Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Death

কর্মীরা নারাজ, দেহ মুড়ে দিলেন সুপার   

মৃতদের মধ্যে এক প্রৌঢ়ার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল মৃত্যুর পরে। অন্য একজনের মৃত্যুর আগে নমুনা সংগ্রহ করা যায়নি।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২০ ০২:১৬
Share: Save:

শ্বাসকষ্ট সহ অন্য উপসর্গ নিয়ে তমলুক জেলা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে কয়েকদিনের ব্যবধানে দু’জন রোগীর মৃত্যু ঘটেছে আগে। মৃতদের মধ্যে এক প্রৌঢ়ার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল মৃত্যুর পরে। অন্য একজনের মৃত্যুর আগে নমুনা সংগ্রহ করা যায়নি। গত ১৫ ও ২০ এপ্রিল এভাবে পরপর মৃত্যুতে হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীরা আশঙ্কিত। যার জেরে বুধবার এক রোগীর মৃত্যুতে দেহ পরিবারের হাতে তুলে দিতে এগিয়ে এলেন না হাসপাতালের কোনও কর্মী। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের সুপারকে সেই কাজ করতে হল।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুধবার রাতে আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যু হয়। ভগবানপুর এলাকার বাসিন্দা বছর বিয়াল্লিশের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ওই ব্যক্তিকে ওই দিনই বিকেলে শ্বাসকষ্ট নিয়ে অসুস্থতায় ভর্তি করেছিল পরিবার। আইসোলেশন ওয়ার্ডে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। ওই দিন রাত ৯টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। এ ক্ষেত্রে রোগীকে ভর্তির পরে পরদিন সকালে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করার আগেই রাতে মৃত্যু হওয়ায় নমুনা সংগ্রহ করা যায়নি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। যদিও আইসোলেশন ওয়ার্ডে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মে মেনে মৃতদেহ ‘ডাবল কভারে’ মুড়ে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আর তা করতে গিয়েই সমস্যায় পড়েন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

রাত ৯ টা নাগাদ ওই রোগীর মৃত্যুর পরে তাঁর মৃতদেহ মুড়ে দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘ডোম’দের ডাকলেও তাঁরা কেউ আসেননি বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, হাসপাতাল সুপার গোপাল দাস মৃতদেহ মোড়ার জন্য নিজেই আইসোলেশন ওয়ার্ডে যান। পিপিই (পারসোনাল প্রোটেক্ট ইকুইপমেন্ট) পরে সুপার নিজের হাতে ‘ডাবল কভারে’ মৃতদেহ মুড়ে দেন। এই ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মী মহলে আলোড়ন পড়েছে। কর্মীদের একাংশের মতে, আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তির পর ওই ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা হয়নি। তাই তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা সংশয় রয়েছে। তবে নিয়ম মেনেই তাঁর মৃতদেহ মুড়ে দেওয়ার জন্য মর্গের কর্মীদের সাহায্য করা উচিত ছিল। কিন্তু ওই কর্মীরা সাহায্য না করায় সুপার যে ভাবে নিজে সেই কাজ করলেন তার তুলনা হয় না। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা (ডোম) কেন সাহায্য করলেন না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

সুপার গোপাল দাস বলেন, ‘‘আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া ওই রোগী থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার জন্য এখানে ভর্তি করা হয়েছিল। রাত ৯ টা নাগাদ মারা যান। এরপর নিয়ম মেনে দেহ মুড়ে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের (ডোম) ডাকা হয়েছিল। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে তাঁরা কেউ আসেননি। অথচ আইসোলেশন ওয়ার্ডে এ ধরনের মৃতদেহ ফেলে রাখা যাবে না। তাই নিজে গিয়ে নিয়ম মেনে দেহ মুড়ে পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছি।’’

পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘আইসোলেশন ওয়ার্ডে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তাঁর মৃতদেহ পাঠানোর জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হাসপাতাল সুপার নিজে মৃতদেহ মুড়ে দিয়েছেন কিনা তিনিই বলতে পারবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tamluk District Hospital Death Isolation Ward
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE