের যুগ্ম বিডিও (যুগ্ম বিডিও সংশ্লিষ্ট ব্লকের নোডাল অফিসার) ছাড়াও কর্মাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন। সচিব বলেন, “এই কাজে কোনও রকমের গাফিলতি মেনে নেওয়া হবে না। আরও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার জন্য যুগ্ম বিডিওদের বলা হয়েছে। এ বার আরও বেশি করে আমরাও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে পরিদর্শন বাড়াব।” তারই সঙ্গে বৈঠকে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে যেহেতু জেলায় ওই প্রকল্পে অর্থের সঙ্কট রয়েছে তাই কোনও ব্লক টাকা ফেলে রাখলে সেই ব্লক থেকে টাকা ফেরত নিয়ে নেওয়া হবে। পরিবর্তে যে ব্লকে কাজ হচ্ছে সেই ব্লককে টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। টাকা ফেরতের এই হুঁশিয়ারি অনেকটাই কাজে গতি আনতে সাহায্য করবে বলে প্রশাসনিক কর্তাদের অভিমত।

বাস্তবে কাজ কতটা এগোয়, তা অবশ্য সময়ই বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE