Advertisement
১০ মে ২০২৪

নরেন্দ্রপুরের দুই কৃতীর শিকড় জেলায়

উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম দশে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দুই ছাত্র। তবে জেলার কোনও স্কুল নয়, তারা নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র। ৪৮৫ নম্বর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে অরিন্দম সাউ। মার্কশিট হাতে নিয়ে শুক্রবার গভীর রাতে নরেন্দ্রপুর থেকে বাবার সঙ্গে দাঁতন-২ ব্লকের জাহালদার বামনাসাইয়ের গ্রামের বাড়িতে ফিরেছে সে। শনিবার সকাল থেকে তার বাড়িতে পড়শিদের ভিড়। এ দিনই সংবর্ধনা দিয়ে গিয়েছেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি।

মেদিনীপুরের বাড়িতে পার্থসারথি ঘোষ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

মেদিনীপুরের বাড়িতে পার্থসারথি ঘোষ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৫ ০২:০৫
Share: Save:

উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম দশে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দুই ছাত্র। তবে জেলার কোনও স্কুল নয়, তারা নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র।
৪৮৫ নম্বর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে অরিন্দম সাউ। মার্কশিট হাতে নিয়ে শুক্রবার গভীর রাতে নরেন্দ্রপুর থেকে বাবার সঙ্গে দাঁতন-২ ব্লকের জাহালদার বামনাসাইয়ের গ্রামের বাড়িতে ফিরেছে সে। শনিবার সকাল থেকে তার বাড়িতে পড়শিদের ভিড়। এ দিনই সংবর্ধনা দিয়ে গিয়েছেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি।
অরিন্দম কিন্তু ব্যস্ত মেডিক্যাল প্রবেশিকার প্রস্তুতিতে। এইমস-সহ সর্বভারতীয় স্তরে দু’টি মেডিক্যাল জয়েন্ট আপাতত তাঁর নজরে।
ছোট থেকেই অরিন্দমের স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। বাবার অসুস্থতা জেদ বাড়িয়ে দিয়েছে। অরিন্দমের বাবা অভিমন্যু সাউ জন্ম থেকেই পোলিও আক্রান্ত। তিনি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। তাই লড়াইটা চোখের সামনে দেখে নিজেকে শক্ত করেছে অরিন্দম। গ্রামের বেহাল চিকিৎসা ব্যবস্থাও তাকে নাড়া দিয়ে গিয়েছে। বাবা কষ্ট করে জোগাড় করে ফেলেছেন পড়ার খরচের অনেকটাই। এ দিকে অরিন্দম ‘কিশোর বৈজ্ঞানিক প্রোৎসাহন যোজনা’র মেধাবৃত্তির অধিকারী হয়েছে। কিছুদিন আগেই সুযোগ এসেছে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স’ থেকেও। মেধাবী হিসাবে সাফল্য এসেছিল মাধ্যমিকেই। জাহালদা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কালীপদ প্রধান বলেন, “মাধ্যমিকে স্কুলের সেরা হয়েছিল অরিন্দম। তারপর ওর বাবা নরেন্দ্রপুরে ভর্তি করেছিলেন। এখন মনে হচ্ছে তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।’’ ছেলের সাফল্যের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি রিনা সাউ। উচ্ছ্বসিত অভিমন্যুবাবু বলেন, “আশা ছিল ভাল ফল করবে। তবে এতটা আশা করিনি।” শুক্রবারই ব্লক প্রশাসন পক্ষ থেকে বাড়িতে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা। তা দেখে উচ্ছ্বসিত অরিন্দমের প্রতিবেশী হরিপদ সাউ। তিনি বলেন, “আমার গ্রামের ছেলের এই সাফল্য সকলের মধ্যে আনন্দ এনে দিয়েছে। আমরা চাই ওর স্বপ্ন পূরণ হোক। তাতে গ্রামেরও উন্নতি।’’ আর অরিন্দম বলে, “সকলের ভালবাসায় স্বপ্ন পূরণের জেদ আরও বেড়ে গেল।”

অরিন্দম সাউ। নিজস্ব চিত্র।

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন থেকেই পার্থসারথি ঘোষ উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৮১ নম্বর পেয়ে দশম স্থানে। তার বাড়ি মেদিনীপুর শহরের ধর্মার প্রদ্যোত্‌নগরে। বাবা গৌতমবাবু শিক্ষক। মা সোনালিদেবী গৃহবধূ। পার্থ অবশ্য প্রাথমিকের চৌকাঠ পেরোনোর পরই নরেন্দ্রপুরে চলে যায়। প্রাথমিকের পড়াশোনা সিপাইবাজারের সরস্বতী শিশু মন্দিরে। পার্থসারথি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে চায়। তবে সব থেকে বেশি নম্বর পেয়েছে বাংলায় ৯৯। একই নম্বর অবশ্য পেয়েছে রসায়নেও। অবসরে গোয়েন্দা গল্প, ফুটবল আর সিনেমা তার সঙ্গী।

শনিবারই বাড়ি ফিরেছে পার্থ। তার কথায়, “এক সময় খুব ফুটবল খেলেছি। এখন আর ততটা খেলা হয় না।” আর পছন্দ ইলিশ। শুক্রবার ফল বেরনোর সময় মেদিনীপুরের বাড়িতে তখন ছিলেন মা সোনালিদেবী এবং বোন শ্রেয়া। ছেলে দশম স্থান পেয়েছে দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। সে মুহূর্তে দাদার ভাগের আদরটুকুও সবটা পেয়ে গিয়েছে শ্রেয়া। খুশি সেও। পার্থসারথির বাড়িতেও পৌঁছে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছাপত্র। আমন্ত্রণ পেয়ে শুক্রবার বিকেলে মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্তের দফতরে আসেন সোনালিদেবী। কৃতী ছাত্রের মায়ের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাপত্র তুলে দেন অমিতাভবাবু। সঙ্গে ছিল পুষ্পস্তবক আর মিষ্টির প্যাকেট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE