Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ওড়িশায় শ্রমিকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, ইদে শোকাচ্ছন্ন গ্রাম

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে খবর, রেজাবুলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় রবিবার সকালে। রেজাবুল-সহ ধলহরা গ্রামের ৫-৬ জন স্থানীয় এক ঠিকাদারের অধীনে ওড়িশার ভদ্রকে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিলেন।

মৃত শেখ রেজাবুল।

মৃত শেখ রেজাবুল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:১১
Share: Save:

কাজে ছুটি নিয়ে ইদে বাড়ি ফেরার কথা ছিল রেজাবুলের। তার আগে ওড়িশায় কর্মস্থলে ঘর থেকে উদ্ধার হল তাঁর ঝুলন্ত দেহ। তমলুক থানার ধলহরা গ্রামের বাসিন্দা শেখ রেজাবুলের (৪৮) এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ইদের সকালে শোকের ছায়া নেমেছে গ্রামে।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে খবর, রেজাবুলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় রবিবার সকালে। রেজাবুল-সহ ধলহরা গ্রামের ৫-৬ জন স্থানীয় এক ঠিকাদারের অধীনে ওড়িশার ভদ্রকে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিলেন। কয়েক বছর ধরে সেখানে কাজ করছিলেন তাঁরা। মাঝেমাঝে ছুটি নিয়ে বাড়ি আসতেন রেজাবুল ও তাঁর সঙ্গীরা। সোমবার ইদ উৎসবে যোগ দিতে রবিবার বাড়ি ফেরার কথা ছিল রেজাবুল ও তাঁর সঙ্গীদের। কিন্তু সেদিনই সকালে সহকর্মীরা দেখতে পান ঘরের মধ্যে গলায় দড়ির ফাঁস লাগানো অবস্থায় রেজাবুলের দেহ ঝুলছে। তাঁরা ঠিকাদার শেখ মোস্তাফাকে ঘটনাটি জানান। খবর পেয়ে ভদ্রকের ধামনগর থানার পুলিশ গিয়ে রেজাবুলের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।

রবিবার রাতে রেজাবুলের মৃতদেহ নিয়ে গ্রামে ফেরেন তাঁর সঙ্গীরা। উৎসবের দিনে ঘরের লোকের মৃত্যু সংবাদের প্রাথমিক শোক কাটিয়ে রেজাবুলের পরিবার ও প্রতিবেশীরা তাঁকে খুনের অভিযোগ তুলেছেন। রেজাবুলের জেঠতুতো ভাই শেখ মনিরুদ্দিন আহমেদের অভিযোগ, ‘‘রেজাবুল ভদ্রকে রাজমিস্ত্রির কাজ করত। ওর ছেলে অন্ধ্রপ্রদেশে কাজ করে। বাড়িতে স্ত্রী ও মেয়ে রয়েছে। ইদে দু’জনেরই বাড়ি ফেরার কথা ছিল। শুক্রবার সকালে রেজাবুল ভাবীকে ফোন করে জানিয়েছিল রবিবার ফিরবে।’’ মনিরুদ্দিন জানান, ঠিকাদার মোস্তাফা দাদাকে ওইদিন বাড়ি ফিরতে দিতে রাজি ছিল না। এ নিয়ে দু’জনের বচসাও হয়। রেজাবুল মোস্তাফাকে জানিয়েছিল অনেকদিন পর তাঁর ছেলে বাড়ি ফিরেছে। তাই টাকা পয়সা না মেটালেও সে বাড়ি ফিরবে। মনিরুদ্দিনের অভিযোগ, ‘‘বচসার পরে রেজাবুলকে টাকা পয়সা দেয়নি মোস্তাফা। শুক্রবার রাতে মোস্তাফা রেজাবুলের সঙ্গীদের টাকা দিয়ে তাঁকে মদ খাইয়ে নেশা করায়। এরপর রেজাবুলকে মেরে দেহ ঝুলিয়ে দেয়।’’

মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মোস্তাফা রেজাবুলের মৃত্যুর কথা প্রথমে বাড়িতে জানায়নি। এক আত্মীয়কে ফোন করে জানিয়েছিল রেজাবুল গলায় দড়ি দিয়ে মারা গিয়েছে। রেজাবুলের স্ত্রী হাসিনারা বিবি বলেন, ‘‘শুক্রবার সকালে স্বামী ফোন করে জানিয়েছিল রবিবার সকালে বাড়ি আসবে। এখানে এসে ইদের কেনাকাটা করবে। ওই দিন রাতে ফোন করলে স্বামীর ফোন সুইচ অফ ছিল। পরে রবিবার ফোনে মোস্তাফা এক আত্মীয়াকে ফোনে স্বামীর মৃত্যুর খবর দেয়। তারপর আমাকে জানায়।’’

গ্রামে ফিরে আসা মোস্তাফা অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি ওখানে অন্য জায়গায় থাকতাম। রেজাবুল ইদে বাড়ি ফিরতে চাইলে বলেছিলাম সবাই একসঙ্গে রবিবার রাতে ফিরব। শুক্রবার এনিয়ে আমাদের কথা হয়। তারপর রবিবার সকালে খবর পাই রেজাবুল গলায় দড়ি দিয়ে মারা গিয়েছে। মৃত্যুর কারণ না জানা সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’’

স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শেখ আহসানুল্লাহ বলেন, ‘‘রেজাবুল ওড়িশায় কাজ করতে গিয়েছিসেন। ওঁর ঝুলন্ত দেহ পাওয়া গিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কী কারণে মৃত্যু হয়েছে তা জানা যায়নি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’’

তমলুক থানার পুলিশ জানিয়েছে, ওড়িশায় কাজে গিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর এসেছে। তবে এনিয়ে মৃতের পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ করা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Labour Death Tamluk Odisha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE