Advertisement
১৯ মে ২০২৪

জমিনীতি-শিল্প প্রশ্নে রাজ্যকে তোপ রাহুলের

আগেই সিঙ্গুর ছেড়ে গুজরাতের সানন্দে পাড়ি দিয়েছে টাটা। শালবনিতে জিন্দলদের প্রস্তাবিত প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। বন্ধ পড়ে রাজ্যের বহু কলকারখানা। রাজ্যের শিল্প পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে শিল্পপতিদের একটি বড় অংশও। এই পরিস্থিতিতে শালবনির জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে এসে ফের শিল্প-প্রশ্নে রাজ্যকে বিঁধলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। ডাক দিলেন ‘রাক্ষসী পরিচালিত রাজ্য সরকার’কে বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলার!

বক্তব্য রাখছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

বক্তব্য রাখছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৯
Share: Save:

আগেই সিঙ্গুর ছেড়ে গুজরাতের সানন্দে পাড়ি দিয়েছে টাটা। শালবনিতে জিন্দলদের প্রস্তাবিত প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। বন্ধ পড়ে রাজ্যের বহু কলকারখানা। রাজ্যের শিল্প পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে শিল্পপতিদের একটি বড় অংশও। এই পরিস্থিতিতে শালবনির জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে এসে ফের শিল্প-প্রশ্নে রাজ্যকে বিঁধলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। ডাক দিলেন ‘রাক্ষসী পরিচালিত রাজ্য সরকার’কে বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলার!

বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্রপার্ক সংলগ্ন মাঠে ভিড়ে ঠাসা জনসভায় রাহুলবাবু বলেন, “জঙ্গলমহলে সরকারি অনুষ্ঠানে এসে উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান নিয়ে একটার পর একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। পুরোটাই মিথ্যাচার। আর শিল্প? কে আসবে এখানে শিল্প খুলতে? শিল্প খুলতে এলেই তো বলছে তোলা দাও।” রাজ্য সভাপতি-র কটাক্ষ, “রাজ্যে কেবল তোলাবাজির শিল্প চলছে। জিন্দলরা অনেক আশা নিয়ে কারখানা খুলেছিল। সরকার চাপ দিয়ে জিন্দলদের থেকে জমি ছিনিয়ে নিল। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, তিনি কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেবেন। কিন্তু শালবনির কৃষকরাই এখন বলছেন, তাঁরা জমি ফেরত চাননি। জমির পরিবর্তে উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও কর্মসংস্থান চান কৃষকরা।” তিনি আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কৃষকদের খুশি করার জন্য যে জমি ছিনতাই করে আনলেন, কৃষকরা কিন্তু সেই জমি ফেরত নিতে চান না। কারণ কৃষকরা জানেন, ওই জমি ফেরত নিয়ে তাঁদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই।”

রাজ্য সরকারের জমিনীতির সমালোচনা করে রাহুলবাবুর প্রশ্ন, “সিঙ্গুরে কারখানা হলে রাজ্যের আর্থিক চিত্রটাই পাল্টে যেত, তা বন্ধ করে লক্ষ লক্ষ বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট করেছে তৃণমূল ও তাদের এই সরকার। একই ভাবে এ বার জিন্দলরা চলে গেলে, এ রাজ্য সম্পর্কে সারা দেশে ও বিদেশে কী বার্তা যাচ্ছে?”

এ দিন অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের সমালোচনা করে বলেন, “ভারতীদেবীর দল বদলের অভ্যেস রয়েছে। বাম জমানায় সিপিএমের হয়ে কাজ করেছেন। এখন নির্লজ্জ ভাবে তৃণমূলের দাসত্ব করছেন। আমাদের কর্মীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করছেন। বিজেপি রাজ্যের ক্ষমতায় এলে ভারতীদেবী যদি গেরুয়া শাড়ি কাচাকাচি করে রাখেন, আমরা তাঁকে গেরুয়া শাড়ি পরতে দেব না। আমরা সৎ ও নিরপেক্ষ অফিসারদের চাই।”

কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধে রাহুলবাবু বলেন, “ঢাকঢোল পিটিয়ে এক লক্ষ যুবককে সিভিক পুলিশে নেওয়া হল। অথচ তাঁদের কার্যকালের মেয়াদ এক বছর পরই শেষ! আবার নতুন মুখদের সিভিক পুলিশ পদে নেওয়া হবে। চাকরি দেওয়ার নামে এ ভাবেই মিথ্যাচার করা হচ্ছে। উন্নয়নের নামেও ভাঁওতাবাজি চলছে। কী কী উন্নয়ন হয়েছে, তালিকা চাওয়া হলে তখন তো বাম্বু দেখাবেন!”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে ‘রাক্ষসী পরিচালিত সরকার’ বলেও কটাক্ষ করেন রাহুলবাবু। এ দিন ভিড়ে ঠাসা মাঠ দেখে রাহুলবাবু বলেন, “কোনও নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা এখানে আসিনি। এই সভার ভিড় প্রমাণ করছে, জঙ্গলমহলে বিজেপি-র জনসমর্থন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।” তাঁর অভিযোগ, “জঙ্গলমহলে এখন মাওবাদী নেই। কিন্তু মাওবাদীদের আইনটি আছে। যা এখন তৃণমূল নেতাদের রক্ষাকবচ। বাম জমানায় মাওবাদী আইনে তৃণমূলের লোকজনকে জেলে ভরা হত। এখন একই কায়দায় আমাদের নেতা-কর্মীদের জেলে ঢোকানো হচ্ছে। ২৯ জন দলীয় কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু এ ভাবে দমানো যাবে না। তৃণমূলেরও বিনাশ হবে।”

সারদা প্রসঙ্গে মদন-মুকুলকে তুলোধনা করে রাহুলবাবু বলেন, যতই কায়দা-কানুন করুন সিব্বলকে ধরুন, আপনাকে (মুকুল) জেলে যেতেই হবে। পাশাপাশি, সিপিএমকেও এক হাত নিয়ে রাহুলবাবু বলেন, “সিপিএম সারদার বেলায় আনন্দ করছে। কিন্তু সবে তো এমপিএস-এর খাতাটা খুলেছে। এমপিএস-এর খাতা থেকে সিপিএম আর তৃণমূল নেতাদের ঐক্যবদ্ধ লুঠের কথা বেরোবে।”

এ দিন ঝাড়গ্রাম পুরসভার একমাত্র বিরোধী কাউন্সিলার সিপিআইয়ের জল্পনা মিদ্যা-সহ ৫ সিপিআই নেতা-নেত্রী বিজেপিতে যোগ দেন। এ ছাড়া মেদিনীপুরের চার আইনজীবী ও ঝাড়গ্রামের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিজেপিতে যোগ দেন। সকলের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন রাহুলবাবু।

বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষের দাবি, “এ দিন জনসভায় কেবলমাত্র ঝাড়গ্রাম মহকুমার লোকজন এসেছিলেন। মাঠে যতজন এসেছিলেন, তার দশগুণ বেশি লোকজনকে মাঝ রাস্তায় আটকে দিয়েছিল তৃণমূলের গুণ্ডাবাহিনী ও পুলিশের একাংশ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rahul sinha land policy jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE