বাজারের কয়েক’শ মিটারের ব্যবধানে একই দলের তিন কার্যালয়। দিঘা-মেচেদা সড়কের ধারে থাকা চণ্ডীপুর বাজারের ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় তো আছেই। এছাড়াও রয়েছে বিধায়কের দলীয় কার্যালয় ও সাংসদ কার্যালয়। চণ্ডীপুর এলাকার বাসিন্দারাও তাই দরকারমতো বেছে নেন পছন্দের নেতাদের কার্যালয়।
বিধায়ক অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য আর দলের ব্লক সভাপতি অশ্বিনী দাসের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছিল প্রায় দু’বছর ধরে। অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অশ্বিনীবাবু-সহ তাঁর অনুগামী নেতাদের দেখা মিলত সাংসদ কার্যালয়ে। তাঁদের বিরোধী শিবিরের নেতা অমিয়কান্তিবাবুর দেখা মিলত তাঁর নিজস্ব দলীয় কার্যালয়ে। এমনকি গত ৪ মার্চ চণ্ডীপুর বিধানসভার জন্য ফের দলীয় প্রার্থী হিসেবে অমিয়কান্তি ভট্টাচার্যের নাম ঘোষণার পর তাঁর অনুগামীরা প্রচারে নেমে পড়েন।
এ দিকে বিরোধী বাম ও কংগ্রেস জোটের সিপিএম প্রার্থী মঙ্গলেন্দু প্রধানের হয়ে প্রচার শুরু হয়ে যায় একসাথে। বিপদ বুঝে হস্তক্ষেপ করেন দলের নেতৃত্ব। তাই সম্পর্ক জোড়া লাগাতে উদ্যোগী হন তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী।
গত ৫ এপ্রিল রাতে শুভেন্দুবাবুর উপস্থিতিতে বিধায়ক ও ব্লক সভাপতির অনুগামী কয়েকজন করে নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। আর সেখানেই যুযুধান দুই নেতার কোলাকুলি ও মিষ্টিমুখ হয়। তারপর গতি আসে চণ্ডীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে শাসক দলের প্রার্থীর প্রচারে। গত ১১ এপ্রিল শুভেন্দুবাবুর নেতৃত্বে দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে মহামিছিল হয় চণ্ডীপুর বাজারে।
এতদিন গোষ্ঠীকোন্দলের পর শাসকদলের দুই নেতার এই ঐক্যের ছবি তুলে ধরার প্রয়াস কেন? দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চণ্ডীপুর বিধানসসভা গঠনের আগে পূর্বতন নরঘাট বিধানসভার মধ্যে ছিল চণ্ডীপুর ব্লক এলাকা। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল গঠনের পর ২০০১ সালে প্রথমবার নরঘাট বিধানসভায় প্রার্থী হয়েছিলেন অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য। কিন্তু সেবার বামফ্রন্টের শরিক ওয়েস্ট বেঙ্গল সোশালিস্ট পার্টির প্রার্থী ব্রহ্মময় নন্দের কাছে হেরে যান অমিয়কান্তি। এরপর ২০০৬ সালে ফের তৃণমূল প্রার্থী হন অমিয়কান্তিবাবু। সেবারও ফের হার ব্রহ্মময় নন্দের কাছে। এরপর বিধানসভা এলাকা পুনর্বিন্যাস হলে চণ্ডীপুর ব্লক ও ভগবানপুর-১ ব্লকের ছ’ টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে নতুন চণ্ডীপুর বিধানসভা গঠন হয়।
২০১১ সালের বিধানসসভা নির্বাচনে ওই বিধানসভা কেন্দ্রে ফের প্রার্থী হন অমিয়কান্তিবাবু। ওই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী বিদ্যুৎ গুছাইতকে হারিয়ে প্রথমবার বিধায়ক হন অমিয়কান্তিবাবু। কিন্তু একসময় সুসম্পর্ক থাকা দলের ব্লক সভাপতি অশ্বিনী দাসের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে বিধায়ক অমিয়কান্তিবাবুর। এর জেরে চণ্ডীপুর ব্লকে শাসকদলের ঠান্ডা লড়াই চলতে থাকে।
শাসক দলের এই বিভাজনের পাশাপাশি এবার বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস জোট গঠন করায় বিরোধী শিবিরের ভোট বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে শাসক শিবির। তাই প্রার্থী হিসেবে ফের অমিয়কান্তিবাবুর নাম ঘোষণার পরে অশ্বিনীবাবু প্রথমে আলাদাভাবে নিজের অনুগামীদের নিয়ে বৈঠক করলেও শেষপর্যন্ত রণে ভঙ্গ দেন। সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর ডাকা বৈঠকে অমিয়কান্তিবাবু আর অশ্বিনীবাবু দু’জনেই নিজের অনুগামীদের নিয়ে হাজির হয়ে একসঙ্গে জোট বেঁধে লড়াইয়ের শপথ নেন। অশ্বিনীবাবু বলেন, ‘‘প্রায় দু’বছর ধরে আমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। তবে সেই ভুল বোঝাবুঝি মিটে গিয়ে আমরা একসঙ্গে বামফ্রন্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করব।’’ আর অমিয়কান্তিবাবু বলেন, ‘‘সামান্য যে সমস্যা ছিল তা মিটে গিয়েছে। এখন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করছি।’’
প্রায় দু’বছর পর বিধানসভা ভোটের আগে যুযুধান দুই নেতার ঐক্যের ছবি দেখে উৎসাহিত কর্মী-সমর্থকরা। তবে তা ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত হয় কি না তা দেখার।