Advertisement
E-Paper

কম্পিউটারে জমি মানচিত্র, উদ্যোগ তিন জেলায়

আর ফিতে ধরে জমিতে নামতে হবে না। মানচিত্রের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে না এ অফিস, সে অফিসে। এ বার কম্পিউটারের মাউসে ক্লিক করে শুধু এলাকার অস্পষ্ট ছবি নয়, মিলবে জমির খুঁটিনাটি চিত্র। কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে এবার জিপিএসের মাধ্যমে জমির মানচিত্র তৈরি শুরু হল দেশ জুড়ে। প্রকল্পের নাম হল ‘ন্যাশনাল ল্যান্ড রেকর্ডস মর্ডানাইজেশন প্রোগ্রাম’। ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসাবে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় এই কাজ শুরু হয়েছে।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:২৪

আর ফিতে ধরে জমিতে নামতে হবে না। মানচিত্রের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে না এ অফিস, সে অফিসে। এ বার কম্পিউটারের মাউসে ক্লিক করে শুধু এলাকার অস্পষ্ট ছবি নয়, মিলবে জমির খুঁটিনাটি চিত্র।

কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে এবার জিপিএসের মাধ্যমে জমির মানচিত্র তৈরি শুরু হল দেশ জুড়ে। প্রকল্পের নাম হল ‘ন্যাশনাল ল্যান্ড রেকর্ডস মর্ডানাইজেশন প্রোগ্রাম’। ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসাবে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় এই কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প সফল হলে ভবিষ্যতে জমির মালিকানা সংক্রান্ত নানা জট সহজেই ছাড়ানো যাবে বলে আশা প্রশাসনিক কর্তাদের।

পশ্চিম মেদিনীপুরের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অরিন্দম দত্ত জানান, প্রাথমিক ভাবে গড়বেতা ২, ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুর ১ ও ঘাটালের দাসপুর ১ ব্লক এলাকায় এই কাজ চলছে। ধীরে ধীরে জিপিএসের মাধ্যমে পুরো জেলারই মানচিত্র তৈরি হবে। কম্পিউটারের মাউসে ক্লিক করলেই যে কেউ জমির স্পষ্ট চেহারা দেখতে পাবেন। পশ্চিমবঙ্গে জমি নিয়ে বিবাদ দীর্ঘ দিনের। জোত যত ছোট হয়েছে, সমস্যা ততই বেড়েছে। বিশেষত, কাগজে তৈরি বস্তাবন্দি নথি নষ্ট হয়ে বিতর্ক আরও বাড়িয়েছে। যা নিয়ে গ্রামগঞ্জ থেকে শহর, সর্বত্রই পড়শির সঙ্গে বিবাদ নিত্য সঙ্গী। কেন্দ্রীয় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সেই অশান্তিতে লাগাম পড়বে বলে মত প্রশাসনের আধিকারিকদের। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে মূলত খাজনা আদায়ের জন্য মানচিত্র তৈরি হত। শেরশাহের আমলে (১৫৪০-১৫৪৫) ‘কবুলিয়ত’ ও ‘পাট্টা’ চালু হয়েছিল সে জন্যই। পরে লর্ড কর্নওয়ালিস ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ চালু করেছিলেন (১৭৯৩)। ১৮৮৫ সালে বেঙ্গল টেনেন্সি আইন, যা সিএস নামে পরিচিত, ১৯৫৩ সালে ওয়েস্ট বেঙ্গল এস্টেট অ্যাকুইজিশন আইন এবং তার দু’বছর পরেই ১৯৫৫ সালে ওয়েস্ট বেঙ্গল ল্যান্ড রিফর্মস অ্যাক্ট চালু হয়। এ সবই ছিল খাজনা আদায়ের কারণেই।

এখন খাজনা আর বড় ব্যাপার নয়। বরং জরুরি হয়েছে কোন জমি কার, কোথায় কতটা, কী ভাবে রয়েছে তার নতুন আধুনিক মানচিত্র তৈরি। কারণ, জোত ছোট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। আগে এক একজনের নামে হাজার হাজার একর জমি দেওয়া হত খাজনা আদায়ের জন্য। পরে জমি খাস করে গরিব মানুষকে বিলি করা হয়। কেউ ১০ ডেসিমেল, কেউ ৫ কাঠা জমি পান। ইতিমধ্যে বহু পরিবার একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে জমি বণ্টন করেছেন। ‘আল’ দিয়ে চিহ্নিতও করেছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রতিটি মৌজা ধরে জিপিএসের মাধ্যমে পয়েন্ট পদ্ধতিতে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

প্রশাসন সূত্রে খবর, এক একটি মৌজায় কয়েক’শো বা হাজার একর জমি রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে একাধিক দাগ নম্বরও। ফলে একটি কাগজে (ভূমি দফতরের পরিভাষায় শিট) সেই মৌজার মানচিত্র আঁটানো সম্ভব হয়নি। যে মৌজায় দাগের সংখ্যা যত বেশি সেই মৌজায় শিট তত বেড়েছে। সাধারণ ভাবে বস্তাবন্দি করে রাখায় সেই সব মানচিত্রও কিছু ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে গিয়েছে, কখনও হারিয়েও গিয়েছে। এ বার তাই শিট পিছু ৬টি করে পয়েন্ট করার পরিকল্পনা হয়েছে। কী ভাবে তা হবে?

প্রশাসনের ব্যাখ্যা, শিটে চিহ্নিত ৬টি পয়েন্টকে এলাকায় খুঁটি পুঁতে চিহ্নিত করা হবে। চারটিতে কংক্রিটের খুঁটি বসানো হবে, আর দু’টি কাঠের। কংক্রিটের খুঁটিগুলির নীচে বসানো হবে জিপিএস যন্ত্র। পরে বাকি দু’টি কাঠের খুঁটি সরিয়ে সেখানেও কংক্রিটের খুঁটি বসিয়ে ওই যন্ত্র বসানো হবে। সেখান থেকে জিপিএসের মাধ্যমে পরিমাপ করা হবে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ। তারপর উপগ্রহের মাধ্যমে ছবি তোলা হবে। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সেই ছবির সঙ্গে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ মিলিয়ে তা জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ওয়েবসাইটে ‘আপলোড’ করা থাকবে। সেখান থেকে সহজেই যে কেউ নিজের জমির স্পষ্ট নিশানা পাবেন।

এ ক্ষেত্রে অবশ্য সমস্যা একটাই। তা হল, কয়েক বছর অন্তর উপগ্রহ থেকে ছবি তোলার প্রয়োজন হবে। কারণ, বর্তমানে যে জমিতে চাষ হচ্ছে সেখানে পরে শিল্প গড়ে উঠতে পারে। ফলে কয়েক বছর পর ওই মানচিত্রও পুরনো হয়ে যাবে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর নতুন করে ছবি তুলে ওয়েবসাইটে আপলোড করলে সে সমস্যা থাকবে না। ইতিমধ্যে এ কাজের প্রশিক্ষণও শেষ হয়েছে হায়দরাবাদে। প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, এই কাজ সম্পূর্ণ হলে তা উল্লেখযোগ্য সাফল্য হবে। কেননা, এই মানচিত্রকে কাজে লাগিয়ে জেলার প্রতিটি কোনে কী রয়েছে, তার বর্তমান অবস্থা কী তা জেনে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে। তাতে সময় বা অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি কাজও যথাযথ হবে, মত তাঁদের।

land map computer graphic suman ghosh medinipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy