Advertisement
E-Paper

সরকারি জল প্রকল্পের জন্য টাকা, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা

সরকারি জল প্রকল্পের জন্য রসিদ ছাপিয়ে গ্রাহকদের থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল শাসক দলের এক নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থল, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা-১ ব্লকের জুনশোল গ্রাম। যদিও প্রায় তিন মাস আগে এ মর্মে অভিযোগ জমা পড়লেও এ পর্যন্ত সে ব্যাপারে পদক্ষেপ করেনি ব্লক প্রশাসন। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে নড়াচড়া শুরু হয়েছে জেনে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত রসিদ চালু রেখেছিলেন অভিযুক্তেরা। এখন খাতায় নাম লিখে টাকা তোলা হচ্ছে বলে বলে অভিযোগ।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৪
এ ভাবেই রসিদ দিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ।—নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই রসিদ দিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ।—নিজস্ব চিত্র।

সরকারি জল প্রকল্পের জন্য রসিদ ছাপিয়ে গ্রাহকদের থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল শাসক দলের এক নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থল, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা-১ ব্লকের জুনশোল গ্রাম। যদিও প্রায় তিন মাস আগে এ মর্মে অভিযোগ জমা পড়লেও এ পর্যন্ত সে ব্যাপারে পদক্ষেপ করেনি ব্লক প্রশাসন। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে নড়াচড়া শুরু হয়েছে জেনে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত রসিদ চালু রেখেছিলেন অভিযুক্তেরা। এখন খাতায় নাম লিখে টাকা তোলা হচ্ছে বলে বলে অভিযোগ।

২০০৯ সালে জুনশোল গ্রামে জেলা পরিষদের মাধ্যমে কেন্দ্র সরকারের সজলধারা প্রকল্প চালু হয়। এই প্রকল্পে পাইপ লাইনে জল সরবরাহের জন্য দিনে দু’-তিন বার পাম্প চালানো হয়। বাড়িতেও জলের সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাইপ লাইন বা পাম্পে ছোটখাটো মেরামতির প্রয়োজন হলে আগে চাঁদা তুলে উপভোক্তাদের কমিটি তা সারিয়ে নিত। ২০১২ সাল থেকে সে কমিটির অস্তিত্ব নেই। পরিবর্তে ‘জুনশোল সজলধারা জল প্রকল্প’-এর নামে রসিদ ছাপিয়ে শুরু হয় নিয়মিত টাকা তোলা। সে রসিদে জ্বলজ্বল করছে ‘মা মাটি মানুষ’-এর উল্লেখ। রাস্তার কল থেকে জল নিলে প্রতি মাসে ১০-৩০ টাকা, বাড়িতে সংযোগ থাকলে মাসিক ৫০ টাকা আর বাড়িতে জলের সংযোগ নেওয়ার জন্য এককালীন ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দিতে হয় কমিটির বকলমে স্থানীয় তৃণমূল নেতা শুভেন্দু মণ্ডলকে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, সজলধারা প্রকল্পে কোনও কর্মীকে বেতন দেওয়া বা যান্ত্রিক ত্রুটি মেরামতের জন্য পঞ্চায়েত চাইলে, উপভোক্তাদের নির্দিষ্ট কমিটি গড়ে যৎসামান্য টাকা আদায় করতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তেমন কোনও কমিটি গড়া হয়নি বলে অভিযোগ। যদিও এ বিষয়ে গোড়ায় মুখ খোলেননি গ্রামবাসীরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, “জলে থেকে হাঙরের সঙ্গে লড়ে কী লাভ!” তবে গত জানুয়ারি মাসে তাঁদের একাংশের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়। অভিযোগ জানানো হয় বিডিও-র কাছে। অভিযোগকারীদের তরফে গোপাল সাহা, সুনীল হাঁসদাদের বক্তব্য, “এ ভাবে টাকা তোলা বেআইনি। তা সত্ত্বেও ওই তৃণমূল নেতা এমন করে চলেছেন। আগে ব্যাপারটা নিয়ে অস্বস্তি হচ্ছিল। এখন মনে হচ্ছে প্রতিবাদের প্রয়োজন রয়েছে।” মাস তিনেক আগে ব্লক অফিসে অভিযোগ জানানোর পরেও এ পর্যন্ত প্রশাসন তা নিয়ে কিছু না করায় হতাশ তাঁরা।

জলের জন্য টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেননি শুভেন্দুবাবু। তাঁর বক্তব্য, “রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই সামান্য টাকা নেওয়া হয়।” কিন্তু পঞ্চায়েতের দায়িত্বে থাকা প্রকল্পের টাকা আপনারা তুলছেন কেন? শুভেন্দুবাবুর দাবি, “পাইপ লাইনে যান্ত্রিক ত্রুটি হলে পঞ্চায়েতকে জানালে, সে কাজ হতে কম করে দু’-তিন দিন লাগে। অথচ, এক দিন জল না পেলে এলাকাবাসীই সমস্যায় পড়বেন। তাই টাকা তুলে সমস্যা মেটাই।” সংগৃহীত টাকা কী ভাবে খরচ হয় তার হিসেবও দিয়েছেন ওই তৃণমূল নেতা। দাবি করেছেন, মাসে দু’হাজার টাকা ওঠে। নিয়মিত যিনি পাম্প চালান, তাঁকে মাসে এক হাজার টাকা দেওয়া হয়। আর যিনি বাড়ি-বাড়ি ঘুরে গ্রাহকদের থেকে টাকা তোলেন, তাঁকে মাসিক ছ-সাতশো টাকা দেওয়া হয়। মাসে বড় জোর শ’তিনেক টাকা বাঁচে। তা দিয়েই রক্ষণাবেক্ষণ চলে।

এই টাকা তোলার কথা একেবারেই জানা নেই বলে দাবি করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। গড়বেতা ব্লক তৃণমূল সভাপতি দিলীপ পালের কথায়, “খোঁজ নিয়ে দেখব।” আর সংশ্লিষ্ট আমলাগোড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান শোভা বসু বলছেন, “কমিটি গড়ে বিদ্যুৎ বিল বা অন্য খরচ তোলার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সজলধারা প্রকল্পের জন্য রসিদ ছাপিয়ে কেউ টাকা তুলছে, এ রকম শুনিনি। যদি তা হয়ে থাকে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গড়বেতা ১-এর বিডিও বিমলকুমার শর্মা জানান, ওই অভিযোগটি তিনি এখনও দেখে উঠতে পারেননি। তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেছেন, “এই পদ্ধতিতে টাকা তোলা সম্পূর্ণ বেআইনি। অভিযোগের তদন্ত নিশ্চয়ই হবে। বিডিও-র কাছে এত দিন পর্যন্ত অভিযোগটি পড়ে থাকল কেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে।”

water tax Garbeta TMC leader South Bengal news Sumon Ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy