মেদিনীপুর সদর ব্লকের শিরোমনি পঞ্চায়েত এলাকার বেহাল সেতু। —নিজস্ব চিত্র।
জেলা জুড়েই বেশ কিছু সেতু-সাঁকোর অবস্থা জরাজীর্ণ। গড়বেতার ধাদিকা-কল্যাণচক রাস্তায় চাঁপাখালের উপর সেতুুটি যেমন ভগ্নপ্রায়। যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। অনেক আগেই সেতু পুনর্নির্মাণের দাবি তুলেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু সুরাহা হয়নি।
শুধু গড়বেতার এই সেতু নয়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে গ্রামীণ রাস্তার উপর এমন ৩২টি সেতু, কাঠ বা বাঁশের সাঁকো দ্রুত পুনর্নির্মাণ করা জরুরি। না হলে যে কোনও সময় ভেঙে পড়বে, অচল হবে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না কেন? জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, অর্থাভাবেই থমকে আছে কাজ। অর্থ চেয়ে ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের কাছে দরবারও করা হয়েছে। গ্রামীণ রাস্তার উপরে থাকা ৩২টি সেতু ও সাঁকোর পুনর্নির্মাণ যে জরুরি, তা মানছেন জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষও। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। পুনর্নির্মাণ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্য রাজ্যের কাছে আবেদনও করা হয়েছে।”
জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, ২০১৪-’১৫ আর্থিক বছরে আরআইডিএফ প্রকল্প থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ২৪ কোটি টাকা পাবে বলে প্রাথমিক ভাবে ধার্য হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকা করার জন্য রাজ্যের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। জেলা পরিষদের এক আধিকারিক জানান, জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়ক বা জেলার অন্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উপর হলে অন্য ব্যাপার ছিল। কিন্তু এই ৩২টি সেতু ও সাঁকো গ্রামীণ রাস্তার উপর রয়েছে। ফলে, যে কোনও তহবিল থেকে এগুলো পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব। চলতি আর্থিক বছরে আরআইডিএফ থেকে এই জেলা ২৪ কোটি টাকা পাবে বলে প্রাথমিক ভাবে ধার্য হয়েছে। কিন্তু, পিছিয়ে পড়া জেলা হিসেবে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা ধার্য করলে ভাল হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সর্বত্র গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত নয়। মাঝেমধ্যেই ছোট সেতুগুলো সংস্কারের অভাবে ধুঁকতে থাকে। সাময়িক ভাবে মেরামত করা হয়। জেলার ওই ৩২টি সেতু-পুল পুনর্নির্মাণ হলে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সচল এবং উন্নততর হবে বলেই মনে করেন অনেকে। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষও মানছেন, “গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সচল এবং উন্নততর করার জন্য ওই সেতু-পুলগুলো পুনর্নির্মাণ করা জরুরি। আমরা সব রকম চেষ্টা করছি।”
জেলার কোন কোন সেতু, সাঁকোগুলির ভগ্নপ্রায় দশা?
তালিকায় রয়েছে নয়াগ্রামের কেশোরেখা খালের উপরে থাকা সেতু, সাঁকরাইলের কেশিয়াপাতা-সিধাকুড়া রাস্তার উপরে থাকা সেতু, দাঁতন-১ ব্লকে কাজিপাড়া-প্রহরাজপুর রাস্তার সেতু, কেশপুরের আনন্দপুর-সাহসপুর রাস্তায় তমাল নদীর উপরে থাকা সেতু, পিংলার কালীতলা-কালুখাঁড়া রাস্তার উপরে থাকা সেতু, কেশিয়াড়ির হাতিগেড়িয়া- উড়িয়াবাড় রাস্তার উপরে থাকা সেতু, সবংয়ের শ্যামসুন্দরপুরে গনপথ খালের উপরে থাকা সেতু প্রভৃতি। চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের কৃষ্ণপুরে শীলাবতী নদী পেরোতে গেলে স্থানীয়দের এখন নৌকাই ভরসা। এখানে একটি সেতু নির্মাণ জরুরি বলে জেলা পরিষদ সূত্রে খবর। ইতিমধ্যে জেলা পরিষদের কাছে সেই আবেদনও জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পিরাকাটা-গোয়ালতোড় রাস্তায় সিজুয়া খাল এবং দেবগ্রাম খালের উপর কজওয়ে রয়েছে। এখানে সেতু নির্মাণ জরুরি।
বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্রামীণ রাস্তায় খালের উপর আবার কাঠের সাঁকো রয়েছে। সেগুলিও জীর্ণ। যেমন, গড়বেতা-২ ব্লকের শীলাবতী নদীর উপর জোগারডাঙা, গড়বেতা-৩ ব্লকের শীলাবতী নদীর উপর গড়বেড়িয়া, চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের হলঘাট, সবংয়ের সিমুলতলা প্রভৃতি। বেশ কয়েকটি এলাকায় আবার বাঁশের সেতু রয়েছে। যেমন, ডেবরার মাড়তলাঘাট, মলিঘাটিঘাট, ঘাটালের কুঠিঘাট-দেওয়ানচক প্রভৃতি। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের আশ্বাস, “যে ৩২টি সেতু-পুলের পুনর্নির্মাণ জরুরি, তার একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। অর্থ পেলেই কাজ শুরু হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy