প্রতীকী ছবি।
রাজ্য সরকারের পর কেন্দ্রীয় সরকারের স্বীকৃতি পেতে চলেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দুই শিক্ষক রামকৃষ্ণ মাইতি ও মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি। এর আগে ২০১৫ সালে দু’জনেই রাজ্যের ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কার পেয়েছিলেন। অবসরের ঠিক দু’বছর আগে এ বার শিক্ষকতায় জাতীয় পুরস্কার পেতে চলেছেন নারায়ণগড়ের কুশবসান হাইস্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষক রামকৃষ্ণবাবু। ৫৩ বছর বয়সী আদর্শবাদী শিক্ষক মঙ্গলপ্রসাদবাবু পড়ান গড়বেতার সন্ধীপুর পঞ্চায়েতের রাজবল্লভপুর গড়বেড়িয়া প্রাথমিক স্কুলে। ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নেবেন তিনিও। ১ অগস্ট কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে পুরস্কারের কথা জানানো হয় রামকৃষ্ণবাবুকে। ১৭ অগস্ট পুরস্কার প্রাপ্তির চিঠি পান মঙ্গলপ্রসাদবাবু।
জেলা থেকে হাইস্কুলের শিক্ষক হিসাবে একমাত্র রামকৃষ্ণবাবুই এই পুরস্কার পাচ্ছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি সমাজসেবার কাজও করেন তিনি। সে কারণেই জাতীয় পুরস্কার। দু’বছর আগে একই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে ‘শিক্ষারত্ন’ দিয়েছিল রাজ্য। তাঁর পুরস্কারে খুশির হাওয়া স্কুলে। গর্বিত শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরাও। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমর শীলের কথায়, “প্রতি বছরই রাজ্য থেকে জাতীয় পুরস্কার পান কয়েক জন শিক্ষক। এ বার জেলা থেকে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে রামকৃষ্ণ মাইতি পুরস্কার পাচ্ছেন। আমরা গর্বিত।” পাশাপাশি, মঙ্গলপ্রসাদবাবুর পুরস্কারে খুশি গড়বেতার সাধারণ মানুষ। আপ্লুত তাঁর স্কুলের পড়ুয়া ও সহকর্মীরাও।
১৯৮২ সালের ৬ অগস্ট দাঁতন-২ ব্লকের কেশরম্ভা হাইস্কুলের ডেপুটেশনে শিক্ষকতা শুরু করেন স্কুলেরই ছাত্র রামকৃষ্ণবাবু। পরে বিভিন্ন স্কুলেই শিক্ষকতা করেছেন তিনি। ১৯৮৮ সালের ১১ জানুয়ারি সহ-শিক্ষকের পদে যোগ দিয়েছিলেন কুশবসান হাইস্কুলে। গত ২৯ বছর ধরে পড়ানোর পাশাপাশি ছাত্রাবাস পরিচালনা, পরীক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা, এমনকী অফিসের কাজকর্মও সামলেছেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই শরীরশিক্ষায় জেলা ও রাজ্যস্তরের খেতাব অর্জন করেছেন স্কুলের বহু পড়ুয়া। বিদ্যালয়ের অগ্রজ শিক্ষক বিষ্ণুপদ খাটুয়ার হাত ধরে ছিটেবেড়ার বিদ্যালয় ভবনটিকে বড় করে তোলার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন তিনিই। ১৯৯৮ সালে যোগ দেন ‘অখিল ভারত বিবেকানন্দ মহামণ্ডল’-এ। তখন থেকেই স্বামী বিবেকানন্দের ত্যাগ ও সেবার মন্ত্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সমাজসেবার কাজে। ২০০৮ সালে বিধ্বংসী বন্যা হয় তাঁর স্কুলের এলাকায়। প্রাক্তন ছাত্রদের নিয়ে ত্রাণের কাজে নামেন রামকৃষ্ণবাবু। তাঁর এই সব কাজকর্মেই সাড়া ফেলে জেলার শিক্ষক মহলে।
১৯৯৩ সালে ২৮ বছর বয়সে গড়বেতার রায়খা প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন মঙ্গলপ্রসাদবাবু। বছর চারেক পর যোগ দেন রাজবল্লভপুর গড়বেড়িয়া প্রাথমিক স্কুলে। বরাবরই পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের সাংস্কৃতিক চর্চা, হাতেকলমে শিক্ষা, চরিত্র গঠন, বিজ্ঞানমনস্ক মনোভাব গড়ে তোলার ব্যাপারে উদ্যোগী তিনি। তাঁর নজর থাকে স্কুলের পরিবেশের উপরও। এ কারণে গ্রামবাসী ও অভিভাবকদের কাছে আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি। গ্রামে সবুজায়নের লক্ষ্যে পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুলে নানা রকমের গাছ লাগিয়ে বন দফতরের প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। তিনি। শিক্ষকতার সঙ্গে সমাজসেবামূলক কাজেও সব সময় নিজেকে যুক্ত রেখেছেন মঙ্গলপ্রসাদবাবু। কবি ও সাহিত্যিক হিসেবেও এলাকায় তাঁর খ্যাতি রয়েছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ কবিতা সংসদ থেকে ‘বাংলা সাহিত্য পদক’ পেয়েছেন। পেয়েছেন পল্লিকবি জসীমউদ্দিন পুরস্কার। শিশুদের জন্য গল্প, প্রবন্ধ লিখেছেন। দীর্ঘ দিন ধরেই জেলার সাক্ষরতা আন্দোলনের সঙ্গেও জড়িত তিনি। নিয়মিত কলকাতার আকাশবাণী প্রাত্যহিকী অনুষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত তিনি।
পুরস্কার পাওয়ার পরে কী বলছেন দুই শিক্ষক? মঙ্গলপ্রসাদবাবু জানিয়েছেন, পুরস্কারের ৫০ হাজার টাকা তিনি দেবেন স্কুলকে। তাঁর কথায়, “আমার দাদা শিক্ষক জগদীশচন্দ্র মাইতি ও ছাত্রাবস্থায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মতিলাল দাসমহাপাত্রের কাছ থেকেই আমার সব কিছু শেখা। স্কুলের সেবা করা শিখেছিলাম তাঁদের থেকে। ঠিক সে ভাবেই কাজ করে গিয়েছি।” এই সম্মানে আনন্দ প্রকাশের পাশাপাশি শিক্ষক হিসেবে এ ভাবেই সেবার কাজে নিজেকে ব্রতী রাখবেন বলে জানিয়েছেন রামকৃষ্ণবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy