Advertisement
E-Paper

ঘাটাল কলেজের টিআইসি তৃণমূল প্রার্থী

ফেসবুকে মন্তব্যের জেরে মাস কয়েক আগে এক শিক্ষককে হেনস্থার অভিযোগে শিরোনামে এসেছিল ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়। এ বার সেই কলেজেরই টিচার ইন-চার্জকে একেবারে পুরভোটে প্রার্থী করে দিল তৃণমূল। রবিবার প্রথমে মেদিনীপুর শহরে দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০০:৪২

ফেসবুকে মন্তব্যের জেরে মাস কয়েক আগে এক শিক্ষককে হেনস্থার অভিযোগে শিরোনামে এসেছিল ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়। এ বার সেই কলেজেরই টিচার ইন-চার্জকে একেবারে পুরভোটে প্রার্থী করে দিল তৃণমূল। রবিবার প্রথমে মেদিনীপুর শহরে দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন। পরে বিকালে ঘাটাল ব্লক অফিসে ঘাটাল, ক্ষীরপাই, খড়ার, রামজীবনপুর ও চন্দ্রকোনা-এই পাঁচটি পুরসভার নেতৃত্বকে ডেকে সংশ্লিষ্ট পুরসভার প্রার্থীদের তালিকা দেওয়া হয়। তখনই জানা যায়, ঘাটাল পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন ঘাটাল কলেজের টিচার ইন-চার্জ লক্ষ্মীকান্ত রায়।

গত ২৯ জানুয়ারি কলেজ নির্বাচনে টিএমসিপির দৌরাত্ম্য নিয়ে ফেসবুকে কয়েকটি পোস্ট করেছিলেন কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক অমিত রায়। ফেসবুকে টিএমসিপির বিরুদ্ধে এমন পোস্ট কেন করা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে অমিতবাবুকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল কলেজের টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেমন্তকুমার দাসের বিরুদ্ধে। ঘটনার কথা প্রথমে মানতেই চাননি কলেজের টিচার ইন-চার্জ লক্ষ্মীকান্তবাবু। এরপর অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতা হেমন্তকুমার দাসকে দিয়ে অমিতবাবুর অনুপস্থিতিতে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইয়ে নেয় কলেজের পরিচালন সমিতি। সেই ঘটনা অমিতবাবুকে এসএমএস করে জানান লক্ষ্মীকান্তবাবু। নিগ্রহের পর অমিতবাবু যে দিন প্রথম কলেজে আসেন সে দিন আবার লক্ষ্মীকান্তবাবুর সঙ্গে তাঁর বচসা বাধে। এমনকী অমিতবাবুকে ঘাটাল ছাড়া করার হুমকির অভিযোগ উঠেছিল লক্ষ্মীকান্তবাবুর বিরুদ্ধে।

এ হেন লক্ষ্মীকান্তবাবুকে তৃণমূল প্রার্থী করায় খোঁচা দিতে ছাড়ছে না বিরোধীরা কোনও দলই। ঘাটাল শহরের বিজেপি নেতা রামপদ দে-র কথায়, “এমনিতে ঘাটাল কলেজই তৃণমূলের আখড়া। কলেজের টিআইসিকে প্রার্থী করে সেটা আরও পরিষ্কার হয়ে গেল”। কংগ্রেস নেতা জগন্নাথ গোস্বামীর বক্তব্য, “আমি কাউন্সিলর ছিলাম। কলেজের দায়িত্ব সামলে উনি কী ভাবে মানুষের পাশে থাকবেন, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।” কলেজের সেই নিগৃহীত শিক্ষক অমিতবাবু অবশ্য এ দিন বলেন, “আমি তো আগেই বলেছিলাম লক্ষ্মীকান্তবাবু তৃণমূলের ইন-চার্জ। তৃণমূলের এমন সিদ্ধান্তে আমার কথাই প্রমাণিত হল।”

আদতে চন্দ্রকোনার লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা হলেও বছর ১৬ ধরে ঘাটাল শহরেই থাকেন লক্ষ্মীকান্তবাবু। তাঁর বাড়ি ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কুশপাতায়। তবে ওই ওয়ার্ডটি এ বার মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় তৃণমূল তাঁকে টিকিট দিয়েছে ১৬ নম্বরে। লক্ষ্মীকান্তবাবু ওয়েবকুপার জেলা সহ-সভাপতিও। যদিও তাঁর প্রার্থী হওয়ায় অন্যায়ের কিছু দেখছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “এই দুই দায়িত্ব সামলানো খুব একটা সমস্যার নয়। আগেও এমন হয়েছে।

কিন্তু কলেজের যাবতীয় প্রশাসনিক সামলে এলাকার উন্নয়ন করবেন কী করে? সময় দিতে পারবেন তো? লক্ষ্মীকান্তবাবুর জবাব, “আমার কাছে কলেজই আগে। যদি জিতি, তাহলে অবসর সময়ে মানুষের জন্য কাজ করব।”

এ দিনের প্রাথী তালিকায় দেখা গিয়েছে, মহকুমার পাঁচটি পুরসভার বিদায়ী সব চেয়ারম্যানই এ বার পুরভোটে প্রার্থী হচ্ছেন। একমাত্র ব্যতিক্রম চন্দ্রকোনা পুরসভার চেয়ারম্যান রাম কামিল্যা। ক্ষীরপাই, খড়ারের চেয়ারম্যান দুর্গাশঙ্কর পান এবং উত্তম মুখোপাধ্যায়দের ওয়ার্ড সংরক্ষণ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা অন্য ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলের একটি সূত্রের খবর, চন্দ্রকোনায় চেয়ারম্যান রাম কামিল্যার বিরুদ্ধে নানা বেনিয়মের অভিযোগ ওঠায় দল তাঁকে এবার প্রার্থী করেনি। যদিও এ ব্যাপারে তৃণমূল প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। দলের বক্তব্য, রাম কামিল্যার শরীর অসুস্থ। তাই তিনি প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্যও করেননি তিনি।

এ দিনই ঘাটাল মহকুমার রামজীবনপুর ছাড়া চারটি পুরসভাতেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে সিপিএম। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা বলেন, “আমাদের বেশিরভাগ পুরসভাতেই এবার নতুন মুখ। আশা করব, মানুষ আমাদের জয়ী করবেন।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “রামজীবনপুরে ‘ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক মঞ্চ’ গড়ে নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপাতত ঠিক হয়েছে কোনও প্রতীক ছাড়াই লড়াই হবে।”

এ দিন মেদিনীপুরে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে বিজেপি-ও। দল সূত্রের খবর, সকালে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে কলকাতায় যান দলের জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়। রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সঙ্গে দেখা করে তালিকায় সামান্য হেরফের হয়। রাজ্য নেতৃত্ব চূড়ান্ত করে দেওয়ার পর প্রার্থী তালিকা নিয়ে মেদিনীপুরে আসেন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। এখানেই জেলার ৬টি পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। অবশ্য তা পূর্ণাঙ্গ নয়। কিছু ওয়ার্ডের প্রার্থীর নাম সোম-মঙ্গলবারের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে। যেমন ক্ষীরপাইয়ে ১০টি ওয়ার্ড। এ দিন ৯টি ওয়ার্ডের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। রামজীবনপুরে ১১টি ওয়ার্ড রয়েছে। এদিন ৯টি ওয়ার্ডের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। চন্দ্রকোনার ক্ষেত্রে অবশ্য ১২টি ওয়ার্ডের সবক’টিরই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। খড়ারে ১০টি ওয়ার্ড রয়েছে। এ দিন ৩টি ওয়ার্ডের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। ঘাটালের ১৭টি ওয়ার্ডেই প্রার্থীর নাম অবশ্য এ দিন ঘোষণা করা হয়েছে। দলের জেলা সভাপতি তুষারবাবুর দাবি, “রামজীবনপুর-সহ অন্য পুর এলাকাতেও আমাদের ফল খুব ভাল হবে। আমরা একাধিক পুরবোর্ড গঠন করতে পারি।”

ghatal rabindra shatabarshiki mahavidyalaya ghatal municipality 16no ward lakshmikanta ray tmcp tic partha chattopadhyay TMC trinamool municipal election SMS BJP Rahul Sinha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy