E-Paper

রেলশহরের কল্যাণে কল্যাণী, তিন মাস পরে কাটল জট, প্রথম মহিলা পুরপ্রধান

মঙ্গলবার খড়্গপুরের পুরপ্রধান পদে কল্যাণী ঘোষের নাম ঘোষণা করল তৃণমূল। প্রথম দফায় মেদিনীপুরে জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে কল্যাণীকে মিষ্টিমুখ করান জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৪৪
A Photograph of Woman Chairman

কল্যাণীকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন অজিত। খড়্গপুরে। নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার রেলশহরের পুরসভা এ বার পেতে চলেছে প্রথম মহিলা পুরপ্রধান।

মঙ্গলবার খড়্গপুরের পুরপ্রধান পদে কল্যাণী ঘোষের নাম ঘোষণা করল তৃণমূল। তবে দু’দফায় হয়েছে নাম ঘোষণা। প্রথম দফায় মেদিনীপুরে জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে কল্যাণীকে মিষ্টিমুখ করান জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। সেখানে ছিলেন না জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি। দ্বিতীয় দফায় খড়্গপুর পুরসভায় এসে অজিত দলীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করে সাংবাদিকদের সামনে কল্যাণীর নাম ঘোষণা করেন। আগামী সোমবার শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনে মহকুমাশাসককে আবেদন জানানো হবে বলে জানান তিনি।

প্রায় সাড়ে তিন মাস অভিভাবকহীন ছিল এই পুরসভা। ‘দিদির দূত’ কর্মসূচিতে বেরিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর ও কর্মীরা। অবশেষে শূন্যস্থান পূরণের তোড়জোর শুরু করে তৃণমূল। এ দিন দু’জায়গায় পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা নিয়ে তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিতের বক্তব্য, “সোমবার রাতে আমাকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় খড়্গপুরের পুরপ্রধান পদে কল্যাণী ঘোষের নাম নিয়ম মেনে ঘোষণার কথা জানান। নিয়ম অনুযায়ী কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করে পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা করতে হয়। আমি সেটাই খড়্গপুর এসে করলাম। সুজয় না বুঝে আগেই মেদিনীপুরে কল্যাণীর নাম ঘোষণা করেছিল। পরে খড়্গপুরে আমার সঙ্গে সুজয়ও এসেছিল।’’ খড়্গপুরে আসার পরেও তাঁর সঙ্গে অভিষেকের কথা হয়েছে, জানান অজিত।সুজয়ের দাবি, "দলের রাজ্য নেতৃত্ব‌ সবার সঙ্গে কথা বলে পুরপ্রধান ঠিক করেছেন। সঠিক সময়ে নাম ঘোষণা করেছেন!"

পাঁচবারের কাউন্সিলর কল্যাণীর নাম আগেও পুরপ্রধান পদের জন্য বিবেচনায় ছিল। ২০২২ সালে পুরভোটের পরে পুরপ্রধানের দৌড়ে প্রদীপ সরকারের সঙ্গে ছিল কল্যাণীর নাম। তৃণমূলের দ্বন্দ্বে সামনে আসে আরও নাম। শেষে পুরপ্রধান পদে প্রত্যাবর্তন হয় প্রদীপের। তারপর দ্বন্দ্বের জেরে প্রদীপকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। সফলও হন প্রদীপ-বিরোধীরা। পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে সই সংগ্রহের নেপথ্যে প্রদীপের একদা ‘ঘনিষ্ঠ’ কাউন্সিলর প্রবীর ঘোষ ছিলেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। প্রবীরকে পুরপ্রধান পদে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেন ওই কাউন্সিলররা। পাল্টা প্রবীরের বিরুদ্ধে কু-প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ জানান তৃণমূলের এক মহিলা কর্মী। পাল্টা প্রদীপের বিরুদ্ধে থানায় হুমকির অভিযোগ দায়ের করেন কয়েকজন কাউন্সিলর। এই আবহে পুরপ্রধানের পদে ইস্তফা দেন প্রদীপ।

কে পরবর্তী পুরপ্রধান হবে তা নিয়ে টালবাহানা চলছিল। প্রবীরের নামে অভিযোগ হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়ে দল। তখন সামনে এসেছিল প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডের স্ত্রী রীতা পাণ্ডে ও কল্যাণীর নাম। প্রদীপ বিরোধী বলে পরিচিত আরেক তৃণমূল নেতা দেবাশিস চৌধুরীর ‘ঘনিষ্ঠ’ অপূর্ব ঘোষের নামও দৌড়ে ছিল। তবে একসময়ে কংগ্রেস থাকা রবিশঙ্করের সঙ্গে জেলার এক ‘হেভিওয়েট’ বিধায়ক তথা মন্ত্রীর সুসম্পর্কে পিছিয়ে পড়েন বাকিরা। কংগ্রেস ছেড়ে রবিশঙ্করের সঙ্গেই তৃণমূলে আসা পাঁচবারের কাউন্সিলর কল্যাণীর নাম একেবারে সামনে চলে আসে। সেই কল্যাণীই শেষ হাসি হাসলেন।

কাউন্সিলর প্রবীর বলেন, “পুরপ্রধানের জন্য আমার নাম ২০জন কাউন্সিলর প্রস্তাব করেছিলেন। দলের সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিচ্ছি।” আর পুরপ্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানো প্রদীপ বলছেন, “শুভেচ্ছা রইল। আগামী দিনে নিশ্চয় শহরে আরও উন্নয়ন হবে।” তবে পুরসভায় কাউন্সিলরদের নিয়ে অজিতের বৈঠকে ছিলেন না প্রদীপ ও পূজা নায়ডু। দু'জনেই খড়্গপুরের বাইরে রয়েছেন বলে জানান। পূজা গিয়েছেন বিশাখাপত্তনমে, প্রদীপ তারাপীঠে।

আর নতুন পুরপ্রধান কল্যাণীর বক্তব্য, “দলের কাছে কৃতজ্ঞ। দলের সম্মান রক্ষায় শহরবাসীর জন্য কাজ করব। আশা করি সকলের সহযোগিতা পাব।” অজিতের দাবি, “কল্যাণীর নাম গতবারেই ছিল। তবে প্রদীপ পুরপ্রধান হন। এ বার অনেকগুলি নাম জানালেও দল কল্যাণীকেই পুরপ্রধান হিসাবে যোগ্য মনে করেছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

chairman woman municipality chairman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy