ঘোড়াধরা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।
অরণ্যশহর ঝাড়গ্রামে গণহারে শুকিয়ে মরছে শালগাছ।
শাল-সবুজের সৌন্দর্য্যের টানেই ঝাড়গ্রামে আসেন পর্যটকরা। কিন্তু গত দশ বছরে সরকারি নানা পরিকাঠামো তৈরির জন্য নির্বিচারে শালগাছ কাটা হয়েছে। ২০১৭ সালে ঝাড়গ্রাম পৃথক জেলা হওয়ার পরে জেলা শহরে অজস্র বহুতল ও একাধিক মল তৈরি হয়েছে। নিকাশি নালা তৈরি হয়েছে পরিকল্পনাবিহীন ভাবে। ফলে ভারী বৃষ্টি হলেই শালগাছের গোড়ায় জল জমছে। রাস্তা, নর্দমা তৈরির জন্য মাটি কাটার ফলে শালগাছের শিকড়েও কোপ পড়ছে। ফলে একের পর এক শালগাছ শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।
অরণ্যশহরের শালগাছগুলি প্রাকৃতিক ভাবেই সৃষ্টি। শহরের প্রবীণা মণিকা মজুমদার বলছেন, ‘‘চার-পাঁচ দশক আগে শালগাছের বীজ থেকে পথের ধারে নতুন গাছ জন্মাতেও দেখেছি। কিন্তু এখন তো শহরে শালগাছের সংখ্যাটাই হাতে গোনা হয়ে গিয়েছে। মরা শালগাছের সংখ্যাটাই বেশি। অধিকাংশ রাস্তায় ধারে এখন আর শালগাছ চোখে পড়ে না। শহরের মূল রাস্তার ধারের শালগাছও গুটিকয়েকে ঠেকেছে।’’ ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন বনকর্তা সমীর মজুমদার জানাচ্ছেন, সাধারণত একটি শালগাছ ১২০ থেকে ১৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গল এলাকায় মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ শালগাছের ফুলে বীজ তৈরি হয়। এপ্রিল মাস জুড়ে সেই বীজ মাটিতে পড়ে। প্রাকৃতিক ভাবেই সেই বীজ থেকে নতুন গাছ হয়। কিন্তু শহরের রাস্তার ধারের শালগাছগুলির বীজ মাটিতে পড়লেও বিভিন্ন ‘বায়োটিক ফ্যাক্টরে’র জন্য প্রাকৃতিক ভাবে গাছ জন্মানোর পরিস্থিতি আর নেই বললেই চলে। সেই কারণে শহরে নতুন শালগাছ হচ্ছে না। বয়সজনিত কারণ এবং ভূমিক্ষয়ে পুরনো শালগাছগুলিও শুকিয়ে মরে যাচ্ছে।
২০০০ সালে বন দফতর শহরের কয়েকটি রাস্তার ধারে পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কিছু শালগাছ রোপণ করে উপযুক্ত পরিচর্যা করেছিল। কয়েকটি গাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। ফলে, এই শহরকে এখনও রোপণ করে শালসবুজে ভরিয়ে তোলার সুযোগ রয়েছে বলে বন দফতরের দাবি। তবে শহরে বনসৃজনের স্থানাভাব রয়েছে। রাস্তার ধারের মালিকানা পূর্ত দফতর ও পুরসভার। অবশিষ্ট শালগাছগুলি পুরসভা ও পূর্ত দফতরের এলাকাতেই রয়েছে। কিন্তু তরা এ ব্যাপারে সচেতন নয় বলেই অভিযোগ। পরিবেশ কর্মী সৌরভ মুদলি বলেন, ‘‘অবশিষ্ট পুরনো শালগাছগুলিকে বাঁচাতে গেলে অতি দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে একদিন অরণ্য শহরের শালগাছগুলি ইতিহাসে ঠাঁই নেবে।’’
ঝাড়গ্রাম পুরসভার চেয়ারপার্সন কবিতা ঘোষ মানছেন, শহরে শালগাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তবে তিনি বলছেন, ‘‘সবুজায়ন ও নগরায়ণের মধ্যে সমতা বজায় রাখা চেষ্টা হচ্ছে। শহরের রাস্তার ধারে নতুন শালগাছ রোপণ করে বাঁচানোর জন্য বন দফতরের সাহায্য চাওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy