Advertisement
০৫ মে ২০২৪

জলের সঙ্কট সুপার স্পেশ্যালিটিতেও

ব্লক হাসপাতাল গ্রামীণে উন্নীত হয়েছে। মহকুমা হাসপাতাল হয়েছে জেলা হাসপাতাল। পাশাপাশি চালু হয়েছে একাধিক সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালও। কিন্তু কোথাওই হাসপাতাল চত্বরে নেই পরিস্রুত পানীয় জলের জোগান। পশ্চিম মেদিনীপুরের সেই ‘নির্জলা’ হাসপাতালের খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ শেষ কিস্তি।শুধু গ্রামীণ হাসপাতাল বা ব্লক হাসপাতালগুলি নয়। পরিস্রুত পানীয় জলের অধিকার থেকে বঞ্চিত সুপার স্পেশ্যালিটি মর্যাদা পাওয়া ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালও। চিকিৎসা পরিষেবা, নার্স বা চিকিৎসকের সংখ্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। কিন্তু সামান্য জলের ব্যবস্থাও তথৈ ব চ।

জলের জন্য ভরসা বাইরের কলেই। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

জলের জন্য ভরসা বাইরের কলেই। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

শুধু গ্রামীণ হাসপাতাল বা ব্লক হাসপাতালগুলি নয়। পরিস্রুত পানীয় জলের অধিকার থেকে বঞ্চিত সুপার স্পেশ্যালিটি মর্যাদা পাওয়া ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালও। চিকিৎসা পরিষেবা, নার্স বা চিকিৎসকের সংখ্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। কিন্তু সামান্য জলের ব্যবস্থাও তথৈ ব চ।

ঘাটাল মহকুমা ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ভরসা একটি মাত্র সিমেন্টের জলাধার। সেখান থেকেই রোগীরা নিয়ে যান পানীয় জল। আবার ওই জলেই চলে স্নান। অভিযোগ, পানীয় জলের মান নিয়েও স্বাস্থ্যকর্তাদের হুঁশই নেই। অথচ, রোগীদের পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করার বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের পরিষ্কার নির্দেশিকা রয়েছে।

অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওয়ার্ডের কিছু এলাকায় পানীয় জল পরিস্রুত করার যন্ত্র রয়েছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়— এ কথা ঠিক। তবে প্রতি ওয়ার্ডে ওই যন্ত্র বসানোর বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।” তাঁর দাবি, ইতিমধ্যেই সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে ওই যন্ত্র বসানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার দাবি, “জলাধার গুলি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত পানীয় জল পরিস্রুত করার যন্ত্র বসানো হবে।”

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সত্তরের দশকের মাঝামাঝি চালু হয়েছিল ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল। উদ্বোধনের কয়েক বছরের মধ্যেই হাসপাতাল চত্তরেই তৈরি হয়েছিল স্থায়ী জলাধারটি। চলতি বছর সেই হাসপাতালেই ঘটা করে চালু হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালও। হা

সপাতালে চারটি জল শোধনকারী যন্ত্র রয়েছে। মাত্র দু’টি রোগীদের জন্য। বাকি দু’টি চিকিৎসক ও কর্মীরা ব্যবহার করেন। রোগীদের জন্য রান্নাও হয় পাম্পের জলেই। কেন্দ্রীয়ভাবে বাতানুকুল, পাঁচতলা নীল-সাদা ভবনটিতে রোগী ভর্তিও নেওয়া হচ্ছে। ৩০০ শয্যার ওই ভবনে শিশু, স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগ, সার্জারি, প্যাথোলজি, চোখ, দাঁত, ইএনটি, অর্থোপেডিক-সহ সমস্ত বিভাগই চালু হওয়ার কথা। সমস্ত বহিবির্ভাগ ইতিমধ্যেই সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে। এক্স-রে, পিপিপি মডেলে সিটি স্ক্যানও চালুর প্রস্তুতিও চলছে। শিশু বিভাগও চলছে ওই ভবনেই। গড়ে ২৫০-২৬০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। বহিবির্ভাগে গড়ে সাত-আটশো রোগীর ভিড় হয়। সঙ্গে থাকেন আত্মীয়রাও। স্বাভাবিক ভাবেই পানীয় জলের চাহিদাও কম নয়।

অথচ মান্ধাতার আমলের জলাধারটি নিয়মিত পরিষ্কারও করা হয় না বলে রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ। এমনকী এত বছর পরেও ওই জলাধারের কাছে রোগীর আত্মীয়দের স্নান বন্ধ করা যায়নি। ভর্তি থাকা রোগীদের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে শৌচাগার থাকলেও রোগীর আত্মীয়েরা ওই জলাধার থেকে জল নিয়েই স্নান করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘাটাল হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের সাফ কথা, “ঘাটাল হাসপাতালের অধিকাংশ রোগীই পেটের নানা অসুখে ভোগেন। পাম্পের তোলা জল খেলে ওষুধেও রোগ সারবে না।’’ ঘাটাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অমিয় সাঁতরা, নসিব আলি, আরতি দাসেদের কথায়, “চিকিৎসকেরা বারবার জল ফুটিয়ে খাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু হাসপাতালে তো আমাদের ওই নোংরা জলই খেতে হচ্ছে। জল পরিষ্কার করার যন্ত্র আছে, তা থেকে জল বেরোয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ghatal Water crisis Patients family Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE