Advertisement
০৯ মে ২০২৪
থমকে পরিচালন সমিতি গঠন

নয়া নির্দেশে বিপাকে পূর্বের ২৭১টি স্কুল

সরকারি নির্দেশিকার জেরে ভেঙে দেওয়া হয়েছে স্কুলের নবগঠিত পরিচালন সমিতি। কার্যকরী করা যায়নি পরিচালন সমিতি গঠনের নতুন নির্দেশিকাও। ফলে স্কুলের বিভিন্ন প্রকল্পে টাকার সংস্থান থেকে শুরু করে স্কুলের বিভিন্ন শূন্য পদে নতুন শিক্ষক পাঠানোর আবেদন—থমকে রয়েছে সব কাজই।

সুব্রত গুহ
কাঁথি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:২৮
Share: Save:

সরকারি নির্দেশিকার জেরে ভেঙে দেওয়া হয়েছে স্কুলের নবগঠিত পরিচালন সমিতি। কার্যকরী করা যায়নি পরিচালন সমিতি গঠনের নতুন নির্দেশিকাও। ফলে স্কুলের বিভিন্ন প্রকল্পে টাকার সংস্থান থেকে শুরু করে স্কুলের বিভিন্ন শূন্য পদে নতুন শিক্ষক পাঠানোর আবেদন—থমকে রয়েছে সব কাজই। সমস্যায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ২৭১টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা। পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির দাবি, স্কুলের অচলাবস্থার কথা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে (ডিআই) জানানো হয়েছে। তা সত্বেও কোনও কাজ হয়নি। উল্টে এই পরিস্থিতির দায় চাপানো হয়েছে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের উপর।

কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ পেতে হলে রাজ্যের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলির গঠনতন্ত্র বদলে সরকার পোষিত (গভঃ স্পনসর্ড) স্কুল হতে হবে। সেক্ষেত্রে নতুন করে স্কুলের পরিচালন সমিতিও গঠন করতে হবে। সেই অনুযায়ী গত বছর রাজ্য শিক্ষা দফতর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মোট ৬৬৫টি স্কুলের মধ্যে ৫৭৮টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলকে সরকার পোষিত স্কুল হিসেবে অনুমোদন দেয়। সে জন্য ওই স্কুলগুলির পরিচালন সমিতি ভেঙে নতুন করে গঠন করার কথাও বলা হয়। নির্দেশিকায় বলা হয়, নতুন পরিচালন সমিতিতে এক জন সভাপতি থাকবেন। একইসঙ্গে, সমিতিতে দু’জন স্থানীয় শিক্ষক বা শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি, এক জন চিকিৎসক বা তাঁর প্রতিনিধি ও অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে রাখতে হবে। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলগুলিতে পরিচালন সমিতি গঠনের জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়। সেইমতো জেলার ২৭১টি স্কুলে পরিচালন সমিতি গঠনও হয়ে যায়।

জটিলতা তৈরি হয় সরকার ফের নতুন নির্দেশিকা পাঠানোয়। গত ১৮ ডিসেম্বর পুনরায় শিক্ষা দফতরের এক নির্দেশিকায় জানানো হয়, শহর এলাকার স্কুলগুলির পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে মহকুমাশাসক ও গ্রামীণ এলাকার স্কুলগুলির পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে বিডিওদের মনোনীত করে নতুন করে সমিতি গঠন করতে হবে। নতুন নির্দেশিকার ফলে স্কুলগুলির নবগঠিত পরিচালন সমিতি ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন সরকারি নির্দেশিকা কার্যকরী না হওয়ায় ওই স্কুলগুলিতে থমকে পরিচালন সমিতি গঠনের কাজ।

প্রসঙ্গত, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মোট ৬৬৫টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। জেলার ৫৭৮টি স্কুল সরকার পোষিত। এর মধ্যে ২৭১টি স্কুলে পরিচালন সমিতি গঠন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ১৮ ডিসেম্বর জারি হওয়া নতুন নির্দেশিকার দরুন ওই স্কুলগুলির পরিচালন সমিতি ভেঙে দেওয়া হয়। ফলে স্কুলের প্রশাসনিক কাজকর্ম চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন প্রধান শিক্ষকেরা। পাঁশকুড়ার ব্রাডলি বার্ট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বনমালি সামন্ত বলেন, “পরিচালন সমিতি না থাকায় স্কুলের প্রশাসনিক কাজে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি।”

একইভাবে, রামনগর-২ ব্লকের বটতলা আনন্দময়ী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হৃষীকেশ দাস জানিয়েছেন, শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে স্থানীয় বিডিওকে পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে মনোনীত করে পরিচালন সমিতি গঠনের নির্দেশিকা দেখেছি। স্কুলের পক্ষ থেকে বিডিও প্রীতম সাহাকে বিষয়টি জানানো হয়। বিডিও জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরকম কোনও নির্দেশ না পেলে তাঁর বা অন্য বিডিওদের পক্ষে স্কুলের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়। পরিচালন সমিতি না থাকায় স্কুলের বিভিন্ন তহবিলের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। রামনগর-২ ব্লকের বিডিও প্রীতম সাহাও বলেন, “শিক্ষা দফতর থেকে স্কুলগুলিকে নির্দেশিকার কথা জানানো হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। ফলে নির্দেশিকা ছাড়া কোনও স্কুলের প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়।” পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির কাঁথি ও এগরা মহকুমা কমিটির সভাপতি অরুপকুমার দাস জানান, স্কুলের অচলাবস্থা কাটাতে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

প্রশ্ন, নতুন সরকারি নির্দেশিকা কার্যকরী করা গেল না কেন?

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অসীমা অধিকারী বলেন, “এ বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। শিক্ষা দফতরের যুগ্ম সচিবের সঙ্গে এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে বিষয়টি জানাবেন বলেছেন।” পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, “ওই নিদের্শিকার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে শিক্ষা দফতরের কাছে চিঠি দিয়েছি। আশা করি, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।” যদিও প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলার এক একটি ব্লকের গ্রামীণ এলাকায় ১০-১৫টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি স্কুলের প্রশাসক হিসেবে স্থানীয় বিডিওকে মনোনীত করা হলে তাঁর অন্য প্রশাসনিক কাজেও সমস্যা হবে।

পরিচালন সমিতি না থাকায় কাঁথি-৩ ব্লকের মুড়িসাই হাইস্কুলে সদ্য বদলি হয়ে আসা তিন শিক্ষকের অনুমোদন ও বেতন আটকে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম খান। প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, “এই অচলাবস্থার জন্য জানুয়ারি মাসের মিড ডে মিলের টাকাও তোলা যায়নি। নিজের থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে স্কুলের মিড-ডে মিল চালু রেখেছি। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে তাও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব।” নতুন নির্দেশিকা নিয়ে জল্পনা রয়েছে প্রশাসনের অন্দরেও। বিডিওদের একাংশের মতে, কোনও স্কুলে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সেক্ষেত্রে পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে বিডিও দায়ী থাকবেন। ফলে এক জন প্রশাসনিক আধিকারিক হিসেবে তিনিই সমস্যায় পড়বেন। যদিও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসের এক আধিকারিকের কথায়, “পরিচালন সমিতি না থাকলেও পদাধিকার বলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক কাজ চালাতে পারেন। ফলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”

(তথ্য সহায়তা: আনন্দ মণ্ডল)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

subrata guha ananda mondal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE