Advertisement
০৪ জুন ২০২৪

নতুন মামলায় অভিযুক্ত ছত্রধর

সাড়ে পাঁচ বছর পরে লালগড়ের দুই পুলিশ কর্মীকে অপহরণের পুরনো একটি মামলায় জনগণের কমিটির জেলবন্দি নেতা ছত্রধর মাহাতোকে নতুন করে অভিযুক্ত করল পুলিশ। এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিসন্ধির অভিযোগে সোচ্চার হয়েছেন ছত্রধরের আইনজীবী কৌশিক সিংহ। বুধবার খোদ ছত্রধর মাহাতোও ঝাড়গ্রাম আদালত চত্বরে সংবাদ মাধ্যমের কাছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন।

ঝাড়গ্রাম আদালতে ছত্রধর।

ঝাড়গ্রাম আদালতে ছত্রধর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৭
Share: Save:

সাড়ে পাঁচ বছর পরে লালগড়ের দুই পুলিশ কর্মীকে অপহরণের পুরনো একটি মামলায় জনগণের কমিটির জেলবন্দি নেতা ছত্রধর মাহাতোকে নতুন করে অভিযুক্ত করল পুলিশ। এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিসন্ধির অভিযোগে সোচ্চার হয়েছেন ছত্রধরের আইনজীবী কৌশিক সিংহ। বুধবার খোদ ছত্রধর মাহাতোও ঝাড়গ্রাম আদালত চত্বরে সংবাদ মাধ্যমের কাছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন।

২০০৯ সালের ৩০ জুলাই লালগড় থানার ধরমপুর পুলিশ ক্যাম্পের রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের দুই কনস্টেবল সাবির আলি মোল্লা ও কাঞ্চন গরাই নিখোঁজ হয়ে যান। সেদিন বিকেলে সাদা পোষাকে নিরস্ত্র অবস্থায় মোটর বাইকে চড়ে লালগড় থেকে ধরমপুর ক্যাম্পে ফিরছিলেন তাঁরা। বৃন্দাবনপুরের কাছে মাওবাদী-জনগণের কমিটির লোকেরা তাঁদের অপহরণ করে বলে অভিযোগ। ওই দিনই লালগড় থানার তৎকালীন আইসি-র অভিযোগের ভিত্তিতে অপহরণের ধারায় একটি সুয়োমোটো মামলা রুজু করে পুলিশ। মামলার এফআইআর-এ কারও নাম ছিল না। তদন্তের সূত্রে ১৬ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে না পারায় গ্রেফতার হওয়ার তিন মাস পরে অভিযুক্তরা সকলেই ছাড়া পেয়ে যান। বর্তমানে জামিনপ্রাপ্ত অভিযুক্তদের অনেকেই তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মী।

সেই ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পর, গত ৭ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রামের দ্বিতীয় এসিজেএম আদালতে পুলিশ ছত্রধরকে এই অপহরণের মামলায় যুক্ত করার জন্য আবেদন জানায়। ছত্রধরকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয় আদালত। পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং আদালতের নির্দেশে বুধবার ছত্রধরকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে ঝাড়গ্রামের দ্বিতীয় এসিজেএম আদালতে নিয়ে আসা হয়েছিল। সরকারি কৌঁসুলি পবিত্র রানা এ দিন দাবি করেন, সম্প্রতি তদন্তের সূত্রে পুলিশ লালগড় থানা এলাকার তিন জন বাসিন্দার সাক্ষ্য থেকে জানতে পারে, দুই পুলিশ কর্মীর অপহরণের ঘটনায় ছত্রধরও জড়িত ছিলেন। সেই কারণে ছত্রধরকে এই মামলায় যুক্ত করার আবেদন করা হয়েছে। ছত্রধরের আইনজীবী কৌশিক সিংহ সরকার পক্ষের আবেদনের তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলেন, “গ্রেফতার হওয়ার সাড়ে পাঁচ বছর পরে আমার মক্কেলকে ফের পুরনো মামলায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে। এর পিছনে পুলিশের অভিসন্ধি রয়েছে।”

কৌশিকবাবুর দাবি, “২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হওয়ার পর ছত্রধর সাড়ে পাঁচ বছর জেলবন্দি রয়েছেন। বর্তমানে তিনি আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে রয়েছেন। গ্রেফতারের পরে ছত্রধরের বিরুদ্ধে একটি ইউএপিএ মামলা-সহ মোট ৩৮ টি মামলায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়। পরবর্তী কালে ইউএপিএ মামলাটি বাদে বাকি মামলাগুলিতে জামিন পেয়ে যান ছত্রধর। জামিন হওয়া পাঁচটি মামলায় পরে খালাসও পেয়ে যান তিনি। ইউএপিএ মামলাটির বিচার চলছে মেদিনীপুরের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে। ওই মামলাটিতেই তিনি জেলবন্দি রয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণপর্ব শেষ হয়ে গিয়ে মামলাটি এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে।” কৌশিকবাবুর অভিযোগ, সামনেই ইউএপিএ মামলার রায় রয়েছে। নানা সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই তাঁকে ফের নতুন করে পুরনো মামলায় জড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ।

এ দিন অবশ্য বিচারক ছত্রধরকে অপহরণের মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দিয়ে তাঁকে ১৪ দিনের দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠান। এখানেই পুলিশের অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কৌশিকবাবু। তাঁর কথায়, “তদন্তের স্বার্থেই যদি আমার মক্কেলকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাহলে জেরা করার জন্য ছত্রধরকে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে চাইল না কেন?” এই প্রশ্নের জবাবে মুখে কুলুপ এঁটেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chhatradhar mahato jhargram new case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE