হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন রবীন্দ্রনাথ। স্বস্তির শ্বাস নিচ্ছেন বিদ্যাসাগর, ক্ষুদিরাম, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী!
যা করার কথা ছিল পুরসভার, নাগরিক সমাজের, কিন্তু কেউই করতে পারেননি, তা-ই লহমায় করে দেখাল নির্বাচন কমিশন। দৃশ্যদূষণ বাঁচিয়ে মণীষীদের মূর্তিগুলি রাজনৈতিক পতাকা থেকে বাঁচিয়ে দিলেন। এতে রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা ততটা খুশি না হলেও, স্বস্তিতে আমজনতা।
তখন আর এখন। মেদিনীপুর শহরের পঞ্চুরচকে তোলা নিজস্ব চিত্র।
মেদিনীপুর শহরে মণীষীদের একাধিক মূর্তি রয়েছে। শহর ঘুরলেই প্রায় প্রতিটি মোড়ে, চকে, রাস্তার ধারে কোনও না কোনও মণীষীর মূর্তি নজর পড়বেই। কে নেই সেখানে? রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্যাসাগর, সুভাষচন্দ্র বসু, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী, বিনয়-বাদল-দীনেশ, ক্ষুদিরাম, বিবেকানন্দ থেকে মায় ইন্দিরা-রাজীব গাঁধীও। মাঝে মূর্তি আর চারদিকে রেলিং দিয়ে ঘেরা। যে রেলিং এত দিন ব্যবহৃত হত রাজনৈতিক প্রচারে। কখনও সেখানে হাজির কাস্তে-হাতুড়ি-তারা, কাস্তে-হাতুড়ি-ধানের শিস কিংবা ফরওয়ার্ড ব্লকের বাঘ। কখনও ফুটত জোড়া ফুল, পদ্ম বা হাত। আবার কখনও সব দলের সহবস্থানও চলত। আর এই পোস্টার, হোর্ডিং, ব্যানারে মুখ ঢাকত মণীষীদের।
এক সময় বহু উদ্যোগ ও উত্সাহ নিয়ে কোনও সংগঠন বা রাজনৈতিক দল মূর্তি স্থাপন করতেন। কিছু দিন দেখভালও হত। কালের নিয়মে ধীরে ধীরে ভাটা পড়ত তাতে। বছরের কোনও একটি সময়ে জন্মদিন বা মৃত্যু দিনে এক দু’বার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেওয়া হত মালা। তারপর ফের সেই তিমিরেই। এ নিয়ে নানা সময়ে সমালোচনার ঝড় বয়েছে। দু’একবার পুরসভার পক্ষ থেকেও সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু কখনও উদাসীনতায়, আবার কখনও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এ বার নির্বাচন কমিশনের তাড়ায় তা নিমেষে সাফ হয়ে গেল। আর এতে শুধু মণীষীরা বেঁচেছেন তা নয়, দৃশ্যদূষণ থেকে রেহাই পেয়েছেন শহরবাসীও। প্রথমের দিকে কোথাও কোথাও অবশ্য নিয়মকে তোয়াক্কা না করে সব রাজনৈতিক দলই প্রচারের জন্য চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু কড়া হাতে বিধিভঙ্গ রুখতে কমিশন পথে নামায় আর কেউ সাহস দেখাননি। ফলে শহর এ বার পরিস্কার।
শহরের বাসিন্দা প্রকাশ দত্তের কথায়, “সব থেকে ভাল লাগছে মণীষীদের মূর্তিগুলি দেখে। কোথাও কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা নেই। আগে প্রচারের ধাক্কায় মনীষীদের দিকে তাকানোই যেত না। অন্তত কিছু দিন তো মণীষীরা রেহাই পেলেন। ভীষণ ভাল লাগছে।” তারই সঙ্গে এক প্রশ্ন। এ আর কত দিন। ভোট শেষ হলেই আবার তো মণীষীরা ঢেকে যাবেন পতাকায়। পুরসভা যদি সব দিনের জন্য নিয়ম চালু করত তা হলে ভীষণ ভাল হত। কিন্তু পুরসভা কী তা পারবে? এ প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যাচ্ছে।
যদিও এই ঘটনায় খুশি নয় কোনও রাজনৈতিক দলই। কিন্তু বাধ্য হয়েই বিষয়টি গিলতে হয়েছে। তৃণমূলের মেদিনীপুর শহর সভাপতি আশিস চক্রবর্তীর কথায়, “কমিশন এত কড়াকড়ি করছে যে কোনও হোর্ডিং, ফেস্টুন, ফ্লেক্স টাঙাতেই পারছি না। টাকা খরচ করে তৈরি করা ওই সব ফ্লেক্স ফেলে রাখতে হয়েছে।” মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী প্রবোধ পণ্ডা এই সমস্যা এড়াতে অন্য ধরনের প্রচার শুরু করেছেন। গাড়িতে জায়েন্ট স্ক্রিনে দেখাচ্ছেন সংসদে রাখা বক্তৃতা। প্রবোধবাবুর কথায়, “নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনেই তো প্রচার করতে হবে।” কংগ্রেসেরও এক কথা। দলের জেলা সহ-সভাপতি শম্ভু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কমিশনের নির্দেশ মেনেই প্রচার করছি। সব কর্মীদেরও তা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy