Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ঐতিহ্যে উজ্জ্বল সাত বনেদি বাড়ির পুজো

মহিষাসুরমর্দিনীর এ অন্য রূপ। এখানে কোথাও রণং দেহি দেবী চার হাতে অসুর বধ করছেন। কোথাও অভয়া শক্তিরূপী দেবী দ্বিভুজা। পিংলার ভাসানপুকুর সংলগ্ন সাতটি বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজোয় মেতে ওঠে গোটা এলাকা। প্রতিমা বিসর্জনও হয় ভাসানপুকুরেই। জমিদারি আর নেই। কমেছে পুজোর জাঁকও। তবে খামতি নেই আন্তরিকতায়। পূর্বপুরুষের নিয়মরক্ষায় তৎপর উত্তরসূরিরা।

তৈরি হচ্ছে ভাসানপুকুরের সেন বাড়ি।

তৈরি হচ্ছে ভাসানপুকুরের সেন বাড়ি।

দেবমাল্য বাগচি
পিংলা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৫৩
Share: Save:

মহিষাসুরমর্দিনীর এ অন্য রূপ। এখানে কোথাও রণং দেহি দেবী চার হাতে অসুর বধ করছেন। কোথাও অভয়া শক্তিরূপী দেবী দ্বিভুজা।

পিংলার ভাসানপুকুর সংলগ্ন সাতটি বনেদি বাড়ির দুর্গা পুজোয় মেতে ওঠে গোটা এলাকা। প্রতিমা বিসর্জনও হয় ভাসানপুকুরেই।

জমিদারি আর নেই। কমেছে পুজোর জাঁকও। তবে খামতি নেই আন্তরিকতায়। পূর্বপুরুষের নিয়মরক্ষায় তৎপর উত্তরসূরিরা। ভাসানপুকুর থেকে দেড়শো মিটার এগোলেই পূর্ব দিকে বড়পুকুর পাড়ে তিনটি বাড়িতে পুজো হয়। বড়পুকুরের পূর্ব কোণে সেন বাড়ির পুজো। চারশো বছর আগে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে আসা রামরাম সেন এই পুকুর থেকেই দক্ষিণাকালী উদ্ধার করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময়ই এই দুর্গাপুজো শুরু হয় বলে জানালেন পরিবারের কর্তা পেশায় চিকিৎসক অমিতাভ সেন। দেবী এখানে চতুর্ভুজা। পুরোহিত দুলাল মিশ্র বলেন, “শাক্তরীতিতে তন্ত্রমতে সন্ধি পুজোয় হয় বলি। পরিবারের কেউই পিংলায় থাকেন না। তবে পুজোয় সকলে আসেন।”

বড়পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে সিংহ বাড়ি। কথিত আছে, রাজা লাউ সেনের রাজত্বকালে তাঁর সেনাপতি হয়ে শিবরাম সিংহ এলাকায় এসে এখানে চণ্ডীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে নিজ হাতে দুর্গাপ্রতিমা গড়ে শুরু করেন পুজো। সেই মন্দির এখন জীর্ণ। দুর্গাপুজোর পনেরো দিন আগেই একটি মাটির ঘরে নবমীকল্পে দেবী চণ্ডীর আরাধনা শুরু হয়। পাশের ঘরে চলে চতুর্ভুজা দুর্গাপ্রতিমা গড়ার কাজ। প্রতিমা শিল্পী গোষ্ঠবিহারী জানা বলেন, “প্রতিমার মুখটি ছাঁচে নয়, হাতে গড়া হয়। মাটির প্রলেপ পড়া থেকেই মুখ বাদে দেবীর সারা দেহ ঢাকা থাকে, এটিই বৈশিষ্ট্য। আর লক্ষ্মী-সরস্বতী থাকে গণেশ-কার্তিকের নীচে।” পরিবারের সদস্য প্রতাপ সিংহ জানালেন, আগে বলি হলেও এখন বৈষ্ণবমতে পুজো হয়।

বসু বাড়ির দুগার্প্রতিমা । ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

বসু বাড়িতে দশভূজা দুর্গাপ্রতিমা একচালার। জনশ্রুতি, পুজোর প্রতিষ্ঠাতা কমলাকান্ত বসু উত্তরপাড়া থেকে এসে পিঙ্গলাক্ষ্মী মন্দির গড়েন। পিঙ্গলাক্ষ্মীরূপী দুর্গা, চণ্ডী, কালী, শীতলা ও মনসা এই মন্দিরে পূজিত হন। স্থানীয়দের ধারণা, মন্দিরের নামেই পিংলার নামকরণ। এই বাড়ির পুজোয় সপ্তমী থেকে নবমী বলি হয়। বাড়ির মেয়ে মল্লিকা বসুর কথায়, “পিংলার পত্তনের সঙ্গেই আমাদের এই পুজো বলে মনে করা হয়।”

ভাসানপুকুরের পশ্চিমে পাল জমিদারদের বাড়ি। এখানেও অস্ত্রহীনা মা দুর্গার অভয়া মূর্তির পুজো হয়। সিংহাসনে আসীন দেবী দ্বিভুজা। প্রায় পাঁচশো বছর আগে হুগলি থেকে এসে কৃপারাম পাল এখানে জমিদার হন। তিনিই পুজোর প্রতিষ্ঠাতা। তৈরি করেন চণ্ডী-রঘুনাথের মন্দিরও। পরিবারের দৌহিত্র প্রবীণ দিলীপকুমার বসু, সদস্য সীতেশ পালেরা জানালেন, এখন পুজোয় চার জন অংশীদার। আগে হওয়া মহিষ বলি হত। এখন পাঁঠা বলি হয়। আর ষষ্ঠী থেকে চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের ধনপতি উপাখ্যানের গান হয়। কিছুটা দূরেই আর একটি পালবাড়িতে একচালা প্রতিমার দু’টি হাত। জমিদার জিতনারায়ণ পাল চালু করেছিলেন দুর্গাপুজো। পরিবারের সদস্য আশিস পাল বলেন, “এখন তো আর জমিদারি নেই। তবে প্রথা মেনেই এখনও পুজো করা হয়।”

বসু বাড়ির পুজোও জনপ্রিয়। বর্ধমান থেকে আসা রামরাম বসু শিব, চণ্ডী-সহ বেশ কয়েকটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাড়িতে চালু করেছিলেন দুর্গাপুজোও। পরিবারের প্রবীণ সদস্য সুখেন্দুবিকাশ বসু বলেন, “এখানে শাক্তমতে পুজো হলেও দু’বছর ধরে পাঠা বলি বন্ধ করেছি। তবে চালকুমড়ো বলি হয়।” তিনশো মিটার দূরে কালীতলার লালপাকাতে চৌধুরী বাড়ির পুজো আজও অমলিন। দৌহিত্র অটলবিহারী সিংহের পরিবারই এই পুজো ধরে রেখেছে। এখানেও দেবী দ্বিভুজা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

durga pujo sen bari debmalya bagchi pingla
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE