Advertisement
E-Paper

খড়্গপুরে খাবারের বৈচিত্র্য সত্যিই হারিয়েছে

গত ২৬-২৮ অগস্ট আনন্দবাজার পত্রিকার ‘মেদিনীপুর ও খড়্গপুর’ সংস্করণে ‘আমার শহর’ প্রতিবেদনে আমরা খড়্গপুর শহরের কিছু না জানা কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল শহরের নানা অবহেলিত দিকও। একইসঙ্গে আমরা জানতে চেয়েছিলাম আপনাদের প্রতিক্রিয়াও। আজ রেলশহর সম্পর্কে আপনাদের মতামত সম্বলিত চিঠির কয়েকটি প্রকাশ করা হল:গত ২৬-২৮ অগস্ট আনন্দবাজার পত্রিকার ‘মেদিনীপুর ও খড়্গপুর’ সংস্করণে ‘আমার শহর’ প্রতিবেদনে আমরা খড়্গপুর শহরের কিছু না জানা কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল শহরের নানা অবহেলিত দিকও। একইসঙ্গে আমরা জানতে চেয়েছিলাম আপনাদের প্রতিক্রিয়াও। আজ রেলশহর সম্পর্কে আপনাদের মতামত সম্বলিত চিঠির কয়েকটি প্রকাশ করা হল:

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২০
রমরমা কমেছে, কোনও রকমে চলছে শহরের একমাত্র চিনা রেস্তোরাঁ ওয়ালডর্ফ।  ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

রমরমা কমেছে, কোনও রকমে চলছে শহরের একমাত্র চিনা রেস্তোরাঁ ওয়ালডর্ফ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

‘মেদিনীপুর ও খড়্গপুর’ সংস্করণে ধারাবাহিক ভাবে তিন দিন ‘আমার শহর’ বিভাগে প্রকাশিত খড়্গপুরের প্রতিবেদনগুলি আকর্ষণীয়। খড়্গপুরের ‘খানাপিনা’ বা রাস্তাঘাটের খাবারদাবার নিয়ে লেখাটিতে নতুনত্ব আছে। যে রেলশহরকে ‘মিনি ভারতবর্ষ’ বলা হয়, সেই খড়্গপুরের খাবারদাবারে সত্যিই সে ভাবে বৈচিত্র্য নেই। আধিক্য রয়েছে দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের। এক সময় চীনাদের পরিচালনায় চলা দু’টি প্রখ্যাত রেস্তোঁরা ‘ফার ইস্ট’ আর ‘ওয়ালডর্ফ’-এর খ্যাতি এখনও লোকের মুখে মুখে ফেরে। এখানকার খাবারে ছিল অন্য স্বাদ। ‘ফার ইস্ট’ কবেই উঠে গিয়েছে! ‘ওয়ালডর্ফ’ অবশ্য কোনও রকমে চলছে। রেলশহরে খাবারের বৈচিত্র্য সত্যিই হারিয়েছে।

বাঙালিরা এই রেলশহরে সংখ্যাতত্ত্বে যেমন কোণঠাসা, খাবারেও তাই। নববর্ষে বাইরে খেতে মন চাইলেও বাঙালি খাবারের রেস্তোরাঁ মেলা ভার। আমবাঙালির প্রিয় কড়া লিকার আর কম দুধের চা পাশের মেদিনীপুর মিললেও এই শহরে এখনও ব্রাত্য। খড়্গপুরের খেলার মাঠ নিয়ে লেখাটিও প্রাসঙ্গিক। এ শহরে কোনও দিনও খেলার মাঠের অভাব ছিল না। গিরিময়দান, টিবি হাসপাতালের মাঠ, বিএনআর মাঠ, তরুণ সঙ্ঘের মাঠ, রাবণ পোড়ার ময়দান, প্রিন্টিং প্রেসের মাঠ, ট্রাফিক ময়দান, ভুট্টাবাগান আরও কত মাঠ। কিছু খেলার মাঠ এখন ‘ধাপার মাঠ’। সৌজন্যে পুরসভা।

আর এর ফলে অ্যান্টনি, প্রদীপ চৌধুরী, সীতেশ দাস, প্রণব বসু হওয়ার স্বপ্ন আজ চাপা পড়েছে শহরের আবর্জনার নীচে। ‘আমার শহর’ চেনা শহরের অনেক অজানা কথা জানিয়েছে। আরও নতুন কিছুর আশা রইল।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়, রেলকর্মী, খড়্গপুর বইমেলা কমিটির অন্যতম সম্পাদক

সেজে উঠুক বন্দিনিবাস

আমি খড়্গপুরের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। গত ২৬-২৮ অগস্ট ‘আমার শহর’ প্রতিবেদনে যেভাবে রেলশহরের অতীত পরিচয়ের সঙ্গে আধুনিকতার মিশেল ও সেই সঙ্গে শহরের অবহেলিত দিকগুলি তুলে ধরা হয়েছে, তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। রেলশহরের ইতিহাস ঐতিহ্যময়। পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের পর দেশের প্রথম আইআইটি এই শহরেই গড়ে ওঠে। এখান থেকে পাশ করে প্রতি বছর বহু পড়ুয়া দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে।

বেহাল মহিলা বন্দিনিবাস।

১৯৫১ সালে খড়্গপুর রেলস্টেশন থেকে আট কিলোমিটার দূরে হিজলি সংশোধনাগারের ভবনটি ব্যবহার করে আইআইটি গড়ে ওঠে। ১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ওই সংশোধনাগারে বিচারাধীন বন্দিদের উপর ব্রিটিশ পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে মৃত্যু হয় সন্তোষকুমার মিত্র ও তারকেশ্বর সেনগুপ্তের। শহিদদের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানে দাঁড়ালে আজও শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। আজও প্রতিবছর আইআইটি-র নেহরু মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ দিনটিকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করে। তবে আগে যেমন দেশের জীবিত স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরও ওই অনুষ্ঠানে এনে সম্মানিত করা হত, তা এখন বন্ধ। অনেক বিপ্লবীই হয়তো এখন জীবিত নেই। তবে এখনও বেঁচে আছেনও অনেকে। তাঁরা আসতে না পারলে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে সম্মান জানানো প্রয়োজন। অবহেলার শিকার সংশোধনাগারের মহিলা বন্দিনিবাসটিও। সেখানে গড়ে উঠেছে আইআইটি’র কেন্দ্রীয় গুদাম। আমার আবেদন, পুরুষ বন্দিনিবাসের মতো মহিলা নিবাসটিও সাজিয়ে সকলের সামনে উন্মুক্ত করা হোক।

অম্বরকান্তি কুমার, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষাকর্মী, খড়্গপুর আইআইটি

দ্রুত সংস্কার হোক ডাকঘর

‘আমার শহর’ বিভাগটি আকর্ষণীয়। সাগ্রহে অপেক্ষা করি এই বিভাগের জন্য। প্রবীন নাগরিক হিসেবে পুর-পরিষেবার কয়েক’টি সমস্যা তুলে ধরতে চাই। প্রথমেই বলি পানীয় জলের সমস্যার কথা। ফি বছর গরমের সময়ে জলসঙ্কট শুরু হয় রেলশহরে। খড়্গপুরে নতুন জলের পাইপ লাইন বসানোর কাজ বহু দিন হল শেষ হয়েছে। তারপরেও বহু জায়গায় জলের সংযোগ দেওয়া হয়নি। পুরনো ফাটা পাইপের মাধ্যমে কোনও রকমে জল সরবরাহ করা হচ্ছে।

জীর্ণ ভবনে চলছে ডাকঘর।

পুর-কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত জলকর দিই। অবস্থার কবে পাল্টাবে জানি না। পুরসভা আবর্জনা সাফাইয়ের কাজেও যত্নশীল নয়। পুরসভার ভ্যাট উপছে পড়ছে আবর্জনার স্তূপে। দুর্গন্ধে পথ চলাই দায়! পুর-কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক আকচাআকচিতে না গিয়ে পরিষেবায় নজর দিলে ভাল হয়।

খড়্গপুরে বড় ডাকঘর আছে। রেল কর্তৃপক্ষের থেকে ভাড়ায় চলা এই জীর্ণ বাড়িটি দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের রেল এবং ডাক পরিষেবা, এই দু’টি দফতরের মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই। বিদ্যুতের তার, বোর্ড ইত্যাদি অফিসঘরে ঝুলে থাকে। একটু বৃষ্টিতে জল চুঁইয়ে পড়ে। এর মধ্যেই গলদঘর্ম হয়ে বছরভর প্রবীণ নাগরিক-সহ বহু মানুষ ডাক পরিষেবা নেন। বিষয়টি নিয়ে সুচিন্তিত জনমত গড়ে তোলার আহ্বান করছি।

বীরেন্দ্রনাথ মাইতি, অবসরপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার, বুলবুলচটি, খড়্গপুর

এগোতে হবে নবীন প্রজন্মকে

আনন্দবাজার পত্রিকার ‘মেদিনীপুর ও খড়্গপুর’ সংস্করণে প্রকাশিত ‘আমার শহর’ প্রতিবেদনে খড়্গপুর ও সংলগ্ন শহরতলি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। এজন্য ধন্যবাদ জানাই। এই সূত্রেই রেল শহর খড়্গপুরের সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ে কিছু তথ্য জানালাম, যা হয়তো অনেকেরই জানা নেই।

রেল কারখানা ও ‘ওপেন লাইন’-এর প্রশাসনিক দফতরসমূহে নানা সময়ে বহু উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব এসেছেন। সেই সময় শহরের বিদ্যালয় ও কলেজে সৃজনশীল ব্যক্তির অভাব ছিল না, শুধু অভাব ছিল তাঁদের লেখা প্রকাশের উপযুক্ত মাধ্যম তথা পত্র-পত্রিকার। যতদূর জানি পাঁচের দশকের প্রথমদিকে পবিত্র সরকার ও কবি ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় প্রথম ‘পারাবত’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। পরে দু’জনেই কলকাতায় পড়তে যাওয়ায় পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।

ওই সময় সত্যেন দত্ত পরিচালিত ‘দক্ষিণী সমাবেশ’, খরিদা মিলন মন্দির থেকে পত্রিকা প্রকাশিত হত। ওই লেখক কর্তৃক ‘যুগযাত্রী’ নামেও হাতে লেখা পত্রিকা প্রকাশিত হত। কালক্রমে তা বন্ধ হয়ে যায়। মিলন মন্দির পাঠাগারে হাতে লেখা পত্রিকাটি এখনও সংরক্ষিত আছে। সজিত ঘোষের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘বর্তিকা সাহিত্য চক্রের’ মাধ্যমে শহরে সুসংহত সাহিত্য চচার্র প্রয়াস শুরু হয়। প্রতি মাসে ইন্দায় সাহিত্য চক্রের আসর বসত, শহরের বহু সাহিত্যপ্রেমী ওই আসরে নিয়মিত যোগদান করে সাহিত্য পাঠ করতেন ও তা নিয়ে আলোচনা হত। ওই আসর থেকেই সজিতবাবু ও ধরিত্রী ভট্টাচার্যের যুগ্ম সম্পাদনায় ‘বর্তিকা’ নামে ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে। পত্রিকাটি বছর চারেক চলার পরে বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠকালে শ্রী অশোক মুখোপাধ্যায় ‘অশোকভাই’ ছদ্মনামে বেশ কয়েকটি কিশোরপাঠ্য বই ও স্কুলপাঠ্য দ্রুত পঠনের বই লিখে খ্যাতি অর্জন করেছেন। পরে অধ্যাপক সমীরেশ দাশগুপ্তের সম্পাদনায় ‘তরুণদের মুখপত্র’ নামে একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তরুণদের মুখপত্র বন্ধ হওয়ার পর ‘ধানসিড়ি’ নামে একটি কবিতা পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে খড়্গপুর থেকে আরও নানা সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হত। তারপরে এল ট্যাবলয়েড আকারে চার পৃষ্ঠার সংবাদপত্র। আর পরেও এক্ষেত্রে নবতম সংযোজন ঝকঝকে অফসেটে ছাপা রঙিন সাপ্তাহিক পত্রিকা। শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে লেখক-লেখিকার সংখ্যা বাড়বে। পত্র-পত্রিকাগুলিরও নতুন লেখকের প্রয়োজন হবে। একথা নিশ্চিতভাবে দাবি করা যায়, ‘লেবার টাউন’ হলেও খড়্গপুর সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অন্য বহু ‘সিভিল টাউন’ অপেক্ষা এগিয়ে। খড়্গপুর বইমেলাও আজ জেলার শ্রেষ্ঠ বইমেলার রূপ নিয়েছে। তবে সৃজনশীল সাহিত্য চর্চা প্রসারের ভার এখন বর্তেছে নবীন প্রজন্মের উপর।

নন্দদুলাল রায়চৌধুরী, সাহিত্যিক খড়িদা, খড়্গপুর

amar shohor kharagpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy