Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Midnapore

টক্কর শুরু পাড়ায় পাড়ায়, ‘পাল্টা’ কর্মসূচি নিয়ে ঘোরা শুরু বিজেপিরও

ভোটের মুখে পাড়ায় পাড়ায় পৌঁছচ্ছেন বিজেপির নেতা-কর্মীরাও। দলীয় সূত্রে খবর, এ জন্য এক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। নাম, ‘পাড়ায় পাড়ায় ঘুরব, সবার কথা শুনব।’

মজে গিয়েছে পাড়ার পুকুর। দেখতে হাজির বিজেপির নেতা-কর্মীরা (বাঁ দিকে), রাজ্য সরকারের ‘পাড়ায় সমাধানে’র প্রচারমূলক ব্যানার। নিজস্ব চিত্র

মজে গিয়েছে পাড়ার পুকুর। দেখতে হাজির বিজেপির নেতা-কর্মীরা (বাঁ দিকে), রাজ্য সরকারের ‘পাড়ায় সমাধানে’র প্রচারমূলক ব্যানার। নিজস্ব চিত্র

বরুণ দে
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৭:৪০
Share: Save:

শিয়রে বিধানসভা ভোট। সাধারণ মানুষের কাছে আরও ভালভাবে পৌঁছতে ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচি শুরু করেছে তৃণমূল সরকার। ভোটের মুখে পাড়ায় পাড়ায় পৌঁছচ্ছেন বিজেপির নেতা-কর্মীরাও। দলীয় সূত্রে খবর, এ জন্য এক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। নাম, ‘পাড়ায় পাড়ায় ঘুরব, সবার কথা শুনব।’
এলাকায় জনসংযোগে এর আগে 'বঙ্গধ্বনি যাত্রা' করেছে তৃণমূল। পাল্টা গৃহ-সম্পর্ক অভিযানে 'আর নয় অন্যায়’ কর্মসূচি করেছে বিজেপি। কেন্দ্রের কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে তৃণমূল যত শান দিয়েছে, বিজেপিও পাল্টা ‘শুনুন চাষি ভাই’, ‘চাটাই বৈঠক’ প্রভৃতি কর্মসূচি করে এলাকায় এলাকায় কৃষক- মন পাওয়ার চেষ্টা করেছে। মানুষের কাছে পৌঁছতে ‘সেবা সপ্তাহ’ পালন করেছে। এ বার লড়াই পাড়ায় পাড়ায়। দিন কয়েক আগে মেদিনীপুরে এসে তৃণমূলের কর্মসূচিকে কটাক্ষ করেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আবার না কি বলছে, পাড়ায় পাড়ায় সমাধান হবে। কিসের সমাধান? স্বামী- স্ত্রীর ঝগড়ার সমাধান? না কি পাশের বাড়ির সঙ্গে ঝগড়ার সমাধান হবে?’’ এই আবহে বিজেপির পাড়ায় পাড়ায় ঘোরার কর্মসূচিকে তৃণমূল সরকারের ‘পাড়ায় সমাধানের’ ‘পাল্টা’ হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল।
যদিও বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শমিত দাশের দাবি, ‘‘কোনও পাল্টা কর্মসূচি নয়, এটা আমাদের দলীয় কর্মসূচি। দলের নেতাকর্মীরা পাড়ায় পাড়ায় যাচ্ছেন। মানুষের সমস্যার কথা শুনছেন। সমাধানেরও চেষ্টা করছেন।’’ তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির খোঁচা, ‘‘আমাদের সরকারের পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এটা বিজেপির লোকেরাও বুঝতে পারছেন।’’
শুরুতে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি শুরু করেছে তৃণমূল সরকার। পরে শুরু হয়েছে ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচিও। প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, ‘দুয়ারে সরকারের’ মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান হচ্ছে। আর ‘পাড়ায় সমাধানের’ মাধ্যমে এলাকাগত সমস্যার সমাধান হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ছোট-মাঝারি কাজ এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এরফলে, এলাকার ছোট- মাঝারি সমস্যার দ্রুত সমাধান সম্ভব হচ্ছে।’’ যেমন নিকাশি নালার মাধ্যমে জল নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা, রাস্তা নির্মাণ, আবর্জনা সাফাইয়ের ব্যবস্থা করা, কালভার্ট তৈরি, পানীয় জলের অতিরিক্ত ট্যাপকল তৈরি, পাবলিক শৌচাগার তৈরি, সাবমার্সিবল পাম্প তৈরি, স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং স্কুলের মানোন্নয়ন প্রভৃতি। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৪৮০টি প্রকল্প এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কাজ শুরু এবং শেষের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
ঠিক এই সময়েই পাড়ায় পাড়ায় যাচ্ছেন বিজেপির নেতা-কর্মীরাও। সম্প্রতি যেমন জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর গুছাইত মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন পাড়ায় গিয়েছেন। কোথাও তাঁকে শুনতে হয়েছে, ঠিক মতো পানীয় জল আসে না, কখনও কখনও নোংরা জল পড়ে, কোথাও আবার অনুযোগ, এলাকার পুকুরটি সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। পুরসভায় বারবার জানিয়েও সুরাহা হয়নি। শঙ্কর বলেন, ‘‘সম্প্রতি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাল্লাপুকুর এলাকায় গিয়েছিলাম। স্থানীয়দের কাছে শুনি, পুকুরটি দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি।’’
কিন্তু, সরকারে তো রয়েছে তৃণমূল। বিজেপি সমস্যার সমাধান করবে কী ভাবে?
বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত বলেন, ‘‘সমস্যাগুলির বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। পুর- এলাকার সমস্যা হলে পুর-কর্তৃপক্ষকে জানাব। পঞ্চায়েত এলাকার সমস্যা হলে পঞ্চায়েত- কর্তৃপক্ষকে জানাব। প্রয়োজনে সমস্যার সমাধানের দাবিকে সামনে রেখে এলাকায় আন্দোলনও হবে।’’ শমিতের কটাক্ষ, ‘‘দশ বছর হয়ে গেল তৃণমূল সরকারে রয়েছে। এতদিন মানুষ সরকারকে খুঁজে পায়নি। এখন সরকার বলছে, আমরা কিন্তু আছি।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত পাল্টা বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছে আমাদের সরকার।’’
পাড়ায় পাড়ায় এই টক্করে কে এগিয়ে যায়, সেটাই দেখার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC Midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE