Advertisement
১৯ মে ২০২৪

কমছে রফতানি, হলদিয়া বন্দরে ফের কর্মবিরতি

বন্দরে পণ্য আমদানি-রফতানি কমেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে পণ্য খালাসকারী সংস্থাগুলির শ্রমিকদের উপরে। কাজ কম থাকায় তাঁদের উপার্জনও কমেছে। এ বার ঈদের আগে জুটলো না বোনাসও। শ্রমিকদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। কাজের নিরাপত্তা, আর্থিক প্রাপ্তি-সহ নানা দাবিতে সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কর্মবিরতি করে বিক্ষোভ দেখালেন হলদিয়া বন্দরের পণ্য খালাসকারী সংস্থা ‘এ কে এন্টারপ্রাইজ’-এর অধীনে কাজ করা কয়েক’শো শ্রমিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৪ ০০:১২
Share: Save:

বন্দরে পণ্য আমদানি-রফতানি কমেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে পণ্য খালাসকারী সংস্থাগুলির শ্রমিকদের উপরে। কাজ কম থাকায় তাঁদের উপার্জনও কমেছে। এ বার ঈদের আগে জুটলো না বোনাসও। শ্রমিকদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। কাজের নিরাপত্তা, আর্থিক প্রাপ্তি-সহ নানা দাবিতে সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কর্মবিরতি করে বিক্ষোভ দেখালেন হলদিয়া বন্দরের পণ্য খালাসকারী সংস্থা ‘এ কে এন্টারপ্রাইজ’-এর অধীনে কাজ করা কয়েক’শো শ্রমিক। এর জেরে ওড়িশা থেকে রেলের ওয়াগনে আসা লৌহ আকরিক মুম্বইয়ের ডলবিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। জিন্দাল সংস্থার ওই পণ্য হলদিয়া বন্দর থেকে জাহাজে জিন্দালদের অন্য একটি প্ল্যান্টে যাওয়ার কথা ছিল। যদিও পরে দু’টো নাগাদ বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ওই সংস্থার হস্তক্ষেপে ফের কাজ শুরু করেন শ্রমিকেরা।

বন্দর ও ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, লরি ও রেলের ওয়াগনে ওড়িশা ও ছত্তিশগড় থেকে আসা লৌহ আকরিক খালাস করার কাজে যুক্ত রয়েছেন এ কে এন্টারপ্রাইজের প্রায় পনেরোশো শ্রমিক। আইএনটিটিইউসির নেতা শেখ মহিউদ্দিন, সাধারণ শ্রমিক শেখ আশরফ আলিদের বক্তব্য, মাসের মধ্যে তাঁরা মাত্র সাত-আট দিন কাজ পান। তা-ও টাকা মেলে অনিয়মিত। মেলে না অন্য কোনও সুবিধাও। শ্রমিক সংগঠনগুলিও এ বিষয়ে উদাসীন বলে অভিযোগ। এরই প্রতিবাদে সোমবার কাজ বন্ধ করে বন্দরের ৪বি বার্থের সামনে বিক্ষোভে সামিল হন শ্রমিকেরা। যদিও কোনোও পক্ষই তাঁদের এ দিন আশ্বাস পর্যন্ত দেননি। হলদিয়া বন্দরের প্রশাসনিক ম্যানেজার অমল দত্ত বলেন, “শ্রমিকদের দাবিগুলি দেখার দায়িত্ব ওই পণ্য খালাসকারী সংস্থার। পণ্য খালাসের কাজ ব্যাহত হচ্ছিল বলে আমরা হস্তক্ষেপ করেছি। কারণ জিন্দালদের ওই পণ্য পরিবহণ করার বিষয়ে আমরা চুক্তিবদ্ধ।” ওই সংস্থার হলদিয়া শাখার ম্যানেজার গোপাল সিংহ বলেন, “ওই শ্রমিকরা ‘কাজ করলে টাকা’ এই ভিত্তিতে কাজ করেন। ওঁরা কিছু দাবি-দাওয়া জানাতে কাজ বন্ধ রেখেছিলেন।”

বন্দর ও ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের আগে পর্যন্ত হলদিয়া বন্দর থেকে প্রতি বছর প্রায় ৪ মিলিয়ন টন লৌহ আকরিক চীনে রফতানি হত। কিন্তু রেলের পণ্য মাশুল নীতি, লৌহ আকরিক রফতানিতে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও চীনে এই পণ্যের দাম না মেলা-সহ নানা কারণে এই পণ্য পরিবহণের পরিমাণ নেমে এসেছে মাত্র এক মিলিয়ন টনে। এর ফলে পণ্য পরিবহণের কাজ না থাকায় শ্রমিকরাও কাজ পাচ্ছেন না। এ দিকে, বন্দরের বিভিন্ন বার্থে কয়েক’টি মাত্র পণ্য খালাসকারী সংস্থা একচেটিয়াভাবে কাজ করছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রকের নির্দেশে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট হলদিয়া বন্দরের দশটি বার্থে দরপত্র ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। আগামী ২১ অগস্ট চূড়ান্ত হবে, কারা ওই দরপত্র পেলেন। সিটু অনুমোদিত বন্দরের শ্রমিক সংগঠনের হলদিয়া শাখার ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি বিমান মিস্ত্রি বলেন, “দর-দেওয়ার প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারার আশঙ্কায় শ্রমিক খেপিয়ে বিষয়টি বানচাল করার চেষ্টা চলছে বিভিন্ন মহল। এ দিনের বিক্ষোভ তার সূচনা মাত্র!” বন্দরের আইএনটিটিইউসি নেতা শ্যামল আদক বলেন, “বন্দরের পণ্য আমদানি-রফতানি কমার জন্যেই শ্রমিকদের এই সঙ্কট। বন্দরের সুদিন ফিরলে তাঁদেরও কপাল ফিরবে। ওদের সঙ্গত দাবিগুলি পূরণের জন্যে আমাদের আন্দোলন চলবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

declining export haldia port strike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE