— ফাইল চিত্র।
২০১৬-র ৮ নভেম্বরের দিনটা এখনও ভুলতে পারেননি দিঘার হোটেল ব্যবসায়ীরা।
কেন্দ্রীয় সরকারের নোটবন্দির ঘোষণা দগদগে ঘা-এর মতো চিহ্ন রেখে গিয়েছে দিঘায়। ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের আঘাত পর্যটনকেন্দ্র দিঘার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। টেলিভিশন ও সংবাদমাধ্যমে সেই ঘোষণার পর দিঘা জুড়ে পর্যটকমহলে রীতিমত হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। বেড়ানোর সুখস্মৃতি ভুলে সকলেই তখন বাড়িতে ফেরার জন্য উতলা। হোটেলের বিল মেটাতে এটিএম কাউন্টারগুলোতে তড়িঘড়ি পড়ে গিয়েছিল লম্বা লাইন। বাদ যায়নি দিঘা রেল স্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির অফিসও।
নোটবন্দির ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কার্যত পর্যটকশূন্য হয়ে গিয়েছিল দিঘা। যা অনেক বাংলা বনধ বা ধর্মঘটের সময়েও দেখা যানি বলে হোটেল মালিকের দাবি। দিন তিন-চারেকের জন্য দিঘায় আসা বহু পর্যটক মাঝপথেই সফর বাতিল করে বাড়ির পথ ধরেন। যাঁরা অগ্রিম বুকিং করেছিলেন, তাঁরাও সমস্ত বুকিং বাতিল করে দেন।
২০১৬-র ৮ নভেম্বরের ওই ঘোষণার পর থেকে দিন পনেরো ধরে সৈকত শহর একেবারেই ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল বলে হোটেল ব্যবসায়ী থেকে দোকনদাররা জানিয়েছেন। যার ক্ষতি এখনও তাঁরা কাটিয়ে উঠতে পারেননি বলে হোটেল ব্যবসায়ীদের অধিকাংশের দাবি। শুধু দিঘা নয়, শংকরপুর মন্দারমণি ও তাজপুর পর্যটনকেন্দ্রেরও প্রায় একই অবস্থা হয়।
দিঘার অধিকাংশ হোটেল মালিকের দাবি, যে উদ্দেশ্য নিয়ে নোটবন্দির ঘটনা ঘটেছিল, তা কার্যত পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে কোনও ফল দেয়নি। এখনও দিঘায় অল্প সংখ্যক হোটেলে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়।
দিঘা শংকরপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, “ওই সময় দিন পনেরো দিঘা প্রায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ায় হোটেল মালিকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল পর্যটকদেরও। সেই সময় বলা হয়েছিল, বেশিরভাগ লেনদেন হবে অনলাইনে। কিন্তু কোথায় কী? ওই ঘটনার পর দু’বছর কেটে গেল। এখনও দিঘায় বেশিরভাগ হোটেলেই নগদে লেনদেন হয়।’’
দিঘা ও মন্দারমণির অনেক বড় বড় হোটেল কর্তৃপক্ষ বেজায় বিপত্তিতে পড়েছিলেন নোট বন্দির ফলে। কারণ, ওই সব হোটেলে ২০-২৫ জন কর্মী কাজ করেন। তাঁদের বেতন দেওয়ার জন্য নগদ টাকার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু নোটবন্দির ফলে সকলকে সেই সময় বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। অনেক কর্মী সেই সময় কাজ ছেড়ে দেওয়া কর্মী সঙ্কটও দেখা দিয়েছিল হোটেলগুলিতে।
প্রতি বছর নভেম্বর মাসে দিঘায় বেড়াতে আসেন কলকাতার বেহালার বাসিন্দা চন্দন নস্কর। এবারও এসেছেন। দু’ বছর আগে নোটবন্দির জাঁতাকলে পড়ে নাকাল হতে হয়েছিল তাঁকেও, সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘‘এখনও ভাল মনে আছে। ওল্ড দিঘার একটা হোটেলে উঠেছিলাম। নোটবন্দির ঘোষণার পরদিন সকালেই হোটেল ছেড়ে বাড়ি ফেরার বাস ধরতে যাই। সে কী লম্বা লাইন। খুব হয়রান হতে হয়েছিল।’’
তাজপুরের একটি হোটেলের মালিক জয়ন্ত হালদার বলেন, “হোটেলে যে অল্প কয়েকজন পর্যটক ছিলেন, তাঁরা আর্থিক অসুবিধায় পড়ে খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেন। অনেকে হোটেল ছেড়ে যাওয়ার সময় পুরো টাকাও মেটাতে পারেননি। সে সব ক্ষতির কথা আর মনে করতে চাই না। তবে এটা ঠিক যে নোটবন্দির ফলে আমাদের কোনও লাভ হয়নি।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy