Advertisement
E-Paper

মদ ভুলে একশো দিনের কাজে মহিলারা

জঙ্গলে জ্বালানি কাঠ-পাতা সংগ্রহ করে আগে সংসার চালাতেন লালগড়ের পডিহা গ্রামের ৩০ বছরের সাকরো হেমব্রম। কাঠ কাটা নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। পেট চালাতে তখনই চোলাই বিক্রিতে হাতেখড়ি।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৩

জঙ্গলে জ্বালানি কাঠ-পাতা সংগ্রহ করে আগে সংসার চালাতেন লালগড়ের পডিহা গ্রামের ৩০ বছরের সাকরো হেমব্রম। কাঠ কাটা নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। পেট চালাতে তখনই চোলাই বিক্রিতে হাতেখড়ি। সাকরোর কথায়, ‘‘জমি নেই। একশো দিনের কাজও মেলে না। বাধ্য হয়েই মদ বেচতাম।’’

বছর কয়েক আগে চোলাই বিক্রি শুরু করেন পডিহার বছর পঞ্চাশের মহিলা পর্গি মুর্মুও। তাঁর জমি রয়েছে। যদিও হাতির তাণ্ডবে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সর্বস্বান্ত হন তিনি। তার পর থেকে চোলাই বেচেই দিন গুজরান। পর্গি বলছেন, ‘‘সাধ করে কেউ মদ বেচে! চাষের মরসুমে ভিন্‌ জেলায় ‘নামাল’ (খেতমজুরের কাজ) খাটতে যাই। বাকি সময় মদ বেচতাম।’’

শুধু সাকরো বা পর্গি নন, পডিহা গ্রামের ৩০-৪০ জন মহিলা এই সে দিনও মদ বেচে সংসার চালাতেন। সোমবার একদম অন্য ভূমিকায় দেখা গেল তাঁদের। কোদাল-বেলচা নিয়ে নেমে পড়লেন পুকুর খননের কাজে। একশো দিনের প্রকল্পের ভরসাতেই এই ভোলবদল। দিনভর পডিহা গ্রামে হাজির থেকে সাকরোদের উৎসাহ দিলেন লালগড়ের বিডিও জ্যোতিন্দ্রনাথ বৈরাগী। সকলকে বিডিও বোঝালেন, “পরিশ্রমের কাজে কত আনন্দ ও তৃপ্তি দেখুন। কথা দিন, আর কখনও মদ বেচবেন না।” মহিলারাও জানালেন, “না আর বেচব না। নিয়মিত কাজ, মজুরি যেন পাই।”

লালগড় ব্লক সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে জঙ্গলে ঘেরা ছোট্ট গ্রাম পডিহায় ৫০টি আদিবাসী পরিবারের বাস। জনাকয়েকের জমি রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রাম হেমব্রম, লবু টুডুরা বলেন, “সামান্য যেটুকু জমি রয়েছে, হাতির উৎপাতে সেখানে চাষ করা যায় না। দিনমজুরের কাজও সবসময় মেলে না। তাই সংসার চালাতে মহিলারা লালগড়ে গিয়ে মদ বিক্রি করতেন।” ১ ফেব্রুয়ারিও লালগড় ব্লক অফিসের কাছে মদ বিক্রি করছিলেন কয়েকজন। সেই সময় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে চোলাই বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান চালান বিডিও। বাজেয়াপ্ত হয় মদের হাঁড়ি ও মদ্যপানের সামগ্রী। অভিযানের পরদিনই মদ বিক্রির কাজে যুক্ত মহিলারা ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ ছিল, নিয়মিত একশো দিনের কাজ বা দিনমজুরির কাজ মেলে না বলে তাঁরা মদ বিক্রি করতে বাধ্য হন। এরপরেই বিক্ষোভকারীদের একশো দিনের কাজ দেওয়ার আশ্বাস দেন বিডিও, চোলাই বিক্রি বন্ধের শর্তে।

এর পর লালগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে পডিহা গ্রামে একশো দিনের প্রকল্পে একটি পুকুর খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গ্রামের ৪০ জন মহিলা-সহ ৭০ জন সোমবার পুকুর খননের কাজে যোগ দেন। এ দিনও বিডিও ওই মহিলাদের প্রতিশ্রুতি দেন, কাজ শেষ হলে দ্রুত মজুরি মিটিয়ে দেওয়া হবে। মহিলাদের দিয়ে সরকারি প্রকল্পে ফলের বাগান, শুয়োর খামার করানোরও প্রস্তাব দেন বিডিও। লালগড়ের বিডিও জ্যোতিন্দ্রনাথবাবু্ বলেন, “আমরা চাই, পডিহা গ্রামের মহিলারা সুস্থ জীবনে ফিরে আদর্শ হয়ে উঠুন। খননের কাজ শেষ হলে পুকুরটিকে এমন ভাবে সাজানো হবে, যাতে এটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।

Liquor 100 Days Work Lalgarh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy