E-Paper

বকেয়া মজুরি মিলবে, আশায় ৬ লক্ষ শ্রমিক

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে রাজ্যের টাকা আটকে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে এ জেলায় এসেও একাধিকবার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩১
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন, কেন্দ্র না দেওয়ায় রাজ্যে একশো দিনের কাজের মজুরি হিসেবে বকেয়া টাকা তাঁর সরকারই মিটিয়ে দেবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার প্রচারে মাঠে-ময়দানে দেখা গিয়েছে প্রশাসনকে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলকেও।

তৃণমূল সহায়তা শিবির করেছে। পঞ্চায়েতস্তরে ১৮ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই শিবির করেছে। কীসের সহায়তা? যে সমস্ত শ্রমিকের মজুরি বকেয়া রয়েছে, তাঁরা ফর্মফিলাপ করেছেন। ফর্মফিলাপে সহায়তা। দলীয় সূত্রে খবর, পূরণ করা ফর্ম জেলা হয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পৌঁছেছে। পাশাপাশি, প্রশাসনও শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই করেছে। কার, কত মজুরি বকেয়া রয়েছে, তা দেখার পাশাপাশি খতিয়ে দেখা হয়েছে শ্রমিকের নাম, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, কোন ব্যাঙ্কের কোন শাখায় তাঁর অ্যাকাউন্ট রয়েছে প্রভৃতি। সব ঠিক থাকলে ১ মার্চের মধ্যে বকেয়া পাবেন শ্রমিকেরা। পশ্চিম মেদিনীপুরে বকেয়া পাওয়ার আশায় রয়েছেন ৬ লক্ষেরও বেশি শ্রমিক।

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে রাজ্যের টাকা আটকে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে এ জেলায় এসেও একাধিকবার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একশো দিনের কাজ পরিদর্শনে এ জেলায়ও এসেছিল কেন্দ্রীয় দল। পরিদর্শনে এসে কেন্দ্রীয় দলের পর্যবেক্ষণ ছিল, কাজে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কিছু প্রকল্পে যথেচ্ছ টাকা খরচ করা হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশ ছিল, অনিয়মে যাঁরা যাঁরা জড়িত, তাঁদের সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। জানানো হয়েছিল, শৃঙ্খলাভঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সরকারি অর্থ নয়ছয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে, এই সময়ের মধ্যে বকেয়া মজুরি চেয়ে প্রায়শই পঞ্চায়েতে হত্যে দিয়েছেন শ্রমিকেরা।

সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে এই প্রকল্পে বকেয়া রয়েছে প্রায় ৫১৫ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা। এরমধ্যে মজুরি বাবদ বকেয়া রয়েছে প্রায় ২৮১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা। ২০২১- ’২২ এর প্রায় ১৭২ কোটি। ২০২২- ’২৩ এর প্রায় ১০৯ কোটি। অন্যদিকে, সামগ্রী বাবদ বকেয়া প্রায় ২৩৮ কোটি। ২০২১- ’২২ এর ১৭০ কোটি ১৪ লক্ষ ৪৮ হাজার। ২০২২- ’২৩ এর ৬৮ কোটি ৩৮ লক্ষ ৫২ হাজার। এই প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৮ লক্ষ ৮৩ হাজার পরিবারের জবকার্ড রয়েছে। সংখ্যাটা কম নয়। সব ঠিক থাকলে রাজ্য টাকা জেলাকে দেবে। জেলা দেবে ব্লককে। রাজ্যের নির্দেশেই জেলায় শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই হয়েছে। তথ্য যাচাইয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতস্তরে পিছু পরিদর্শক দল গড়া হয়েছিল। পরিদর্শক দলকে জানানো হয়েছিল, বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাইয়ের সময়ে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতে হবে। চূড়ান্ত তালিকায় যাতে কোনও ভুলত্রুটি না থাকে, সেটা খতিয়ে দেখে নেওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। জানা গিয়েছে, ব্লকস্তরে যে তালিকা তৈরি হয়েছিল, সেটা ঠিকঠাক কি না, তা খতিয়ে দেখেছে মহকুমা এবং জেলাও।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সব খতিয়ে দেখে দেখা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে মজুরি বকেয়া রয়েছে ৬ লক্ষ ২৫ হাজার ৬০৪ জন শ্রমিকের। আর মজুরি বাবদ বকেয়া রয়েছে সবমিলিয়ে ২৮১ কোটি ১৩ লক্ষ ৯ হাজার ৮২৭ টাকা। ১ মার্চের মধ্যে বকেয়া পেয়ে যাবেন ওই শ্রমিকেরা। ১ মার্চ থেকে জেলায় তিনটিস্তরে কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে। বিডিও অফিসে, এসডিও অফিসে, জেলাশাসকের কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম চালু থাকার কথা।

বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভোটের আগে এ সব করে চমক দিতে চাইছে ওরা (তৃণমূল)। লাভ হবে না।’’ তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোত ঘোষ বলেন, ‘‘বাংলার গরিব মানুষকে ভোগাতে চেয়েছে কেন্দ্র। ভাতে মারতে চেয়েছে। আমাদের সরকার শ্রমিকদের মজুরির বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হচ্ছে। আমাদের সরকার শ্রমের সম্মান দিতে জানে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy