জমিতে যখন ধান, তখন আলে লাগান অড়হর ডাল। চাষিদের এমনই পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি দফতর। তাঁরা বলছেন, আলের দু’দিকে সারি দিয়ে অড়হর ডালের চারা পুঁতে দিতে হবে। ডালের চারার দু’টি সারির দূরত্ব হতে হবে অন্তত ১ ফুট। ফলে আলের মাঝখান দিয়ে সহজেই যাতায়াত করা যাবে। আর আলে চাষ করায় জল দাঁড়িয়ে যাওয়াও সম্ভাবনা নেই।
কেন আলে ডাল চাষ করবেন চাষিরা? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর নিমাইচন্দ্র হালদারের কথায়, “অন্য চাষের সঙ্গে জমির আলে শুধুমাত্র বীজের খরচটুকু দিলেই ডাল চাষ করা যায়।’’ সামান্য খরচে বাড়তি লাভ মিলতে পারে চাষির। নইলে পরিবারের জন্য সারা বছরের পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যায়। কৃষি বিশেষজ্ঞের আন্দাজ, এক বিঘে জমিতে এক কাঠার একটু বেশি জমি আলে পাওয়া যায়। তাতে ফলবে কমবেশি ১৫ কিলোগ্রাম অড়হর ডাল। এত দিন যাঁরা চাষের জমিতে অড়হর চাষ করতেন, তাঁরাই আলেও লাগাতেন অড়হর। বিশেষ করে অনুর্বর জমিতে অল্প খরচে ডাল চাষ ভাল হয়। ঝাড়গ্রাম মহকুমার অনুর্বর (ডাহি) জমিতে অড়হর চাষ হয়। লালগড়ের নাড়চা গ্রামের মুখী মুর্ম্মু বলেন, ‘‘অড়হর চাষ করতে চাইলে বীজ ছড়িয়ে দিলেই হল। আর কিছু করার দরকার নেই। ১০ কাঠা জমিতে ৫০ কিলোগ্রাম ফলন পাই। ঘরে ডাল কিনতে হয় না।” লালগড়ের আর এক চাষি হপন মাণ্ডির কথায়, “সার না দিয়েই ১০ কাঠায় ৫০ কিলোগ্রাম ডাল পাই। ঘরে খেয়ে নিই।”
কৃষি দফতরের মতে, কোনও অনুর্বর জমিতে এই চাষ অন্য কারণেও উপযোগী। কম খরচে এই চাষ করলে মাটিতে গাছের পাতা পড়বে, গাছও বেঁচে থাকার তাগিদে নিজের মতো করে রসদ জোগাড়ের চেষ্টা করবে। এ ভাবে ধীরে ধীরে অনুর্বর জমিও অন্য চাষের উপযোগী হয়ে উঠবে।
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, অড়হর ডালের বীজের দাম কিলোগ্রাম প্রতি ৩০-৩৫ টাকা। বিঘা প্রতি তিন থেকে সাড়ে তিন কিলোগ্রাম বীজ লাগে। জ্যৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাস বা আশ্বিন মাস, দুই সময়েই অড়হর চাষ করা যায়। বিঘা প্রতি ফলন ১৭৫ -২২৫ কিলোগ্রাম। অড়হরের দেশি প্রজাতির গাছ এক বার লাগালে ৪-৫ বছর ফলন পাওয়া যায়। গাছ কিছুটা বড় হলে তার থেকে জ্বালানিও মেলে। উন্নত প্রজাতির (শ্বেতা, চুর্ণী, জাগৃতি) অড়হর লাগালে ফলন পেতে ১৮০ দিন সময় লাগে। দু’মাসে ফলন পাওয়া যায়, এমন গাছও (টিএটি-১০, প্রভাত, পুসা আগেতি প্রভৃতি) রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে গাছ ছোট হবে। বাজারে প্রতি কেজি অড়হর ডালের দাম ৩০-৩৫ টাকা। ফলে চাষিদের লাভের পরিমাণ কিছুটা হলেও বাড়বে। অনুর্বর জমিতে চাষ করলে সার দিতে হবে। একর প্রতি ১২ কিলোগ্রাম নাইট্রোজেন, ২৪ কিলোগ্রাম ফসফেট, ২৪ কিলোগ্রাম পটাশ লাগে। তবে সাধারণত চাষিরা সার দেন না। আগে যে ধান বা অন্য কিছু চাষ করেছিল, তার উর্বরতা থেকেই ডাল চাষ হয়ে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy