Advertisement
E-Paper

দক্ষিণ আফ্রিকায় কাজে গিয়ে প্রতারণা, নালিশ

ভাল আয়ের আশায় সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি দিয়েছিলেন ওঁরা। বিদেশে গিয়ে কাজ করলে সংসারের হাল ফিরবে, এই আকাঙ্খা তাঁদের ঠেলে দিয়েছিল ভারত মহাসাগরের ওপারে। কিন্তু বিদেশে গিয়ে কাজ করার ১৫ দিনের মধ্যেই প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ তুলে তাঁরা বাড়িতে ফোন করলেন। দ্রুত দেশে ফিরতে চেয়ে বাড়ির লেকেদের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় কর্মরত ওই চার জন শেখ মুর্শেদুল ইসলাম, শম্ভুনাথ মেট্যা, রণজিত মণ্ডল ও সন্দীপ গারু।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০১:১০

ভাল আয়ের আশায় সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি দিয়েছিলেন ওঁরা। বিদেশে গিয়ে কাজ করলে সংসারের হাল ফিরবে, এই আকাঙ্খা তাঁদের ঠেলে দিয়েছিল ভারত মহাসাগরের ওপারে। কিন্তু বিদেশে গিয়ে কাজ করার ১৫ দিনের মধ্যেই প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ তুলে তাঁরা বাড়িতে ফোন করলেন। দ্রুত দেশে ফিরতে চেয়ে বাড়ির লেকেদের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় কর্মরত ওই চার জন শেখ মুর্শেদুল ইসলাম, শম্ভুনাথ মেট্যা, রণজিত মণ্ডল ও সন্দীপ গারু।

পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটা থানার গরানখালি গ্রামের বাসিন্দা শেখ মুর্শেদুল ইসলাম। শম্ভুনাথ মেট্যা, রণজিত মণ্ডল ও সন্দীপ গারুর বাড়ি মহিষাদল থানার কালিকাকুণ্ডু গ্রামে। গত ২৮ এপ্রিল মুম্বইয়ের একটি নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার মালাউই প্রদেশের লিলাসলুই এলাকায় গিয়ে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন তাঁরা। চুক্তি অনুযায়ী গত ২৮ মে তাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছন। মুর্শেদুলের স্ত্রী সুলতানা পারভিন বেগমের অভিযোগ, “গত ২০ মে রাতে ও আমাকে ফোন করে কাঁদতে থাকে। ফোনে আমাকে জানায়, কোম্পানি যে কাজের জন্য এখানে নিয়ে এসেছিল, এখানে এসে অন্য কাজ দিয়েছে। আট ঘন্টার বদলে বারো ঘন্টা কাজ করানো হচ্ছে। দু’বেলা ঠিকমতো খেতেও দিচ্ছে না। আপত্তি করলে হেনস্থা করা হচ্ছে।” সুলতানা পারভিন বেগমের আরও অভিযোগ, “একদিন পর ও ফোনে আবার জানায়, বাড়ি ফেরার কথা বললেই ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে বলছে। এমনকী পাসপোর্ট ও ভিসাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”

মুর্শেদুলের বাবা-মা নেই। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তিনি শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। তাঁর শ্বশুর শেখ আব্দুল রশিদ বলেন, “গত ২৩ মে আমি গোটা ঘটনাটি লিখিতভাবে তৃণমূলের হলদিয়া ব্লক সভাপতির মাধ্যমে সাংসদকে জানাই। জামাইকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে আবেদন করি। কিন্তু কোনও সাড়া পাইনি। কোম্পানিও গুরুত্ব না দেওয়ায় প্রশাসনের দ্বারস্থ হই।” তৃণমূলের হলদিয়া ব্লক সভাপতি রামপদ জানা বলেন, “ওই আবেদনপত্র সাংসদের কার্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এবিষয়ে আর খোঁজ নেওয়া হয়নি।” বৃহস্পতিবার মুর্শেদুলের স্ত্রী সুলতানা বেগম সুতাহাটা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ওসি শীর্ষেন্দু রায় ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বাস দেন, চলতি মাসের মধ্যেই মুর্শেদুলকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হবে। এতে মুর্শেদুলের পরিবার আশ্বস্ত হলেও সঙ্কটে রয়েছেন অন্য তিনজনের পরিবার। অভিযোগ, ওই তিনজনের পরিবারের লোকেরা মহিষাদল থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও তাঁদের বারবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শম্ভুনাথের দাদা বিশ্বনাথবাবু ও রণজিতের দাদা সুরজিৎবাবুর অভিযোগ, “পঞ্চায়েত প্রধানকে নিয়ে গেলেও থানা অভিযোগ নেয়নি।”

লক্ষ্যা ২ পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের সুদর্শন মাইতি বলেন, “পুলিশ বলছে ওদের না কি কিছু করার নেই। তাই আমি বাধ্য হয়ে স্থানীয় বিধায়ক রাজ্যের মন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারের কাছে শুক্রবার এসে আবেদন জানিয়েছি।” সন্দীপের বাবা লক্ষ্মীকান্ত গারুর প্রশ্ন, “পাশের সুতাহাটা থানা যদি অভিযোগ নিতে পারে, তাহলে মহিষাদল থানা নেবে না কেন?” তিনি জানান, প্রতিটা দিন উৎকন্ঠায় কাটছে। ওরা ছেলেকে কোম্পানির বাইরে বেরতে ও ফোন করতেও দিচ্ছে না। মহিষাদল থানার ওসি বাসুকি বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এবিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হলদিয়া) অমিতাভ মাইতি বলেন, “সুতাহাটার ক্ষেত্রে সমাধানের আশ্বাস মিলেছে। মহিষাদলের বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তাঁদেরও বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করা হবে।” অভিযুক্ত সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। ওই সময় এই জেলা থেকে আরও প্রায় ৫০ জন একইভাবে কাজে গিয়েছেন। কয়েকজন চুক্তি মানতে চাইছেন না। ওই দেশে সাধারণ নির্বাচন চলায় কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা আছে ঠিকই, তবে ওঁদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, “এই শ্রমিকরা কয়েক মাস কাজ না করে চুক্তি ভেঙে চলে এলে কোম্পানির বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হবে। তাই তাঁদের টাকা জমা দিতে বলা হয়েছিল।”

এখন ওই চার যুবকের বাড়ি ফেরার দিকেই তাকিয়ে তাঁদের পরিবার।

fraudulent at work south africa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy